জাপাকে 'ছাড়' দিতে নারাজ আ.লীগ

যখন যে দলের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, সেই দলই তখন ক্ষমতার স্বাদ নিয়েছে। গত ৯টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এটাই ঘটেছে পটুয়াখালী-১ আসনে। আবার আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি—তিন দলেই বড় নেতারা এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. শাহজাহান মিয়া। তাঁর বিপরীতে আধা ডজনের বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী দাঁড়িয়ে গেছেন। তা ছাড়া এ আসনের বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে তিনিই আবার মনোনয়ন পেতে পারেন, এমন শঙ্কায় আছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

সে তুলনায় অনেকটা সুবিধাজনক স্থানে আছে বিএনপি। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর পেছনে এককাট্টা দল। অবশ্য তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন বিএনপির বহিষ্কৃত এক নেতা।

১৯৭৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মোট ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাদ দিলে থাকে ৮টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ চারবার এবং বিএনপি ও জাতীয় পার্টি দুবার পটুয়াখালী-১ আসনে নির্বাচিত হয়েছে। আর ১৯৭৯ সালের নির্বাচন বাদ দিলে ৯টি নির্বাচনেই পটুয়াখালী-১ আসনে যে দলের প্রার্থী জিতেছেন, সেই দল সরকার গঠন করে। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে জিতেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। সরকার গঠন করেছিল বিএনপি।

আওয়ামী লীগে আটজন
এ আসনে ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে দুবার জিতে সাংসদ হয়েছেন মো. শাহজাহান মিয়া। তিনি পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০০৮ সালে সাংসদ হওয়ার পর ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান শাহজাহান মিয়া।

শাহজাহান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে আমি বিএনপির প্রার্থী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ চৌধুরীকে হারিয়ে আসনটি পুনরুদ্ধার করেছিলাম। পরে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করেছি। গত পাঁচ বছর এখানে আওয়ামী লীগের সাংসদ নেই। এরপরও আমি তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করে সংগঠনকে শক্তিশালী করেছি। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব।’

শাহজাহান মিয়া ছাড়াও শক্তভাবে প্রচারণার মাঠে রয়েছেন আফজাল হোসেন। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক।

আফজাল হোসেন ঢাকায় থাকেন। তবে নিজেকে দলের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে প্রতি মাসেই এলাকায় আসছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে মতবিনিময় করছেন। এ সময় নিজেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে ঘোষণা দিচ্ছেন। আফজাল হোসেন এলাকায় দলীয় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডেও অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকায় আফজাল হোসেনের পক্ষে ভোটারদের শুভেচ্ছাসহ নৌকায় ভোট চেয়ে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আরও আছেন পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম, সদস্য ও সাবেক সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ মৃধা, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হারুন-অর-রশিদ হাওলাদার, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্থপতি নিখিল চন্দ্র গুহ, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক মোহাম্মদ আলী আশরাফ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটির সহসম্পাদক মো. রাজীব পারভেজ। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ঈদ-কোরবানিসহ বিভিন্ন দিবসে পোস্টার–ব্যানার দিয়ে শুভেচ্ছাসহ নৌকায় ভোট চেয়ে নিজেদের প্রার্থী হওয়ার আগাম জানান দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ, না জাপা?
২০১৪ সালের নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন শাহজাহান মিয়া। কিন্তু পরে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। ওই নির্বাচন জোটগতভাবে না হলেও মহাজোটের শরিক জাপার প্রার্থী এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে জয়ী করতেই ওই সিদ্ধান্ত নেন তিনি? কিন্তু এবার আসনটি ছাড়তে নারাজ আওয়ামী লীগ।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা আফজাল হোসেন বলেন, ‘গত নির্বাচনে আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় দলীয়ভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই এলাকার ব্যাপক উন্নয়নকাজ করছেন। আমাদের এই তথ্য মানুষের মাঝে পৌঁছে দিতে হবে। এ কারণেই এই আসনটি আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

এলাকায় আসেননি, প্রচারণায়ও অংশ নেননি। এরপরও ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হন জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। তিনি পান ৭৯ হাজার ২০৩ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের নেতা শফিকুল ইসলাম।

জানতে চাইলে রুহুল আমিন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, গত পাঁচ বছরে এলাকার লোকজনকে চাঁদাবাজি, অত্যাচার, জুলুমের শিকার হতে হয়নি। দল-মতনির্বিশেষে সবাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে ছিলেন। এলাকার ভোটাররাও তাঁকে এই আসন থেকে নির্বাচন করতে বলছেন। তারপরও যদি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন হয়, তাহলে জোটের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

বিএনপিতে আলতাফের সামনে স্নেহাংশু
২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাংসদ হন বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান আলতাফ হোসেন চৌধুরী। বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান মিয়ার কাছে হেরে যান আলতাফ। আসনটি পুনরুদ্ধার করতে এবারও মনোনয়ন চাইবেন তিনি।

মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে আলতাফ হোসেন চৌধুরী ‘ব্যস্ত আছি, এ বিষয়ে পরে কথা বলব’ বলে সংযোগ কেটে দেন। পরে তিনি আর ফোন ধরেননি।

এদিকে ২০০২ সালে জেলা বিএনপির সম্মেলনে আলতাফ চৌধুরীকে সভাপতি এবং¯ স্নেহাংশু সরকারকে (কুট্টি) সাধারণ সম্পাদক করা হয়। একপর্যায়ে সভাপতি-সম্পাদকের মধ্যে বিরোধ হয়। ওই বিরোধ দলীয় কোন্দলে গড়ায়। একপর্যায়ে স্নেহাংশু সরকারকে ২০০৪ সালে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। জেলা বিএনপির সেই কোন্দল এখনো নিরসন হয়নি।

স্নেহাংশু সরকার এবার বিএনপির কাছে মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘দল আমাকে বহিষ্কার করেনি। আলতাফ চৌধুরী অবৈধভাবে আমাকে বহিষ্কার করিয়েছেন।’

তবে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদ সরোয়ার বলেন, স্নেহাংশু সরকার বিএনপির কেউ নন। তাঁকে অনেক আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখনো সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি।

অন্যান্য দল
পটুয়াখালী-১ আসনে সিপিবি, বাসদসহ বামপন্থী দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে মাঠে নামবে এমনই আভাস দেওয়া হচ্ছে। এখানে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন সিপিবির জেলা সভাপতি মোতালেব মোল্লা।

এ ছাড়া জাসদের (ইনু) কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান এই আসনে মনোনয়ন চাইবেন। এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তাদের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এই আসনে দলটির জেলা শাখার প্রধান উপদেষ্টা মুফতি আলতাফুর রহমান নির্বাচন করবেন।