রোগীদের আস্থা কুড়াচ্ছে ভাসমান হাসপাতাল

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার গুদারাঘাট এলাকায় ভাসমান হাসপাতাল ‘জীবন তরী’।  প্রথম আলো
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার গুদারাঘাট এলাকায় ভাসমান হাসপাতাল ‘জীবন তরী’। প্রথম আলো

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার ফুলদি গ্রামের মনজুর আলমের ডান চোখে ছানি। বেশ কয়েক জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন। পুরোপুরি ভালো হয়নি। কিছুদিন আগে ভাসমান হাসপাতালে চোখে অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। এখন তাঁর চোখে সমস্যা নেই। মনজুরের মতো অনেকেই এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ আছেন।

হাসপাতালটি কালীগঞ্জ উপজেলার গুদারাঘাট এলাকায়। শীতলক্ষ্যা নদীতে ‘জীবন তরী’ নামে ভাসমান একটি  জলযান থেকে আড়াই মাস ধরে এলাকার বাসিন্দাদের স্বল্প খরচে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি সংস্থা ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের পরিচালনাধীন হাসপাতালটি শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নোঙর করে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। গত ৩০ জুন হাসপাতালটি সেখানে নোঙর করে। ৭ জুলাই থেকে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। নাক, কান, গলা ও চক্ষুরোগীদের চিকিৎসা ও বিশেষজ্ঞ সার্জন দিয়ে অস্ত্রোপচার এবং হাড়জোড়া, হাড়ভাঙা, পঙ্গু, জন্মগত ঠোঁটকাটা-তালুকাটা রোগীদের চিকিৎসা, প্লাস্টিক সার্জারিসহ অন্যান্য চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভাসমান হাসপাতালে প্রতিদিনই দেড় শতাধিক দরিদ্র নারী-পুরুষ ও শিশু দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসে। চিকিৎসক দল যত্নের সঙ্গে সেবা দিচ্ছে। চিকিৎসা নিতে আসা এসব সুবিধাবঞ্চিত রোগী চিকিৎসকদের সেবায় মুগ্ধ। চিকিৎসা নিতে আসা একজন রোগী বলেন, ‘মানুষ হাসপাতালে যায় চিকিৎসা নিতে, কিন্তু হাসপাতাল রোগীর বাড়ির ঘাটে আসে, তা আগে দেখিনি। দেখলাম, চিকিৎসা নিলাম। সবকিছুই ভালো লেগেছে।’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতালটি ১২ শয্যার। চিকিৎসক তিনজন। এর মধ্যে একজন নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ, একজন চোখের, একজন অর্থোপেডিকসের। চারজন নার্স, দুজন কর্মকর্তাসহ মোট ৩৫ জন জনবল আছে হাসপাতালে। মুমূর্ষু রোগীদের আনা-নেওয়ার জন্য স্পিডবোট আছে দুটি। এখানে নিয়মিত এক্স-রে, রক্তসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করার ব্যবস্থা আছে। হাসপাতালটিতে স্বল্পমূল্যে চক্ষু রোগের চিকিৎসা করা হয়। লেন্স সংযোজনের মাধ্যমে চোখের ছানি অস্ত্রোপচার করা হয়। ভাসমান হাসপাতালে ফ্যাকো সার্জারিরও ব্যবস্থা আছে। পঙ্গু রোগীদের সহায়ক সামগ্রী প্রদান করা হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বাইরের একটি ঘর থেকে রোগীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ৫০ টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন। আবার সারিতে দাঁড়িয়ে ভাসমান হাসপাতালের সিঁড়ি দিয়ে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, অন্য হাসপাতালের মতো এখানে স্বল্প পরিসরে সবই আছে। অপারেশন থিয়েটার, পোস্ট অপারেটিভ রুম, রোগীদের শয্যাসহ অন্যান্য সুবিধা আছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রচলিত নেতিবাচক ধ্যানধারণার বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ইমাম, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও  ধাত্রীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।

হাসপাতালের প্রশাসক মো. আলাউদ্দিন জানান, এ পর্যন্ত ভাসমান হাসপাতালটিতে স্বল্পমূল্যে প্রায় ২০ হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। চক্ষুরোগ, ইএনটি, অর্থোপেডিক ও ঠোঁটকাটা রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ভাসমান এই হাসপাতালে সরকারি ছুটি ও শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এখানে আরও তিন মাস হাসপাতালের কার্যক্রম চলবে।