সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সরকার দাঁড় করাতে পারেনি: জয়নুল

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন জয়নুল আবেদীন। ছবি: প্রথম আলো
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন জয়নুল আবেদীন। ছবি: প্রথম আলো

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ সরকার দাঁড় করাতে পারেনি। নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে চাওয়ায় তাঁকে চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগ করানো হয়েছে।

আজ শুক্রবার সকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান হলে সংবাদ ব্রিফিংয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন এ কথা বলেন। তিনি অভিযোগ করেন, সাবেক জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতি করার প্রলোভন দেখানো হয়েছিল বলেই তিনি সিনহার সঙ্গে বিচারকার্যে বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি আয়োজিত ব্রিফিংয়ে জয়নুল আবেদীন সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘সিনহা বাবুর বিরুদ্ধে নাকি দুর্নীতির অভিযোগ আছে। চারজন বিচারপতি এ কথাই বলেছিলেন। তাঁদের মাধ্যমেই সিনহা বাবুকে বলেছিলেন, তাঁর (এসকে সিনহা) সঙ্গে বসবেন না। সিনহা বাবু বলেছিলেন “আমি কোনো দুর্নীতি করি নাই। আমার বিরুদ্ধে সরকার কোনো দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারবে না।”’ জয়নুল আবেদীন সরকারের কাছে জানতে চান, ‘কোথায় সেই দুর্নীতির অভিযোগ। তাঁর বিরুদ্ধের একটি বাস্তবভিত্তিক দুর্নীতির অভিযোগ দাঁড় করাতে পারেন নাই। এর অর্থই হচ্ছে শুধু ষোড়শ সংশোধনী এবং মাজদার হোসেন মামলায় নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা করতে চেয়েছিলেন, তাই তাঁকে (এসকে সিনহা) চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগ করানো হয়েছে।’

জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতি করানোর প্রলোভন দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা প্রচণ্ড চাপের মুখেও ষোড়শ সংশোধনীর রায় সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দিয়েছিলেন। রায়ের পর সরকার পক্ষের লোকেরা পার্লামেন্টে এবং বিভিন্ন সভা–সমাবেশে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতি সেই চাপের মুখে নত হননি। এ কারণে আপিল বিভাগের অন্য চার বিচারপতির মাধ্যমে তাঁর (এস কে সিনহা) সঙ্গে একই এজলাসে না বসার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। ওই চার বিচারপতির মধ্যে পরে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম এ ওয়াহহাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতি করার প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। পরে তিনি (এম এ ওয়াহহাব মিঞা) বিচারপতি সিনহাকে বলেছিলেন, “রাষ্ট্রপতি আমাদের বলেছেন আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ আছে, তাই আমরা আর আপনার সঙ্গে বিচারকার্যে বসতে চাই না।” বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞার এই বক্তব্যও ছিল সংবিধানপরিপন্থী। তবে এত কিছু সত্ত্বেও বিচারপতি সিনহা অটল ছিলেন। কিন্তু সরকার চাপ প্রয়োগ করে সিনহাকে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করে এবং পরবর্তীতে তাঁকে পদত্যাগ করতেও বাধ্য করে।’


তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতির লিখিত বই ‘A Broken Dream-Status of Rule of Law, Human Rights and Democracy’, যা ইতিমধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং সেখানে সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সরকারের চাপ এবং হুমকির মুখে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, সরকার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে সিনহাকে অসুস্থ বানিয়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে। তাঁর দাবি, জোরপূর্বক তাকে পদত্যাগও করানো হয়। সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা তাঁর বইয়ে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপের বিষয়ে যে তথ্য দিয়েছেন, তা আমাদের বিবেককে দংশন করে। তাঁর বইয়ে উঠে আসা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিচার বিভাগের ওপর চাপ ও নগ্ন হস্তক্ষেপের বিষয়টি জাতিকে বিস্মিত করেছে। এ ধরনের হস্তক্ষেপ জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।


বিচার বিভাগ এখন নির্বাহী বিভাগের আওতাধীন, অভিযোগ করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘আমরা আইনজীবীরা তখন জাতির সামনে পরিষ্কার করেছি যে বিচারপতি সিনহা অসুস্থ নন এবং তখনই বলেছিলাম ষোড়শ সংশোধনীর রায়কে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতি সিনহাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। বিচারপতি সিনহাকে এ ধরনের চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগ করিয়ে পুরো বিচার বিভাগকে এখন নির্বাহী বিভাগের আওতাধীন করা হয়েছে। নিম্ন আদালতগুলো স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারছেন না বা পরিচালিত হচ্ছে না। দেশের মানুষ আজ অসহায়।’

বিচার বিভাগের ওপর চাপ প্রয়োগ করে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার রায় দেওয়া হয়েছে বলে জানান জয়নুল আবেদীন। তিনি বলেন, ‘বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের পর খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের মানুষের মধ্যে বিশ্বাস জন্মেছে যে ওই রায়টিও (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট) বিচার বিভাগের ওপর চাপ প্রয়োগ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেওয়া হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা, গোলাম রহমান ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ নাসরিন আক্তার, সিনিয়র সহসম্পাদক কাজী মো. জয়নুল আবেদীন।