আমাদের শত্রু আমরা না, বিএনপি-জামায়াতই আমাদের শত্রু

ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি
ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি

দলের অভ্যন্তরীণ কোনো দ্বন্দ্ব থাকলে তা বাইরে প্রকাশ না করার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘ঘরের বিবাদের কথা পরকে বলবেন না। আমাদের শত্রু আমরা নিজেরা না। বিএনপি-জামায়াতই আমাদের শত্রু।’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলা সফরের অংশ হিসেবে আজ শনিবার কুমিল্লা থেকে ওবায়দুল কাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে কক্সবাজারে উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। পথে আজ কুমিল্লার দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জে এক পথসভায় এসব কথা বলেন তিনি। ইলিয়টগঞ্জে রাজেন্দ্র বিশ্বনাথ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ পথসভা হয়।

ওবায়দুল কাদের সভায় বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নামে যাঁরা অপকর্ম করেছেন, চাঁদাবাজি করেছেন, তাঁদের দলে ঠাঁই নেই। আসল কর্মীরাই দলের মধ্যে টিকে থাকবেন। ঘরের মধ্যে ঘর দেখতে চাই না। পকেট কমিটি করবেন না। সুবিধাবাদীদের দলে আনবেন না।’

আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে কোন কোন বিষয়ে নজর রাখা হবে, তার ধারণা দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, জনগণের কাছে যিনি গ্রহণযোগ্য, তিনিই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন। নেত্রীর কাছে প্রত্যেক মনোনয়ন-প্রত্যাশীর আমলনামা, জরিপ ও এসিআর আছে। যিনি সবচেয়ে এগিয়ে থাকবেন, তাঁকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।

বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০১৪ সালের মতো আগুন-সন্ত্রাস, বোমাবাজি ও পেট্রলবোমা দিয়ে বাসে আগুন দেওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটালে দলীয় নেতা-কর্মীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। গত ১০ বছরে ২০টি ঈদ গেলেও তারা কোনো আন্দোলন করতে পারেনি। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে কুমিল্লায় উত্তর জেলার সাত উপজেলা নিয়ে প্রশাসনিক জেলা করা হবে।
কাদের বলেন, বিএনপির আমলে লোডশেডিং ছিল। আর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছে। কুমিল্লায় বর্তমানে শতকরা ৯০ ভাগ বিদ্যুতের ব্যবস্থা রয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত হবে।

পথসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-মেঘনা) আসনের সাংসদ মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া, দলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুস সবুর, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল আওয়াল সরকার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার প্রমুখ।

পথসভা শুরু হওয়ার আগে আওয়ামী লীগের বিবদমান দুটি পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে বসা নিয়ে চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

দুপুর সাড়ে ১২টায় কুমিল্লা টাউন হল মাঠে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর) আসনের সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিনের সভাপতিত্বে এক বিশাল জনসভা হয়। এতে
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের পর বড় কিছু পেতে হলে ধৈর্য ধরতে হবে। কুমিল্লার মানুষ ধৈর্য ধরতে জানেন। প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে আছে। কুমিল্লাবাসীর দাবির কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাব।’
কাদের বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলন দিয়ে কিছু একটা করতে চেয়েছে। এটাও ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি পার্টিটা হচ্ছে ভুয়া ও মিথ্যাচারের পার্টি। ওরা অফিসে বসে আন্দোলনের ডাক দেয়।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, পরিকল্পনামন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল ও সাংসদ মো. তাজুল ইসলাম।
বেলা তিনটায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এইচ জে সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক জনসভা হয়। এতে বক্তব্য দেন রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক,পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল মতিন খসরুসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
ওই সভায় সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের চিত্র তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কুমিল্লার ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। আরও ১০ ভাগ আগামীতে পাবেন। এখন আর বিদ্যুৎ যায় না। লোডশেডিং হচ্ছে না। আগে মানুষ বিদ্যুৎ গেলে বলত, “খালেদা’ গেল।” এখন আর বলে না। প্রধানমন্ত্রী নারী জাতিকে সম্মান দিয়েছেন। বাবার নামের সঙ্গে মায়ের নাম যুক্ত করেছেন। এই সরকারের আমলে রেলের উন্নয়ন হয়েছে।’
কুমিল্লার তিনটি সভায় ওবায়দুল কাদের তাঁর বক্তৃতায় স্লোগান ধরেন। একই সঙ্গে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রচণ্ড গরমে সভায় আসেন। এই সফরে সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম তুলে ধরার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের জন্য ভোট চাইলেন দলের নেতারা।