মন্ত্রিপুত্র যখন খুনের আসামি

মন্ত্রিপুত্র মোহিত উর রহমানের (ডানে) সঙ্গে একান্তে কথা বলছেন মো. সাজ্জাদ আলম ওরফে শেখ আজাদ।  ছবি: সংগৃহীত
মন্ত্রিপুত্র মোহিত উর রহমানের (ডানে) সঙ্গে একান্তে কথা বলছেন মো. সাজ্জাদ আলম ওরফে শেখ আজাদ। ছবি: সংগৃহীত
>

• আজাদকে হত্যা করা হয় প্রকাশ্যে
• এক মাস পর হাইকোর্টের নির্দেশে মামলা
• ধর্মমন্ত্রীর ছেলে আসামি, তাই পুলিশ নীরব
• গ্রেপ্তার নেই, বিচার নিয়ে অনিশ্চয়তা
• ময়মনসিংহে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব প্রকট
• দ্বন্দ্বের পরতে পরতে প্রতিশোধ, রক্তারক্তি

শহরের একটি দরজি দোকানের সহকারী ছিলেন মো. সাজ্জাদ আলম ওরফে শেখ আজাদ। পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে একসময় রাজনৈতিক সভা–সমাবেশে যাওয়া শুরু করেন। এরপর ১৮ বছরের ব্যবধানে হয়ে ওঠেন ময়মনসিংহ শহরের রাজনীতির একজন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তি। গত ২ এপ্রিল তিনি কয়েক হাজার কর্মী নিয়ে শহরে মিছিল বের করে সাড়া ফেলে দেন। সাদা পাঞ্জাবি পরে তিনি ছিলেন মিছিলের সামনে। পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর নামেও স্লোগান দিচ্ছিলেন কর্মীরা।

সেদিন বিশাল কর্মী বাহিনী নিয়ে মিছিল করার প্রায় চার মাস পর ৩১ জুলাই দিনদুপুরে খুন হন শেখ আজাদ। প্রথমে তাঁর হাত ও পায়ে গুলি, তারপর গলা কেটে হত্যা করা হয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে চিরে ফেলা হয় বুকের তিনটি স্থান। আজাদ ছিলেন যুবলীগের ময়মনসিংহ মহানগর শাখার আহ্বায়ক কমিটির একজন সদস্য। বয়স হয়েছিল ৩২। অষ্টম শ্রেণি শেষে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে দেন। এরপর ধীরে ধীরে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। আজাদের পরিবার বলছে, নিজের ‘সাম্রাজ্যের’ জন্য হুমকি মনে করে ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের ছেলে মোহিত উর রহমান ওরফে শান্তর নির্দেশে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। মোহিত উর ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

এই হত্যাকাণ্ডের পর মন্ত্রীর ছেলে মোহিত উর রহমানসহ ২৫ জনকে আসামি করে আজাদের স্ত্রী মামলা করতে গেলেও থানা মামলা নেয়নি। এক মাস পরে হাইকোর্টের নির্দেশে মামলা নেয় পুলিশ। তবে আসামিদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে পুলিশের কোনো উদ্যোগ নেই বলে আজাদের পরিবার অভিযোগ করেছে।

আজাদ হত্যার কারণ খুঁজতে গিয়ে ময়মনসিংহ আ. লীগের রাজনীতির একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন জগতের সন্ধান মেলে। এর মূলে রয়েছে রাজনৈতিক বিভক্তি। আর পরতে পরতে রয়েছে ক্ষমতা প্রদর্শন, প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা, চাঁদাবাজি, দখলদারত্ব আর রক্তারক্তি। এই চক্রের প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছেন মোহিত উর রহমানের অনুসারীরা। অন্যদিকে রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিতে এখানে ৮–১০ বছর ধরে সক্রিয় রয়েছে আরেকটি পক্ষ। এই পক্ষের প্রতিনিধিত্ব করছেন পৌর মেয়র ইকরামুল হক।

ময়মনসিংহের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আনন্দমোহন কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক ভিপি অধ্যক্ষ গোলাম ফেরদৌস জিলু বলেন, এখানে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বটা প্রকট। আগে রয়ে–সয়ে ছিল দুই পক্ষ। এখন মুখোমুখি। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগের রাজনীতির পুরো চিত্র উঠে আসে আজাদের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া এবং তাঁর নৃশংস খুনের ঘটনার মধ্য দিয়ে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এখানে বিদ্যমান দুটি পক্ষের হয়েই তিনি রাজনীতি করেছেন। রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি হয়েছিল ধর্মমন্ত্রীর ভাই আফাজ সরকারের হাত ধরে। একপর্যায়ে সম্পর্কের অবনতি হলে তাঁকে কাছে ডেকে নেন তাঁরই ভাতিজা মোহিত উর রহমান। আর খুন হওয়ার পাঁচ মাস আগে তিনি ভিড়েছিলেন মেয়রের দিকে। আজাদের পরিবার বলছে, সর্বশেষ গ্রুপ পরিবর্তনটাই তাঁর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।

