ভোটের আগে বড় ঐক্যের সূচনা?

জাতীয় প্রেসক্লাবে গত শনিবার যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সংবাদ সম্মেলন। প্রথম আলো ফাইল ছবি
জাতীয় প্রেসক্লাবে গত শনিবার যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সংবাদ সম্মেলন। প্রথম আলো ফাইল ছবি
>

• ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশ কাল
• সমাবেশে সংহতি জানাবে বিএনপি
• আসতে পারে সমন্বিত কর্মসূচি
• পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি রাখছে আ. লীগ


যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আগামীকাল শনিবারের সমাবেশ থেকে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্যের সূচনা হতে পারে। আসতে পারে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সমন্বিত কর্মসূচিও।

দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় সরকারের কাছ থেকে সমাবেশের অনুমতি মিললেও সম্ভাব্য কর্মসূচির বিষয়ে সতর্ক নজর রাখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শনিবার বেলা তিনটায় ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে এ সমাবেশ হবে।

সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দিয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও পেশাজীবীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সমাবেশে বিএনপি ও বেশ কটি বাম দলের কর্মীদের বড় উপস্থিতি আশা করা হচ্ছে। যুক্তফ্রন্টের আহ্বায়ক বদরুদ্দোজা চৌধুরীরও সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে থাকার কথা।

বিএনপিও দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তারও আগে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন ড. কামাল হোসেন। এই উদ্যোগকে বর্তমান পর্যায়ে নিয়ে এসেছে কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট।

বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, কালকের সমাবেশে তাদের অংশগ্রহণ থাকবে। তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একা, নাকি প্রতিনিধিদল নিয়ে সমাবেশে যাবেন; তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, দেশে গণতন্ত্র ম্রিয়মাণ হয়ে গেছে। দেশের বড় সংকট হচ্ছে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা। এ ছাড়া বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। মানুষের ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধার করতে হবে। সে লক্ষ্যেই এই সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে।

এদিকে এই ‘বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া’র দিকে নজর রাখছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্র জানায়, সমাবেশে বিএনপি ও বাম ঘরানার দলগুলোর নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি কেমন হয়, এই নিয়ে কিছুটা ভাবনায় আছে আওয়ামী লীগ। সে জন্য ভেতরে-ভেতরে বেশি দল যাতে ওই সমাবেশে অংশ না নেয় এবং নেতা-কর্মীর উপস্থিতি কম হয়, সে ব্যাপারে তৎপর আছে সরকারি দল।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, সমাবেশে বিশেষ করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণ কতটা হয়, তা সুনির্দিষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি বেশি হলে তাঁদের চিহ্নিত করে পরে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ড. কামাল হোসেন কয়েক বছর ধরেই ‘জাতীয় ঐক্য’, ‘বৃহত্তর ঐক্য’ বলে নানা তৎপরতা করেছেন, ঘোষণা দিয়েছেন। কোনোটাই সফল হয়নি। এবার বিএনপিসহ বাম ঘরানার কিছু দলের অংশগ্রহণের সম্ভাবনার কারণে এ নিয়ে কিছুটা আলোচনা আছে রাজনৈতিক মহলে। এই অবস্থায় শনিবারের সমাবেশ সফল হলে আওয়ামী লীগের জন্য তা চিন্তার কারণ।

এই নেতা বলেন, এত দিন বিএনপি মানেই সাম্প্রদায়িক ও সহিংস শক্তি—এই ধারণা দিতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু কামাল হোসেন ও বাম ঘরানার দলগুলো যুক্ত হলে তারা মানুষের কাছে নিজেদের ভিন্নভাবে উপস্থাপনের সুযোগ পাবে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, ঐক্য তৎপরতায় অতি বাম ও অতি ডানপন্থী শক্তির সংমিশ্রণ আছে। ফলে তাদের মধ্যে ভাঙন ধরানো সম্ভব। এই তৎপরতা আওয়ামী লীগের আছেও। নিজেদের জোট বড় করার একটা তৎপরতাও আওয়ামী লীগের আছে। এ ক্ষেত্রে বাম ঘরানার দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে তারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নেতায় নেতায় ও দলে দলে যে ঐক্য, সে ঐক্য জনগণের মধ্যে কোনো প্রভাব ফেলে না। তিনি বলেন, ‘এ দেশে একসময় ৭৬ পার্টির ঐক্য হয়েছিল। তা কি জনমনে কোনো প্রভাব ফেলতে পেরেছিল?’

প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সালে বড় দলগুলো এরশাদের অধীনে নির্বাচন বর্জন করলে তখনকার আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে ৭২ দলীয় একটি জোট নির্বাচন করে এবং রব সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। বর্তমান বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ায়ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম রব যুক্ত আছেন।

সমাবেশের জায়গাও নির্ধারণ করে দেন প্রধানমন্ত্রী
এদিকে সমাবেশের স্থান নিয়ে গতকাল সকালে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেন। ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা ও গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জগলুল হায়দার বলেন, গত ৬ আগস্ট সমাবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে আবেদন করা হয়। এক মাস পর ৫ সেপ্টেম্বর পুলিশ অনুমতি না দেওয়ার কথা জানায়। ১৮ সেপ্টেম্বর পুলিশ মহানগর নাট্যমঞ্চে সমাবেশের অনুমতি দেয়। সেভাবে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। কিন্তু ১৭ সেপ্টেম্বর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া তাঁদের জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আপনারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে পারেন।’

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্যসচিব আ ব ম মোস্তাফা আমিন বলেন, দেশের পরিস্থিতি কোথায় গেছে যে সভা-সমাবেশের জায়গাও প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করে দেন। তবে এত অল্প সময়ে সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব নয় বলে তাঁরা মহানগর নাট্যমঞ্চে সমাবেশ করছেন।