রয়ে-সয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার

>

• ঐক্য প্রক্রিয়া ও এর উদ্যোগের গভীরতা বোঝার চেষ্টা করছে আ. লীগ
• জোটের দুর্বল দিক বের করে সমালোচনা করার সিদ্ধান্ত আ. লীগের
• সরকারবিরোধী ঐক্য প্রক্রিয়াকে খাটো করে দেখানোর কৌশল
• একই সুরে বলার জন্য ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের বলা হয়েছে
• সোমবার আ. লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে
• বৈঠকে ‘বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার’ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ‘বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার’ সমাবেশ থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ পাঁচ দফা দাবি মানবে না সরকারি দল আওয়ামী লীগ। তবে ঐক্য প্রক্রিয়ার বিষয়ে এখনই কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে রয়ে–সয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চায় সরকার।

আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্র থেকে জানা গেছে, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যে ঐক্য প্রক্রিয়া এবং এর উদ্যোগে শনিবার যে নাগরিক সমাবেশ হয়েছে, এর গভীরতা বোঝার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। এই জোটের দুর্বল দিক বের করে সেই অনুযায়ী বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে সমালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে সরকারবিরোধী এই ঐক্য প্রক্রিয়াকে খাটো করে দেখানো এবং ‘ষড়যন্ত্র’ বলে প্রচার করার কৌশল নিয়েছে। এ বিষয়ে একই সুরে কথা বলার জন্য ১৪–দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে বলা হয়েছে।

আজ সোমবার আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে সরকারবিরোধী ‘বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার’ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে জোটের সূত্র জানিয়েছে।

এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সরকারি জোটের শরিকেরা ঐক্য প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেছেন। গতকাল রোববার বরিশালের বাবুগঞ্জে এক কর্মী সমাবেশে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, এই ঐক্য হচ্ছে ষড়যন্ত্রের ঐক্য, গণতন্ত্রের ঐক্য নয়, ভোটের ঐক্য নয়। আরেকটি এক-এগারো সৃষ্টি করার জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে তৎপরতা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের বিশ্লেষণ হচ্ছে—ঐক্য প্রক্রিয়ায় নানা মতের দল যুক্ত হয়েছে। তাই এতে ভাঙন ধরতে পারে। আর সরকারি দলের তরফেও ভাঙনের সব ধরনের চেষ্টা থাকবে। এ ছাড়া ঐক্য প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় দল বিএনপি। কিন্তু বিএনপি মূল নেতৃত্বে নেই। এর ফলে বিএনপি ‘দেউলিয়া দলে’ পরিণত হয়েছে; এ কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গতকাল ঢাকায় এক আলোচনা সভায় বলেন, ‘শনিবার মহানগর নাট্যমঞ্চে রাজনীতির নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। বিএনপির মতো একটি দেউলিয়া দল আরেক দেউলিয়া ড. কামাল হোসেনের কাছে আত্মসমর্পণ করে বাঁচতে চায়।’

সরকারি জোটের নেতারা মাঠের বক্তৃতায় ঐক্য প্রক্রিয়াকে কটাক্ষ করে বক্তৃতা দিলেও আওয়ামী লীগ উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র বলছে, বাম, ডান ও মধ্যপন্থার বিভিন্ন দলের নেতাদের উপস্থিতিতে গত শনিবারের সমাবেশ ও বৃহত্তর ঐক্যের ঘোষণা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ফলে তারা যেসব দাবি করছে, তা বাস্তবায়নে সরকারের ওপর চাপ বাড়তে পারে। তাই রয়ে-সয়ে ঐক্য প্রক্রিয়ার কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চায় সরকার।

ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশ থেকে গত শনিবারের পাঁচ দফা দাবি পেশ করা হয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দাবি হচ্ছে, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এখন থেকে নির্বাচন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা যাবে না। এসব দাবি বিএনপিসহ বিভিন্ন দল অনেক আগে থেকেই বলে আসছে।

আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, নাগরিক সমাবেশ থেকে দেওয়া দাবি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও দেওয়া হয়েছিল। সরকার তখনো মানেনি। এবারও আওয়ামী লীগ সহজে এসব দাবি মেনে নেবে, এমনটা ভাবার কারণ নেই। তাই বিরোধী দলগুলোকে হয় আন্দোলন করে দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে, নতুবা সংবিধান মেনে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে।

আওয়ামী লীগ মনে করে, গণফোরাম, বিকল্পধারা, জেএসডিসহ ঐক্য প্রক্রিয়ার দলগুলোর মাঠ পর্যায়ে সাংগঠনিক শক্তি নেই। এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখতে হবে বিএনপিকে। কিন্তু বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে বিপুলসংখ্যক মামলা আছে। বিএনপি মাঠে নেমে কিছু করার চেষ্টা করলেই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।