ঢাকার যানজটের সমাধান বাস

বাসকে নির্ভরযোগ্য গণপরিবহন করতে না পারা ঢাকার বড় সমস্যা। ফাইল ছবি
বাসকে নির্ভরযোগ্য গণপরিবহন করতে না পারা ঢাকার বড় সমস্যা। ফাইল ছবি
>

• ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস
• ঢাকায় নিবন্ধিত যান ১১,৭৩,১৬০
• বাস ৩৯,৭৮২টি
• প্রাইভেট কার ২,৫২,৬৭৪টি
• হোন্ডা ৫,০২,০০০টি
• প্রতিমাসে প্রায় দেড় হাজার নতুন ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধিত
• যানজট কমাতে ব্যক্তিগত গাড়ি কমাতে হবে।

ঢাকার যানজট কমাতে সরকারের নেওয়া সব পরিকল্পনাতেই ব্যক্তিগত গাড়ি সীমিত রাখতে বলা হয়েছিল। পাশাপাশি গণপরিবহন বাড়াতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এর কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাসের সংখ্যা বাড়ানোর মধ্য দিয়ে ঢাকার যানজট কমানো সম্ভব।

২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অংশীজন সভার আয়োজন করে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। সভায় যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি সংস্থার কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, পরিবহনশ্রমিক নেতা, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সভায় ‘ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে স্বল্পমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা: প্রেক্ষিত সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাসকে নির্ভরযোগ্য গণপরিবহন করতে না পারা ঢাকার বড় সমস্যা। কম খরচে বেশি যাত্রী পরিবহনের এই সুযোগ না নেওয়ার পেছনে কী স্বার্থ থাকতে পারে?’

‘ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে বহু মাধ্যম ভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থার গুরুত্ব’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সহসভাপতি আকতার মাহমুদ। প্রবন্ধে বলা হয়, রাজধানীতে গণপরিবহন চলার উপযোগী সড়কের বেশির ভাগ থাকছে ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে। ৪৪ শতাংশ সড়কে ফুটপাত নেই। ৮০ শতাংশ ফুটপাত রক্ষণাবেক্ষণ নিম্নমানের। সড়কের ৯৫ শতাংশ জায়গায় পারাপারের ব্যবস্থা নেই।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুযায়ী, গত আগস্ট মাস পর্যন্ত ঢাকায় নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ১১ লাখ ৭৩ হাজার ১৬০ টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। আর ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ২ লাখ ৫২ হাজার ৬৭৪ টি। বাস আছে ৩৯ হাজার ৭৮২ টি। প্রতি মাসে প্রায় দেড় হাজার নতুন ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধিত হচ্ছে।

সভায় বলা হয়, একটি শহরের মোট সড়কের ৫০ শতাংশ জায়গাজুড়ে ব্যক্তিগত গাড়ি চললে তা যাত্রীর ১২ শতাংশ বহন করতে পারে। অন্যদিকে ৫০ শতাংশ জায়গাজুড়ে বাস চললে ৮৮ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করা যায়। উন্নত মানের ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক বাসসেবা চালুর খরচ মেট্রোরেলের মতো অন্যান্য প্রকল্পের তুলনায় অনেক কম।

পরিবহন পরিকল্পনায় বাসকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় সমালোচনা করেন সভার আলোচকেরা। লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘ব্যক্তিগত গাড়ি কমানোর কথা বললে ভদ্রলোকদের মেজাজ খারাপ হয়। আইন প্রয়োগের দুর্বলতা দূর করা না গেলে শুধু পরিকল্পনা করে কাজ হবে না। তত্ত্বগত আলোচনা না করে এখন কাজ করার সময়।’

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে নেওয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মানসিকতার ঘাটতি ছিল বলে মনে করেন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক। তিনি বলেন, ‘ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে ভালো পরিকল্পনা ছিল। সুযোগও ছিল। কেউ তা মানল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের জন্য কাজ করতে চাইলে সময় লাগে না, বিনিয়োগ লাগে না। দরদ লাগে।’

রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা আনতে হলে নাগরিকদের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে বলে মনে করেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, ট্রাফিক সপ্তাহ, মাসব্যাপী সচেতনতার পরেও জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমে সড়ক নিরাপত্তা ও ট্রাফিক সচেতনতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমানের সঞ্চালনায় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সফিকুর রহমান, সাভার পৌরসভার মেয়র আবদুল গনি, বিআইপির সাধারণ সম্পাদক আদিল মোহাম্মদ খান, বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ প্রমুখ বক্তব্য দেন।