নতুন প্রক্রিয়া শুরুর উদ্যোগ নিচ্ছে মালয়েশিয়া

জি টু জি প্লাস নামের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এত দিন মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো হতো। রয়টার্স ফাইল ছবি
জি টু জি প্লাস নামের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এত দিন মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো হতো। রয়টার্স ফাইল ছবি
>

• ২৫ অক্টোবর কুয়ালালামপুরে দুই দেশের বৈঠক
• সূচিতে কর্মী নিয়োগের নতুন প্রক্রিয়ার বিষয়টির উল্লেখ
• মালয়েশিয়ায় বাজার বন্ধে অভিযুক্ত ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি
• অভিযুক্ত ১০ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না

কর্মী নিয়োগের নতুন প্রক্রিয়া ঠিক করতে আগামী ২৫ অক্টোবর কুয়ালালামপুরে বৈঠক করবে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম এবং মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী কুলা সেগারান বৈঠকে দুই দেশের নেতৃত্ব দেবেন। পররাষ্ট্র এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গতকাল বুধবার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) আগামী বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে কর্মী নিয়োগের নতুন প্রক্রিয়া ঠিক করার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। জি টু জি প্লাস নামের (বেসরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারক সংগঠনকে যুক্ত করে সরকারি ব্যবস্থাপনা) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এত দিন মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো হতো। ১ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মী নিয়োগের এই প্রক্রিয়া বাতিল করে মালয়েশিয়া সরকার। একতরফা এবং অনৈতিকভাবে বাংলাদেশের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি (জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান) কর্মী পাঠানোর বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ ওঠার পর মালয়েশিয়া সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেয়।

জানতে চাইলে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতবারের নেতিবাচক অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, নতুন প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত হবে। যোগ্য জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করার সুযোগ পাবে। পাশাপাশি অভিবাসনের খরচ যাতে না বাড়ে এবং যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, সে অনুযায়ী যাতে কর্মী পাঠানো হয়, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।

জি টু জি প্লাস নামের সর্বশেষ প্রক্রিয়া বাতিল হলেও গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছে মালয়েশিয়া। কিন্তু কিছুদিন ধরে বিশেষ করে ঢাকায় মালয়েশিয়া হাইকমিশন ৩১ আগস্টের মধ্যে অনুমোদন পাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসা দিচ্ছে না।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ৩০ আগস্টের আগে অনুমোদিত আবেদনকারীদের ভিসা গত সপ্তাহ থেকে ঢাকার মালয়েশিয়া হাইকমিশন সত্যায়িত করছে না বলে অভিযোগ পেয়েছেন তাঁরা। জেডব্লিউজির বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরা হবে। মালয়েশিয়া হাইকমিশন ভিসা সত্যায়ন না করায় ১৫ হাজার বাংলাদেশি কাজের জন্য দেশটিতে যেতে পারছেন না।

এদিকে বৈধ কাগজপত্র না থাকার কারণে মালয়েশিয়ায় আটক বাংলাদেশিদের নিয়ে জেডব্লিউজির বৈঠকে আলোচনা হবে বলে ঢাকা ও কুয়ালালামপুরের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে। আটক বাংলাদেশিদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার বিষয়টি মালয়েশিয়া তুলতে পারে বলে ঢাকার কূটনীতিকেরা ধারণা করছেন।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের মধ্যে জি টু জি প্লাস সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। কর্মী নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়া হয় অনলাইনে। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মী পাঠানো শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ায় গত দেড় বছরে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া গেছেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৩০ জন। জনপ্রতি তিন লাখ টাকা ধরলেও তাঁদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। কিন্তু সরকারি হিসাবে খরচ হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ৬৭৩ কোটি টাকা। গত দেড় বছরে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী একটি চক্র কর্মীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মালয়েশিয়ায় বাজার বন্ধের জন্য অভিযুক্ত ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে গত ২৮ আগস্ট কারণ দর্শানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী। কিন্তু প্রায় তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও মন্ত্রণালয় এসব এজেন্সির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।