ডিএসসিসি উচ্ছেদ করে চাঁদা নেয় পুলিশ

দোকানের মালামালে দখলে গেছে ফুটপাত। সড়কের একাংশ দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে সারাইখানা। কাঁটাবন মার্কেটের সামনে থেকে তোলা ছবি।  প্রথম আলো
দোকানের মালামালে দখলে গেছে ফুটপাত। সড়কের একাংশ দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে সারাইখানা। কাঁটাবন মার্কেটের সামনে থেকে তোলা ছবি। প্রথম আলো

কাঁটাবন মোড় থেকে নীলক্ষেতের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটের সামনের ফুটপাত দখল হয়ে গেছে মার্কেটের দোকানের সামগ্রী দিয়ে। ফুটপাত পেরিয়ে মূল সড়ক দখল করেও চলছে দোকানের কার্যক্রম। দখল হওয়া ফুটপাতে চলতে পারেন না পথচারীরা। আবার সড়ক দখল হয়ে থাকায় প্রায়ই সৃষ্টি হয় যানজট।

ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করতে অভিযান চালানোর দাবি করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু তারা বলছে, উচ্ছেদের পর এটি আবার দখল হয়ে যায়। এই মার্কেটের নিচের তলায় মোট দোকান আছে ১৭৫টি। মার্কেটের দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাসের বিভিন্ন সময় শাহবাগ থানা পুলিশের উপপরিদর্শকেরা (এসআই) এখানে টহল দিতে আসেন। তখন তাঁদের চাঁদা হিসেবে ২০০-৩০০ টাকা দিতে হয়। তখন আর ঝামেলা করেন না।

তবে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই এলাকায় সিটি করপোরেশন উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে এমন কথাও কখনো শুনিনি। তারা যদি এটি উচ্ছেদ করে দেয় তাহলে আমরা সেটি দেখভাল করে রাখব। কিন্তু পুলিশ সদস্যদের চাঁদা আদায়ের অভিযোগ সত্য নয়।’

অন্যদিকে ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ দাবি করছে, গত এক বছরে এখানের ফুটপাতে দুই থেকে তিনবার অভিযান চালিয়েছে তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেট হওয়ায় অভিযানের সময় সিটি করপোরেশন শুধু ফুটপাতের ওপর রাখা মালামাল সরিয়ে দেয়।

গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, মার্কেটের দোকানের মালামাল রাখা হয়েছে সামনের ফুটপাত ও সড়কে। মার্কেটের কাঁটাবন মোড়ের অংশের দিকের দোকানে বিক্রি করা হয় অ্যাকুরিয়াম, পাখি ও পোষ্য কুকুর। খাঁচায় ভরে সেগুলো রাখা আছে ফুটপাত ও সড়কের ওপর। আর নীলক্ষেতের দিকের দোকানগুলোতে বিক্রি করা হয় মোটরযানের সামগ্রী। সে দোকানগুলোর সামনের সড়কের অর্ধেক অংশ দখল করে নষ্ট হয়ে যাওয়া মোটরসাইকেল ও গাড়ি সারানো হচ্ছে।

মার্কেটের ৮৫, ৮৬, ৮৭, ১০০, ১০২, ১১৬, ১৫২, ১৫৩, ১৫৭, ১৬৫ ও ১৭০ নম্বর দোকানের সামনের সড়কে গড়ে তোলা হয়েছে মোটরসাইকেল সারাইখানা। সড়কে মোটরসাইকেল পার্ক করে রেখে সারানো হয়।

৮৫, ৮৬, ৮৭ নম্বর দোকান টোকিও ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের। দোকান কর্তৃপক্ষই সড়কের ওপর একটি সাইনবোর্ড বসিয়ে তাতে লিখে রেখেছে ‘এখানে পার্কিং নিষেধ’। অথচ সেখানেই সারানো হচ্ছে নষ্ট হওয়া মোটরসাইকেল। দোকানের এক কর্মচারী বলেন, মাঝে মাঝে নিউমার্কেট থানা পুলিশের নষ্ট হওয়া গাড়ি সারানো হয়। এ সময় অন্য গাড়ি সারাতে এলে সেগুলোও সারানো হয়।

মার্কেটের ১২৮, ১৪৯, ১৫০, ১৫৪, ১৫৫ নম্বর দোকানের সামনের ফুটপাত ও সড়ক দখল করে গৃহস্থালির আসবাবে রঙের কাজ করা হয়। সাফিন ফার্নিচার নামের দোকানের এক কর্মচারী বলেন, দোকানের ভেতর জায়গা নেই। উপায় না থাকায় ফুটপাতে এই কাজগুলো করতে হয়।

গতকাল বিকেলে স্কুলপড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন আজমিরা হুসাইন। তিনি বলেন, ঢাকার বেশির ভাগ ফুটপাতেরই তো এমন অবস্থা। ফুটপাত ছেড়ে সড়ক দিয়েই হাঁটতে হয় সব সময়।

মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুজাউদ্দিন আহমেদ অবশ্য দাবি করছেন, দখলমুক্ত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি বিভাগকে দুবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

কিন্তু সম্পত্তি ব্যবস্থাপক সুপ্রিয়া দাস এটি অস্বীকার করে বলেন, ‘যারা ফুটপাত দখল করে রাখে তারা কেন উচ্ছেদ করার চিঠি দেবে?’ তিনি বলেন, ‘ফুটপাত খালি করার জন্য ৬-৭ মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ই ব্যবসায়ীদের চিঠি দিয়েছিল। ফুটপাত খালি করতে শিগগিরই সেখানে লোক পাঠানো হবে।’