ব্যক্তিগত অটোরিকশা অবাধে চলছে ভাড়ায়

রাজধানীতে প্রাইভেট অটোরিকশা চলছে অবাধে। গতকাল মোহাম্মদপুরে। ছবি: প্রথম আলো
রাজধানীতে প্রাইভেট অটোরিকশা চলছে অবাধে। গতকাল মোহাম্মদপুরে। ছবি: প্রথম আলো

সরকারি কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের জন্য নিবন্ধিত ‘প্রাইভেট’ অটোরিকশা ভাড়ায় চলা বন্ধের সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে পালন করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে রাজধানীর সড়কে অবাধে ভাড়ায় চলছে এসব অটোরিকশা। এসব অটোরিকশার ভাড়ায় চলার রুট পারমিট ও মিটার নেই। তাই এসব অটোরিকশা চুক্তিতে যাত্রী আনা-নেওয়া করে।

মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন সূত্রের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকায় প্রায় ৫ হাজার প্রাইভেট অটোরিকশা ভাড়ায় চলাচল করে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) পরিচালনা পরিষদের ১০তম সভার সিদ্ধান্ত ছিল, প্রাইভেট নিবন্ধিত অটোরিকশা ভাড়ায় চলাচল করতে পারবে না এবং ভাড়ায় চললে তা আটক করতে হবে। ১২ সেপ্টেম্বর ডিটিসিএর ১১তম সভায় জানানো হয়, সিদ্ধান্তটি কঠোরভাবে পালন করা হচ্ছে।

তবে গত বুধবার মিরপুর ১ নম্বর, টেকনিক্যাল মোড়, কল্যাণপুর, শ্যামলী, ফার্মগেট, পান্থপথ, সায়েন্স ল্যাব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ‘প্রাইভেট’ লেখা অসংখ্য ছাইরঙা সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়ায় চলছে। যাত্রীদের গন্তব্য শুনে চালক পছন্দমতো ভাড়া হাঁকছেন। দরদাম করে ভাড়ায় পোষালে যাত্রীরা গন্তব্যে যাচ্ছেন।

প্রাইভেট অটোরিকশার চালক কামাল উদ্দীন বলেন, ‘প্রাইভেট অটোরিকশা ভাড়ায় চলে, এটা সবাই জানে। ভেতরে মালিক আছে নাকি যাত্রী, কেউ তাকায়ও না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যথেষ্ট আন্তরিক। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানায় সংশ্লিষ্ট সংস্থা। বাস্তবতার সঙ্গে অগ্রগতি প্রতিবেদনের সামঞ্জস্য আছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখা হবে।

ঢাকা মহানগর প্রাইভেট সিএনজি মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি সারোয়ার হোসেন বলেন, সমিতিভুক্ত প্রায় দুই হাজার প্রাইভেট অটোরিকশাকে বাণিজ্যিক নিবন্ধন দিতে ২০১২ সালে তাঁরা উচ্চ আদালতে রিট করেন। আদালত সমিতিভুক্ত অটোরিকশাকে বাণিজ্যিক নিবন্ধন দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু এখনো নির্দেশ বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই।

এদিকে ভাড়ায় চলা বাণিজ্যিক অটোরিকশাগুলো ইচ্ছেমতো চললেও এগুলোর বিষয়ে ডিটিসিএর সভায় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এসব অটোরিকশার চালকেরা গন্তব্য পছন্দ না হলে যাত্রী তুলছেন না। যাত্রী তুললেও সেটা মিটারে নির্ধারিত ভাড়ায় নয়, চুক্তিতে কয়েক গুণ বেশি। সব মিলিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে রেখেছেন এসব অটোরিকশার চালকেরা।

গত বুধবার মিরপুরের টেকনিক্যাল মোড়ে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাস এসে সেখানে যাত্রা শেষ করছে। যাত্রীরা বাস থেকে নেমে অটোরিকশা ভাড়া করছেন। ১০-১২টি অটোরিকশা দাঁড়িয়ে আছে। গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি বাসে চুয়াডাঙ্গা থেকে এসেছেন ওয়াহিদ ইসলাম। যাবেন জিগাতলা। তিনি বলেন, ‘কয়েকজন চালককে জিজ্ঞেস করার পরে একজন ২৫০ টাকায় যেতে রাজি হলেন। মিটারে অটোরিকশা চলবে—এটা এখন আর কেউ চিন্তাও করে না।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) নুর মোহাম্মদ মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, যেসব অটোরিকশা মিটারে চলে না সেগুলোর বিরুদ্ধে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত ব্যবস্থা নিচ্ছে। জরিমানা করছে।