২০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ চালু হলো টেকনাফে

নাফ নদীর তীরে লবণ মাঠে সারি সারি ভাবে বসানো হয়েছে সৌর প্যানেল। প্রথমবারের মতো দেশের সর্ববৃহৎ ২০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে টেকনাফের হ্নীলায়। ছবি: টেকনাফ সোলারটেক এনাজি লিমিটেড
নাফ নদীর তীরে লবণ মাঠে সারি সারি ভাবে বসানো হয়েছে সৌর প্যানেল। প্রথমবারের মতো দেশের সর্ববৃহৎ ২০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে টেকনাফের হ্নীলায়। ছবি: টেকনাফ সোলারটেক এনাজি লিমিটেড

নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমার আর এপারে বাংলাদেশ। নদীর তীরে লবণমাঠে সারি সারি বসানো সৌর প্যানেল। এসব প্যানেল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়ে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে । এ মাঠে ২০ বছর আগেও উৎপাদিত হতো লবণ। সৌরবিদ্যুতের সুফল পাচ্ছে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার ৪০ হাজারের বেশি গ্রাহক। এখন আগের মতো ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে না। এত বড় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প দেশে আর কোথাও নেই। দেশের সর্ববৃহৎ ২০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ চালু হলো টেকনাফে।

কাজটি বাস্তবায়ন করেছে জুলস পাওয়ার লিমিটেড (জেপিএল)। উপজেলার গ্রাহকের চাহিদার ৮০ শতাংশই সরবরাহ হচ্ছে এ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে।
উপজেলার হ্নীলার আলীখালীতে ১১৬ একর জমিতে ২০ মেগাওয়াটের সোলার বিদ্যুৎ প্রকল্পটি স্থাপন করা হয়েছে।


জুলস পাওয়ার লিমিটেড ও টেকনাফ সোলারটেক এনার্জি লিমিটেডের পরিচালক নোহর লতিফ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে এ সোলার থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।’

টেকনাফ পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলায় ৪০ হাজার বিদ্যুতের গ্রাহক আছে। এর মধ্যে টেকনাফে দৈনিক ১১ মেগাওয়াট চাহিদা রয়েছে। সোলারটেক থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ স্থানীয়ভাবে চাহিদা পূরণ করে পার্শ্ববর্তী উখিয়া উপজেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।


বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, নাফ নদীর তীরে সারি সারি করে বসানো হয়েছে ৮৭ হাজার সৌর প্যানেল। প্যানেলগুলোর মাঝখানে রয়েছে পাঁচটি সাব-স্টেশন। একই সঙ্গে প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে কয়েকটি সড়কও। এসব প্যানেল থেকে উৎপাদিত ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রথমে মূল স্টেশনে রাখা হয়। পরে হ্নীলার লেদার পল্লী বিদ্যুতের সাব-স্টেশনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।

লবণ মাঠে সারি সারি সৌর প্যানেল। ছবি: গিয়াস উদ্দিন
লবণ মাঠে সারি সারি সৌর প্যানেল। ছবি: গিয়াস উদ্দিন

জানা গেছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্প। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি), টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) এবং ব্যক্তিখাতের বিভিন্ন কোম্পানির আওতায় নির্মাণাধীন রয়েছে ৩৪টির মতো সোলার পার্ক বা সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প। টেকনাফের হ্নীলার আলীখালী এলাকায় যুক্তরাজ্যের প্রোইনসোর সঙ্গে যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জুলস পাওয়ার লিমিটেড। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহায়তা দিয়েছে টেকনাফ সোলারটেক এনার্জি লিমিটেড (টিসিইএল)।

টেকনাফ সোলারটেক এনার্জি লিমিটেডের (সিএফও) মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সোলারটেক প্রথম প্রকল্প হিসেবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাস্তবায়নে অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালার জটিলতাসহ নানা সমস্যা ছিল। তবে সরকারের আন্তরিকতায় প্রকল্পটি দ্রুততার সঙ্গেই শেষ করা গেছে।

মাহমুদুল হাসান বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি জেপিএলের সঙ্গে বিপিডিবির চুক্তি হয়। এর মাত্র ১৮ মাসের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন হয়। দেশের প্রথম সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে গত বৃহস্পতিবার থেকে উৎপাদন শুরু করেছে । বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ কিনে জাতীয় সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে সরবরাহ করছে।

বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে নেওয়া। এ লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
তবে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বেশকিছু প্রতিকূলতার কথা জানান নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘বছরের সাত মাস এখানে আলো পাওয়া সম্ভব হয় না। আবার সৌর প্যানেলের জন্য বিশাল এলাকা নষ্ট হয়। তবে সব প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা কাজ করছি।’


জানতে চাইলে টেকনাফ পল্লী বিদ্যুতের জোনাল কর্মকর্তা মিনারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে তারা প্রথমবারের মতো জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দেওয়া শুরু করেছে। এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে হবে। তিনি বলেন, ‘লো-ভোল্টেজের কারণে আগে ঘন ঘন লোডশেডিং করতে হতো টেকনাফে। এখন সোলারটেকের এ প্রকল্পটি চালু হওয়ায় আর তেমন সমস্যা পোহাতে হবে না স্থানীয় গ্রাহকদের।’