'অনেক স্বপ্ন ছিল...মায়ের মুখে হাসি ফোটাব'

‘অনেক স্বপ্ন ছিল চাকরি করব, মায়ের মুখে হাসি ফোটাব, কিন্তু সব এলোমেলো হয়ে গেল...’—ডায়েরির পাতায় লেখা এই কথা কয়টি এখন কেবলই বেদনা মলিন স্মৃতি। এসব কথা যিনি লিখেছেন, তিনি এখন না–ফেরার দেশে। সৈকত রঞ্জন মণ্ডল (২৮) নামের সেই যুবক ছিলেন মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তিনি ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজির ছাত্র ছিলেন।

সৈকতের ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করার পর তাঁর ডায়েরিতে পাওয়া যায় এসব হতাশার কথা। দীর্ঘশ্বাস ভরা সেই ডায়েরিতে আরও লেখা ছিল, ‘আজ এত কঠিন অবস্থা তৈরি হয়ে গেল! আমি শুধু বন্ধুদের কে কী করছে, সেই দিকে খেয়াল করে চলছি...।’

গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুবির খাজা গেটের পূর্ব দিকের ইসলামনগর জামে মসজিদ গলির ডানে একটি দোতলা ভবনের মেস থেকে সৈকতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, সৈকতের পাশের দালানের প্রতিবেশী তাঁর জানালা দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে একজনকে ঝুলতে দেখেন। তিনি বিষয়টি জানালে সৈকতের রুমমেট, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে সৈকতকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। পরে সৈকতকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

সৈকতের বাবার নাম কৃষ্ণ মণ্ডল, মা রানী মণ্ডল। গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নে।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা যায়, সৈকত দুবার বিসিএস পরীক্ষা দিয়েও উত্তীর্ণ হতে পারেননি।

সৈকতের কক্ষে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির বিভিন্ন বই রয়েছে। তাঁর ডায়েরি ও টেবিলের ড্রয়ারে পাওয়া প্রেসক্রিপশন থেকে পুলিশের ধারণা, হতাশায় ভুগছিলেন তিনি। হতাশা থেকে বাঁচতে চিকিৎসকের শরণাপন্নও হয়েছিলেন।

সৈকতের কক্ষ থেকে উদ্ধার করা ডায়েরির একটি পাতায় লেখা: ‘অনেক স্বপ্ন ছিল চাকরি করব, মায়ের মুখে হাসি ফোটাব। কিন্তু সব এলোমেলো হয়ে গেল। মায়ের শরীর খুব খারাপ। তবুও আমি খুলনায় থেকে পড়ার কথা ভাবছি। বাড়িতে যেতে গেলে সবকিছু নিয়ে যেতে হবে। তা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। না আছে টিউশনি, যার ওপর নির্ভর করে খুলনায় চলছিলাম। কোনো চাকরিতেও ভয় পাচ্ছি। আজ এত কঠিন অবস্থা তৈরি হয়ে গেল। আমি শুধু বন্ধুদের কে কী করছে, সেই দিকে খেয়াল করে চলছি। আমরা এক মেসে চার বন্ধু থাকতাম। এর মধ্যে আমার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে। অন্য তিনজন চাকরি পেয়েছে। আসলে প্রত্যেকটি কাজ করতে করতে সেটা ছেড়ে দিয়ে BCS–এর দিকে যাওয়ায় হঠাৎ চাপ বেড়ে যায়। সে জন্য আমি আরও Abnormal Behaviour প্রদর্শন করছি। প্রজেক্টের কাজে চাপ থাকায় শরীরটা গড়তে পারিনি। সে জন্য অতিরিক্ত চাপ সহ্য হয়নি।’

হরিণটানা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য সৈকতের মরদেহ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।