নেতা আজাদ ও তাঁর অপরাধে জড়িয়ে পড়া
আজাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা শহরের অন্যতম অপরাধপ্রবণ এলাকা আকুয়ার মোড়লপাড়ায়। ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের পৈতৃক বাড়ি এখানে। এখানকার রাজনীতির নিয়ন্ত্রকও মতিউর রহমানরা। তাঁর ভাই আফাজ উদ্দিন সরকার (৫৬) গত ২৭ মে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত আকুয়া ৮ নম্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।

আজাদের ভাই শামীম শেখ বলেন, পাড়ার সমবয়সী ছেলেদের দেখে আজাদও ওদের সঙ্গে সভা–মিছিলে যাওয়া শুরু করেন। আজাদ একসময় আফাজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ফুট–ফরমাশ খাটতেন। আফাজ তাঁকে স্নেহ করতেন। তারপর ধীরে ধীরে তাঁকে দিয়ে বিভিন্ন কাজে করাতে শুরু করেন।

আকুয়ার বাসিন্দারা বলেছেন, আফাজের পছন্দের ব্যক্তি হওয়ায় ঘনবসতিপূর্ণ আকুয়া এলাকার তরুণেরা আজাদের দিকে ভিড়তে থাকেন। কিছুদিনের মধ্যেই একটি ছোটখাটো বাহিনীর প্রধান হয়ে যান। সাজ্জাদ আলম থেকে তাঁর নাম সংক্ষেপে হয়ে যায় আজাদ শেখ। এই বাহিনী নিয়েই একসময় প্রতিপক্ষকে মারধর করা, বিরোধপূর্ণ জমি দখল আর চাঁদা আদায় করার কাজ শুরু করেন তিনি।

মোহিতের পক্ষে গেলেন, পেলেন রাজনৈতিক পদবি
আজাদের মা সুফিয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক রেষারেষির জের ধরে আফাজের নির্দেশে জাতীয় পার্টির ময়মনসিংহ জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক ও আকুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এম রমজান আলী রঞ্জুকে ৮–১০ বছর আগে কুপিয়েছিলেন আজাদ ও তাঁর অনুসারীরা। এরপর আফাজ জাতীয় পার্টির স্থানীয় এক নেতার ছেলেকে খুন করার নির্দেশ দেন আজাদকে। কিন্তু পরিবারের আপত্তিতে সেই নির্দেশ না মানায় আজাদকে দল থেকে বের করে দেওয়া হয়।

স্থানীয় লোকজন জানান, আফাজের দল থেকে বের হওয়ার পর মোহিত তাঁকে কাছে টেনে নেন। তখন আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন আজাদ। এলাকায় নিজস্ব কার্যালয় খুলে বসেন। আকুয়া এলাকায় তাকে চাঁদা না দিয়ে কেউ বাড়ি পর্যন্ত বানাতে পারতেন না। অত্যন্ত কাছের হওয়া মোহিত তখন তাঁকে যুবলীগে পদবি পাইয়ে দেন।

মোহিত উর রহমানের পক্ষ হয়ে আজাদ কী কাজ করতেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তাঁর মা ও স্ত্রী বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে আজাদের অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন তাঁর ভাগনে আলম শেখ ও কর্মী শেখ সাব্বির। আলম শেখ প্রথম আলোকে বলেন, কোথাও মারামারি করতে হলে তাঁদের ডাকা হতো। শেখ সাব্বির বলেন, ‘কারও জমির কাগজপত্র ঠিক নেই কিন্তু দখল করে রাখসে। ভাইয়ে (মোহিত) পাঠাইসে। আমরা দখল করে নিসি।’

বিরোধ বাধল মোহিতের সঙ্গে
আজাদের পরিবার ও তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোহিতের সঙ্গে আজাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে ২০১৭ সালের শেষ দিক থেকে। এর কারণ হিসেবে আজাদের স্ত্রীর ভাষ্য এমন, ‘আজাদ প্রায়ই বলত, শান্ত ভাই আমারে খালি মাদকের ব্যবসা করতে কয় কিন্তু আমি করুম না। ভাইয়ে এইডা মানে না।’

