কেঁচো সারে সচ্ছল গ্রাম

কেঁচো সার তৈরির কাজে ব্যস্ত এক নারী। গত বৃহস্পতিবার সকালে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার নাটোয়াপাড়া গ্রামে।  প্রথম আলো
কেঁচো সার তৈরির কাজে ব্যস্ত এক নারী। গত বৃহস্পতিবার সকালে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার নাটোয়াপাড়া গ্রামে। প্রথম আলো

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা সদর থেকে আনুমানিক পাঁচ কিলোমিটার দূরে নাটুয়াপাড়া গ্রাম। গ্রামের শুরুতেই পাকা সড়কে ছোট্ট সাইনবোর্ডে লেখা, ‘এই গ্রামে কেঁচো সার পাওয়া যায়।’ পরে গ্রামটি ঘুরে দেখা যায়, ওই গ্রামের প্রায় সব পরিবারেই কেঁচো সার উৎপাদন হয়।

সার উৎপাদনের কাজটি করছেন ওই গ্রামের নারীরা। ওয়ার্ল্ড ভিশন নামের উন্নয়ন সংস্থার একটি প্রকল্পের মাধ্যমে শুরু হয় এই সার উৎপাদনের কাজ। বর্তমানেও ওয়ার্ল্ড ভিশন সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেড় বছর আগে নাটুয়াপাড়া গ্রামে প্রথম কোঁচো সার উৎপাদন শুরু হয়। বর্তমানে গ্রামের প্রায় সব পরিবার নিজের বাড়িতে উৎপাদন করছে এই সার। তারা পাইকারিভাবে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে এই কেঁচো সার। সার বিক্রির বাড়তি এই আয়ে গ্রামের পরিবারগুলো সচ্ছল হয়ে উঠছে।

গ্রামের কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেড় বছর আগে ওয়ার্ল্ড ভিশনের পক্ষ থেকে নাটুয়াপাড়া গ্রামের নারীদের কেঁচো সার উৎপাদনে যুক্ত করা হয়। প্রথমে মর্জিনা বেগম, সাজেদা আক্তার ও মিনারা খাতুনকে তিন দিনের প্রশিক্ষণ দেয় ওয়ার্ল্ড ভিশন। প্রশিক্ষণ শেষে বিনা মূল্যে প্রত্যেককে দেওয়া হয় ২০টি করে বিশেষ জাতের কেঁচো। সেই থেকেই শুরু। দেড় বছরে গ্রামের মোট ৬০টি পরিবারের মধ্যে প্রায় সব পরিবারই কেঁচো সার উৎপাদন করছে।

গত বৃহস্পতিবার নাটুয়াপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যেকেই নিজের বাড়ির আঙিনায় কেঁচো সার উৎপাদন করছে। বসতঘর বা রান্না ঘরের পাশে ছোট মাচা তৈরি করে সেখানে প্লাস্টিকের বড় বড় বল বসিয়ে তাতে গোবর আর কেঁচোর সংমিশ্রণ করে সংরক্ষণ করে নারীরা কাজটি করছে। প্রথমে কাজ শুরু করা মিনারা খাতুন বলেন, ‘কাজটি কঠিন কিছু নয়। গোবর শুকিয়ে তা ঠান্ডা করে তাতে কেঁচো ছেড়ে দিই। প্রতিদিন নিয়ম করে একবার হাতে ঝুরঝুরে করে দিতে হয়। এভাবে রাখলে আনুমানিক ১৫ দিনের মধ্যে সার উৎপাদন হয়।’

মর্জিনা আক্তার বলেন, ‘আমার সংসারে আমি আর মেয়ে। খুব কষ্টে দিন কাটত। কেঁচো সার আমার সংসারে অভাব দূর করেছে। মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। আমি খুব সহজে তার পড়ার খরচ দিতে পারছি। কাজটি শুরু করার সময় গ্রামের মানুষ কিছুটা অবহেলা করত। কেঁচো হাতে ধরি বলে প্রতিবেশীরা অনেকেই বলত, আমার হাতে কেউ কিছু খাবে না। কিন্তু এখন গ্রামের সবাই কেঁচো সার উৎপাদন করছে।’

কেঁচো সার উৎপাদন করা কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, ঘরের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি এই কাজটি করতে তাঁদের খুব বেশি বাড়তি সময় দিতে হয় না। অল্প সময়ের কাজটি করে তাঁরা পরিবারের জন্য বাড়তি আয় করতে পারছেন। এতে পরিবারগুলো সচ্ছল হয়ে উঠেছে। এমনকি যাঁদের নিজের গরু নেই তাঁরা মাঠ থেকে গোবর কুড়িয়ে এনে কেঁচো সার উৎপাদন করছে। গত এক মাসে গ্রামের নারীরা ৯০ হাজার টাকার সার বিক্রি করেছেন। পাশাপাশি নিজেদের কৃষিতেও এ সার ব্যবহার করছে পরিবারগুলো। ওয়ার্ল্ড ভিশন সার বিক্রিতেও সহযোগিতা করে। সম্প্রতি কেঁচো সারের খবর আশপাশের গ্রামগুলোতেই পৌঁছে গেছে। এ ছাড়া পাশের বরুকা গ্রাম থেকে কয়েকজন নারী এসে এই নাটুয়াপাড়া থেকে কেঁচো নিয়ে গেছে।

ওয়ার্ল্ড ভিশনের ফুলবাড়িয়া শাখার ব্যবস্থাপক জেমস বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা নাটুয়াপাড়া গ্রামের মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য সেখানে কেঁচো সার প্রকল্প করি। আগামী দিনেও নাটুয়াপাড়া গ্রামের নারীদের প্রতি আমাদের এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’