প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে এসে পৌঁছেছেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে সফরসঙ্গীদের নিয়ে তিনি এখন নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন।

প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী ব্রিটিশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট স্থানীয় সময় ২৩ সেপ্টেম্বর বেলা ২টা ১০ মিনিটের দিকে নিউজার্সির নিউওয়ার্ক লিবার্টি বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়।

যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

প্রধানমন্ত্রীর আগমনের ঘণ্টাখানেক আগেই ব্যানার-পোস্টার হাতে নিয়ে বিমানবন্দর টার্মিনালে সমবেত হন বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে আসা আওয়ামী লীগের শত শত নেতা-কর্মী। অন্যদিকে, বিক্ষোভ প্রদর্শনে উপস্থিত হন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও সমমনা লোকজন। উভয় দলের পাল্টাপাল্টি স্লোগানে বিমানবন্দর এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে সারা বিশ্বের নেতারাই প্রতিবছর এই সময়ে নিউইয়র্কে আসেন। কেউ টেরও পায় না, কোন দেশের নেতা কখন এলেন বা গেলেন। কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় এই ব্যতিক্রম এবারও চোখে পড়ার মতো ছিল।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান। ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় ম্যানহাটনের হিলটন হোটেলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে টানা ১০ বছরের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে এলেন। বিমানবন্দর থেকে নিরাপত্তাবাহিনীর গাড়িবহরসহ শেখ হাসিনা ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে যান। ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই হোটেলে অবস্থান করে তিনি জাতিসংঘের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেবেন।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন বিশ্বমানবতার নেতায় পরিণত হয়েছেন। তাঁকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে মার্কিন প্রশাসন।

এবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের প্রতিপাদ্য—‘মেকিং দ্য ইউনাইটেড ন্যাশনস রিলেভ্যান্ট টু অল পিপল: গ্লোবাল লিডারশিপ অ্যান্ড শেয়ারড রেসপন্সিবিলিটিজ ফর পিসফুল, অ্যাকুইটেবল অ্যান্ড সাসটেইনেবল সোসাইটিজ’।

স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন জানিয়েছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তাতে তিনি জাতিসংঘকে মানুষের ভবিষ্যৎ আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রস্থল হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের এবারের প্রতিপাদ্য জাতির পিতার সেই ভাষণের অভীষ্ট লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এবারের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব বিষয়ে অংশ নিচ্ছেন, তার মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যু, উন্নয়ন, শিক্ষা ও নারী অধিকার, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা প্রভৃতি রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘে উপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে রোহিঙ্গা ইস্যুর বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরও জোর সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করা হবে বলে জানান স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন।

স্থানীয় সময় সোমবার বিকেলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে নেলসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। তার আগে সকালে যুক্তরাষ্ট্র আয়োজিত বিশ্ব মাদক সমস্যা বিষয়ে বৈশ্বিক আহ্বানসংক্রান্ত একটি উচ্চপর্যায়ের সভায় তিনি যোগ দেবেন। আরও ২৯টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও এর সহ-আয়োজক। সভায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘ মহাসচিবের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। শরণার্থীবিষয়ক বৈশ্বিক কমপ্যাক্ট ও শিক্ষাবিষয়ক দুটি উচ্চপর্যায়ের ইভেন্টে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই দিনে ইউএস চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত একটি গোলটেবিল বৈঠকে তিনি অংশ নেবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ-বিষয়ক কার্যালয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত সাইবার সিকিউরিটি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক একটি উচ্চপর্যায়ের সভায় বক্তব্য দেবেন। এতে জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, এস্তোনিয়া ও সিঙ্গাপুর সহ-আয়োজক হিসেবে রয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের আয়োজনে অ্যাকশন ফর পিস কিপিং-বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সভায় প্রধানমন্ত্রী অংশ নেবেন। এ ছাড়া তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের চতুর্থ শিল্পবিপ্লব-সম্পর্কিত একটি প্যানেলে যোগ দেবেন।

জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে ২৬ সেপ্টেম্বর জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ পরিষদের জেনারেল ডিবেট অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় ভাষণ দেবেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে গতবারের উত্থাপিত পাঁচ দফা সুপারিশমালার ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দেবেন।

স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে থাকবে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার আদায়, দারিদ্র্য দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, অবকাঠামোগত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্যগাথার বিষয়গুলো। ‘রূপকল্প ২০২১’-এর আলোকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে সরকার যে ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে, সে বিষয়ে আলোকপাতের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশাগুলোও তাঁর বক্তৃতায় থাকবে।

লিথুনিয়ার প্রেসিডেন্ট আয়োজিত ‘নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন’-বিষয়ক সাইড ইভেন্টে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব ইভেন্টে উপস্থিত থাকবেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী, লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘ মহাসচিবের বৈশ্বিক শিক্ষাবিষয়ক বিশেষ দূত।

২৮ সেপ্টেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন মিলনায়তনে তাঁর নিউইয়র্ক সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন।

নিউইয়র্কে অবস্থানের সময় প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান, জাতিসংঘ মহাসচিব, কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আয়োজিত একটি অভ্যর্থনায় এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। এ ছাড়া এবার প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি অ্যাওয়ার্ড পেতে যাচ্ছেন। এবারও কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নেবে।