তবে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা যায়, আজাদের সঙ্গে মোহিতের দূরত্ব সৃষ্টি হয় মূলত ময়মনসিংহের সুতিয়াখালীর একটি জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে। একটি বেসরকারি সৌরবিদ্যুৎ কোম্পানি তাদের কারখানা স্থাপনের জন্য ২০০ একরের মতো জায়গা কেনার কাজ শুরু করে। এর মধ্যে ৩৪ দশমিক ৯৬ একর জায়গা ছিল আজাদের পরিচিত মুরশেদ আলী নামের এক ব্যক্তির। ন্যায্য দাম পাওয়ার জন্য তিনি আজাদের শরণাপন্ন হলে মোহিতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হন। কিন্তু দেন–দরবারের একপর্যায়ে ওই কোম্পানি জায়গাটি নিয়ে নিলেও মুরশেদ কোনো টাকাই পাননি। আজাদ এ বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে মুরশেদের পক্ষ নিলে মোহিত তাঁর ওপর রুষ্ট হন।

মুরশেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, জায়গা নিয়ে যখন ঝামেলা হচ্ছিল তখন মোহিতের উপস্থিতিতে ঢাকার গুলশানের একটি বাসায় কোম্পানির হর্তাকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তাঁরা। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় তাঁকে তিন কোটি টাকা দেওয়া হবে। টাকাটি মোহিতের মাধ্যম হয়ে আসবে। কিন্তু সেই টাকা তিনি আর পাননি। বরং মোহিত তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের দিয়ে জায়গাটি দখল করে দেন। পুরো ঘটনাটি লিখিতভাবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে জানিয়েছেন, কিন্তু কোথাও সমাধান পাননি।

মুরশেদের এ কথার সত্যতা মেলে আজাদের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে। তাঁরা বলেন, এ বছরের ১৬ মার্চ মোহিতের অনুসারীরা জায়গাটি দখলে নেন। এর আগে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কে তাঁরা জড়ো হয়েছিলেন। আজাদও গিয়েছিলেন সেখানে। মোহিত তখন আজাদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন। নিজের কর্মীদের সামনে তাঁকে যা–তা বলেন। ওই দিনের একটি ছবিতে দেখা যায়, মোহিত গাড়িতে উঠে সামনের সিটে বসেছেন আর গাড়ির দরজা ধরে আজাদ তাঁকে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন।
আজাদের ভাগনে আলম শেখ বলেন, সেদিনের পর থেকে আজাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখেননি মোহিত। আজাদও আর নিজ থেকে এগিয়ে যাননি।

মেয়রের পক্ষে গেলেন আজাদ
মোহিত উর রহমানের সঙ্গে বিরোধ শুরু হওয়ার পর থেকেই আজাদ রাজনীতিতে পক্ষ পরিবর্তনের কথা ভাবতে শুরু করেন। আজাদের ছোট বোন আনজুমান হাসিনা প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আজাদ পরিবারের সবাইকে নিয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বেড়াতে যান। সেখানে তিনি জানান মোহিতের সঙ্গে আর রাজনীতি করবেন না। তিনি মেয়রের পক্ষে যাবেন।

আজাদের অনুসারী শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একদিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে আমরা মেয়রের বাসায় গিয়ে কথা বলি। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনও ছিলেন। তাঁদের হয়ে রাজনীতি করার কথা বলি। তাঁরা রাজি হন। কিন্তু হাবভাবে মনে হয় আস্থায় নিতে পারেননি।’

আজাদের অনুসারীরা জানান, মেয়রের আস্থা অর্জনের জন্যই ২ এপ্রিল আজাদ তাঁর সব কর্মী নিয়ে মিছিল বের করেন। ওই দিন নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে ময়মনসিংহ পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীতকরণ প্রস্তাব অনুমোদন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে আনন্দ মিছিল বের করা হয়েছিল। পৌর মেয়র ইকরামুল হক ও মোহিত উর রহমান আলাদা মিছিল বের করেন। আজাদের মিছিলটি যোগ দেয় ইকরামুল হকের মিছিলে। নিজের এলাকা থেকে বের হওয়া মিছিল প্রতিপক্ষের মিছিলে যোগ দেওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে নেননি মোহিত। এরপর থেকেই নানাভাবে হুমকি দেওয়া শুরু করেন আজাদের অনুসারীদের। এ পরিস্থিতিতে আজাদের দলেও ভাঙন ধরে। কিছু জ্যেষ্ঠ কর্মী চলে যান মোহিতের পক্ষে। আজাদ হত্যাকাণ্ডে এদেরই একটি পক্ষ সরাসরি অংশ নেয় বলে তাঁর অনুসারীদের দাবি।

