কেজো আঠার বউলাগোটা

পাকা বউলাগোটা। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ছয়ানি থেকে তোলা।  ছবি: লেখক
পাকা বউলাগোটা। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ছয়ানি থেকে তোলা। ছবি: লেখক

ছোটবেলায় একধরনের কচি ফল দিয়ে সরু বাঁশের চোঙায় ঢুকিয়ে কাঠি দিয়ে চাপ দিয়ে বাজির মতো ফোটাতাম। ফলটি পাকলে এর রস আঠালো হয়ে যেত। সেই আঠা ঘুড়ি বানানো, বইয়ের মলাট, চিঠির খামের মুখ লাগানোসহ কত কাজেই না ব্যবহার করেছি। পুরোনো বাড়ির সেই গাছটি এখন আর নেই।

গত বছর গ্রীষ্মে বাড়ি গিয়ে নতুন বাড়ির অপেক্ষাকৃত নবীন গাছে সেই ফল দেখে পুরোনো দিনের স্মৃতি আবার তরতাজা হয়ে উঠল। বাড়ির পেছনে পুকুরপাড়ের একমাত্র গাছটিতে থোকা থোকা পাকা ফল ঝুলে আছে। ভাগ্যিস, আগাছা বলে কাটা পড়েনি গাছটি। ফলগুলো ছুঁয়ে দেখি। কী সুন্দর গড়ন! পাকা ফলের রংটাও বেশ লোভনীয়।

নাম বউলাগোটা। বৈজ্ঞানিক নাম cordia dichotoma। স্থানীয়ভাবে বোহাল, বোহারি, বহুবরা বা লারহোরা নামেও পরিচিত। এটি মাঝারি আকৃতির পাতাঝরা বৃক্ষ। গাছ প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। বাকল ছাইরং ধূসর বা বাদামি। পাতা সরল, একান্তর। কিনারা অনেকটা ঢেউখেলানো বা দাঁতানো। ফুল সাদা, অবৃন্তক, সুগন্ধি। বৃতি ঘণ্টাকার, কুঁড়ি অবস্থায় গোলাকার।

বউলাগোটার ফুল ফোটে ফেব্রুয়ারিতে। ফল পাকে মে-জুনের দিকে। ফল শিশু-কিশোরদের প্রিয়। ফলের স্বচ্ছ আঠা পাখি শিকারে, ঘুড়ি তৈরিতে ও বইয়ের মলাট লাগাতে কাজে লাগে। কোথাও কোথাও ফল ও বীজের শাঁস খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। শাঁস চর্মরোগে কাজে লাগে। বাকল থেকে শতকরা ২০ ভাগ টেনিন পাওয়া যায়। বাকলের ক্বাথ টনিক হিসেবে অজীর্ণ, উদরাময়, জ্বর ও পেটের অসুখে কার্যকর। কাঠ দিয়ে নৌকা, বন্দুকের কুঁদা, কৃষি যন্ত্রপাতি ও ছোটখাটো আসবাব হয়। ভারতের লোধা আদিবাসীরা মূলের ছাল লেই করে ফুসকুড়ি নিরসনে ব্যবহার করে।

এ গাছ আমাদের লোকালয়-সংলগ্ন বাগান, বেলে মাটির অরণ্য ও উন্মুক্ত স্থানে আপনাআপনি জন্মে। এদের আবাসস্থল দ‌ক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশসহ অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। গাছটি আমাদের দেশে দ্রুত কমে যাচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে এর সংরক্ষণ প্রয়োজন।