নেতা ছাড়া কী আন্দোলন হবে? - কাদের

নিজ এলাকায় প্রথম নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতা করেন ওবায়দুল কাদের। চরকাঁকড়া ইউনিয়ন, কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী। ছবি: মাহবুবুর রহমান
নিজ এলাকায় প্রথম নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতা করেন ওবায়দুল কাদের। চরকাঁকড়া ইউনিয়ন, কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী। ছবি: মাহবুবুর রহমান

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার পাঁচমিশালী নেতৃত্বে জনগণের কোনো আস্থা নেই। এই যে ১০ দল, ২০ দল, ৩০ দল, তাদের নেতা কে? নেতৃত্ব দেবে কে? এটা জনগণ জানতে চায়, নেতা ছাড়া কি কোনো আন্দোলন হবে?’

আজ মঙ্গলবার সকালে ওবায়দুর কাদের কবিরহাট উপজেলার কালামুন্সী বাজারে নির্বাচনী এক প্রস্তুতি সভা করেন। সেখানে তিনি সরকারবিরোধীদের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন।

এরপর দুপুরে নিজ নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালী-৫ আসনের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া নতুন বাজার উচ্চবিদ্যালয়ে প্রথম নির্বাচনী জনসভায় কাদের বলেন, ‘বিএনপি কেবল বলে কোরবানির ঈদের পর, রোজার ঈদের পর আন্দোলন। এভাবে এ পর্যন্ত ১০ বছরে ২০টি ঈদ চলে গেছে। দেখতে দেখতে ১০ বছর কেটে গেছে। আন্দোলন কোন বছর হবে। আর এক মাস পর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। মওদুদ সাহেব আন্দোলনের কথা বলেন।’

ওবায়দুল কাদের খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘এই ভদ্র মহিলা এত নেতা বানাইছেন, এত মন্ত্রী বানাইছেন। মওদুদ সাহেবরা মন্ত্রী হইছেন, বেগম জিয়া কারাগারে একটা নেতাও বাহির হননি। নেতারা কর্মীদের রাস্তার বের হতে বলেছেন। নেতারা না নামলে কি কর্মী নামে? নেতারা রুমে বসে এসির মধ্যে হিন্দি সিরিয়াল দেখছেন। বেগম জিয়ার জন্য আন্দোলন করার মতো ৫০০ লোকও তাঁরা পায়নি।’

কাদের বলেন, ‘বিএনপির নাম এখন বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। খালি নালিশ করে। নালিশ দেশে করে না, বিদেশিদের কাছে করে। নালিশ করতে করতে শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘে গেছে। সেখানে বলে মহাসচিব নাকি দাওয়াত করেছেন। পরে দেখা গেল ভুয়া, ভুয়া, ভুয়া। কোনো দাওয়াত নাই।’

নিজের নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা বলতে গিয়ে কাদের বলেন, ‘আজকে কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট উপজেলার মা–বোনেরা ঘরে বসে বিদ্যুতের আলো, বিদ্যুতের সাহায্যে টেলিভিশনে খেলা, ভারতীয় সিরিয়াল দেখেন, মুঠোফোনে কথা বলেন, এসবই এই সরকারের অবদান।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছে বলে আজ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে, গ্যাসও পৌঁছাবে। ইতিমধ্যে গ্যাসের সার্ভে হচ্ছে। সহসা আপনারা গ্যাসও পাবেন। আমি সেই কথা বলি, যে কথা রাখতে পারি। নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনলে আরও বেশি উন্নয়ন হবে। নির্বাচনী এলাকার প্রধান সড়ক চার লেনসহ নতুন করে সাজিয়ে তোলা হবে।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট আমার জন্মস্থান। আল্লাহ আমাকে অনেক বড় করেছেন। বড় মন্ত্রী হয়েছি। অনেকে অনেক কিছু হয়েছি। মন্ত্রী হওয়া বড় কথা নয়, আজকে আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় পার্টির নেত্রী শেখ হাসিনার পর দ্বিতীয় ব্যক্তি হয়েছি। চট্টগ্রাম বিভাগের ইতিহাসে কেউ আওয়ামী লীগের মতো পার্টির সেক্রেটারি হতে পারেননি। আল্লাহ আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন।’