দুই পক্ষ মুখোমুখি
মিছিল নিয়ে আজাদের এই প্রকাশ্য পক্ষাবলম্বনের পর আকুয়া এলাকায় দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায়। মোহিতের পক্ষের লোকজন একদিন আজাদের শাশুড়ির বাড়ি ও দোকানে আগুন লাগিয়ে দেন। এর জের ধরে ১৭ জুন দুপুরে আজাদের অনুসারীরা মোহিতের চাচা আফাজ উদ্দিনের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান। ওই দিন সন্ধ্যায় মোহিতের অনুসারীরাও আজাদের কার্যালয়ে ভাঙচুর করেন। পরদিন আবার এসে তাঁরা ওই কার্যালয় পুড়িয়ে দেন। এরপর থেকে ওই এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুই পক্ষই নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য প্রায় প্রতিদিনই ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকেন।

আজাদের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে শান্ত (মোহিত উর) আজাদের ফোনে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন দেয়। ফোন ধরে শান্তর কণ্ঠ শুনে আজাদ ফোন লাউডে দেয়। শান্তকে তখন তিনি বলতে শোনেন, “তোর কইলজাটা তো অনেক বড়। তুই আমগো আকুয়া এলাকা থেকে মেয়রের প্রোগ্রাম বের করোস। তোর কইলজা কম বড় হইসে না। তোর কইলজা ছিঁড়ে আমি দেখবাম। ” আজাদ তখন বলে, ভাই রাখে আল্লা মারে কে। আপনি যদি পান তাহলে আমার কইলজা ছিঁড়ে দেইখেন। শান্ত তখন বলে, আচ্ছা রাইখা দিলাম, কথাটা যেন মনে থাকে।’

বিচার নিয়ে অনিশ্চয়তা
আজাদের খুনের ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ২৩ দিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এ ঘটনায় জড়িত কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। বরং আজাদের স্ত্রী তাঁর স্বামীর বিচারের দাবি করে দেওয়া একটি বক্তব্যে ধর্মমন্ত্রীকে ‘রাজাকার’ সম্বোধন করেছেন এমন অভিযোগে ময়মনসিংহ, জামালপুর, টাঙ্গাইল ও শেরপুরে আজাদের স্ত্রীসহ তাঁর পরিবারের নয়জনকে আসামি করে মানহানি মামলা করা হয়েছে।

আজাদের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার বলছিলেন, তাঁর স্বামীকে যারা প্রকাশ্যে খুন করল, মামলা হওয়ার পরও তাদের কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করল না। অথচ মানহানি মামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো। ধর্মমন্ত্রীর ছেলে আসামি হওয়ায় পুলিশ আসামিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

মামলার অগগ্রতির বিষয়ে জানতে চাইলে ময়নসিংহের সার্কেল এসপি আল-আমিন প্রথম আলোকে বলেন, এক মাস পরে মামলা হওয়ায় আসামিদের অবস্থান এরই মধ্যে পরিবর্তন হয়েছে। তাদের কল রেকর্ড ধরে অবস্থান শনাক্ত হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তবে আজাদের পরিবার ও তাঁর অনুসারীরা বলছেন, অভিযুক্ত সব আসামি ময়মনসিংহ শহরেই আছেন। ফেসবুকের একটি গ্রুপ থেকে তাঁদের নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশও তাঁদের অবস্থান জানে। কিন্তু গ্রেপ্তার করছে না।

মন্ত্রী যা বললেন
আজাদকে খুনের মামলার প্রধান আসামি ধর্মমন্ত্রীর ছেলে মোহিত উর রহমান এখন সিঙ্গাপুরে। তাই অভিযোগের বিষয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের দাবি, তাঁর ছেলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নষ্ট করার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, সহসভাপতি আমিনুল হক শামীম ও তাঁর ভাই পৌর মেয়র ইকরামুল হক পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, আজাদ তাঁদের পরিবারের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করায় মোহিত উর তাঁকে অনেক আগেই কাছে আসতে মানা করে দিয়েছিলেন।

কিন্তু তাঁর ভাই আফাজ সরকারের হাত ধরে আজাদের রাজনীতিতে আসা এবং এরপর আজাদকে দিয়ে তাঁর ছেলের বিভিন্ন অপকর্ম করানোর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্মমন্ত্রী বলেন, বিষয়গুলো তাঁর জানা নেই।

ধর্মমন্ত্রীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইকরামুল হক বলেন, আজাদ মহানগর যুবলীগের অন্যতম সদস্য ছিলেন। যেহেতু দলের একজন নেতাকে প্রকাশ্যে খুন করা হয়েছে, তাই তাঁরা এর বিচার দাবি করেছেন। আজাদের স্ত্রী নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছেন এবং সেখানে জড়িত ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করেছেন। এখানে কোনো রাজনীতি বা ষড়যন্ত্র নেই।