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনার মন আকাশের মতো উদার। শেখ হাসিনা আমাকে তাঁর দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি করেছেন। এই সম্মান আমার একার নয়, আমার এলাকার জনগণ হিসেবে আপনাদের। আপনারা যাঁরা আমাকে নির্বাচিত করেছেন। এমপি হয়েছি বলে মন্ত্রী হয়েছি। মন্ত্রী হয়েছি বলে আজকে আওয়ামী লীগের মতো পার্টির সাধারণ সম্পাদক হয়েছি।’

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকে আপনারা বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযুদ্ধ ভাতা, মাতৃকালীন ভাতা, বিদ্যুৎ রাস্তাঘাট সবই পাচ্ছেন। আজকে আমার এলাকার এমন কোনো রাস্তা নেই, যেটির উন্নয়ন হয়নি। প্রতিটি স্কুল-কলেজের নতুন নতুন ভবন হয়েছে। আজকে চরাঞ্চলের রাস্তাঘাটও আমরা পাকা করেছি।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা, চট্টগ্রামে গেলে চার লেনের রাস্তা পাবেন। আগামীতে ক্ষমতায় এলে এলাকার প্রধান সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা হবে। শেখ হাসিনার মডেলে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হবে। একটি স্টেডিয়ামের কাজও শিগগিরই শুরু হবে। শেখ রাসেল স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে।’

মওদুদের সমালোচনা

ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ ও বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, ‘বিএনপি আপনাদের কী দিয়েছে? মওদুদ সাহেব এমন কোনো কাজ করেছেন, যা আপনার দেখাতে পারবেন, যার কারণে আপনারা বিএনপিকে ভোট দেবেন।’ তিনি বলেন, ‘আজকেও আমি বসুরহাটে কর্মজীবী ৭০ জন নারীর মাঝে ৬০ লাখ টাকা শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দিয়ে এসেছি।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মওদুদ আহমদ আজকে গণতন্ত্রের জন্য কাঁদেন। অথচ নিজে যখন ভোট করেছেন, তখন বসুরহাটে বাংলোতে বসে বলেছেন, ভাত ছিটাইলে কাকের অভাব নাই।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন? ‘আপনারা কি কাক। তিনি ভোট এলে রাস্তায় ইট বসাতেন, ভোট না দিলে খুলে নিতেন।’ মওদুদ আহমদ কয়েক দিন পর পর বাড়িতে নাটক করেন উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘কয়দিন পর পরই তিনি বাড়িতে আসেন নাটক করতে। বিএনপির কর্মীদের কষ্ট দেওয়ার জন্য। তিনি এলে মামলার আসামিরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসে। আর পুলিশ আসামি পেলে ধরে। তখন বলেন তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আসলে তিনি নিজেই নিজেকে অবরুদ্ধ করে রেখে নাটক সাজান।’

মওদুদকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘মওদুদ সাহেব ২২ বছর রাজত্ব করেছেন। আপনার বেইল শেষ হয়ে গেছে। বিএনপি কয়দিন পরই বলে আন্দোলন। মওদুদ সাহেব বলে এক মাসের মধ্যে দেশের চেহারা বদলে যাবে। মওদুদ সাহেব ২০০৮ সাল বাংলাদেশে আর ফিরে আসবে না। আমার এলাকার ৫ হাজার নেতা-কর্মী এলাকায় থাকতে পারেনি। পুকুরের মাছ লুট করে নিয়ে গেছেন। ছেলেকে বাবার জানাজা পড়তে দেননি। ঈদের নামাজ পড়তে দেওয়া হয়নি।’