মরু গোলাপের রাজ্য রাজশাহী

মরু গোলাপ। রাজশাহী উপশহরের এক ছাদবাগানে।  ছবি: লেখক
মরু গোলাপ। রাজশাহী উপশহরের এক ছাদবাগানে। ছবি: লেখক

অ্যাডেনিয়াম ফুলকে বলা হয় মরু গোলাপ। কেননা এ ফুলের সাম্প্রতিক যেসব জাত উদ্ভাবিত হয়েছে, সেসব জাতের ফুল দেখতে গোলাপের মতো। আরও কারণ আছে, অ্যাডেনিয়াম গাছ বেশ শক্ত ধাঁচের। মাটি ছাড়া পাথরকুচির মধ্যেও বেঁচে থাকতে পারে। খুব বেশি পানিরও প্রয়োজন নেই। মরুভূমির মতো পরিবেশে টিকে থাকতে পারে বলে এ গাছের ইংরেজি নাম ডেজার্ট রোজ। বাংলায় মরু গোলাপ। কিন্নরী নামে অন্য একটি বাংলা নামও আছে।

গত আগস্টে রাজশাহী উপশহরের বাসিন্দা কৃষিবিদ শাহীন সালা্হউদ্দিনের ছাদবাগানে গিয়ে দেখা মিলল মরু গোলাপের। তাঁর সংগ্রহে মরু গোলাপের প্রায় ৭০টি জাত রয়েছে। প্রায় সব গাছেই ফুল ফুটে আছে।

শাহীন সালা্হউদ্দিন জানান, ১৯৯৩ সাল থেকে তিনি মরু গোলাপ সংগ্রহ করছেন। রাজশাহীর জনৈক খালেদের কাছ থেকে তিনি একটি অ্যাডেনিয়ামের চারা কিনে শখ করে টবে লাগিয়েছিলেন। তিন-চার মাস পর সেই গাছে কলকের মতো লাল-গোলাপি ফুল ফোটে। মরু গোলাপের ফুল থেকে বীজ হয়। সেই বীজ থেকে তিনি চারা তৈরি করতে সক্ষম হন। চারা বগুড়ার বেশ কিছু নার্সারিতে বিক্রিও করেন। তিনি ফুলটির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখে উৎসাহী হন। দিনে দিনে সমৃদ্ধ করে তোলেন তাঁর মরু গোলাপের ভান্ডার।

শাহীন সালা্হউদ্দিন বলেন, কত শত রঙের বৈচিত্র্য যে মরু গোলাপের রয়েছে, তার বর্ণনা দেওয়া যাবে না। বীজ থেকে চারা তৈরি করলে জাতের বৈশিষ্ট্য হুবহু ঠিক থাকে না বলে এখন গ্রাফটিং বা কলম করে মরু গোলাপের চারা তৈরি করা হচ্ছে। এসব ফুল ও চারার খবর তিনি ছড়িয়ে দিচ্ছেন ফেসবুকের মাধ্যমে। কুরিয়ারে ক্রেতাদের কাছে তিনি চারা বিক্রি করেন।

এ ফুলের আকর্ষণ আর চাহিদা দেখে রাজশাহীর কয়েকজন ছাদেই বাণিজ্যিক চারা উৎপাদন শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম এ কে এম খোরশেদ আনোয়ার। তাঁর সংগ্রহে রয়েছে প্রায় ২০০ জাতের মরু গোলাপ। আরেকজন হলেন মো. শিহাব উদ্দিন । তাঁরও আছে মরু গোলাপের বিশাল সংগ্রহ। সব মিলিয়ে রাজশাহীতে এখন এ ফুলের এক বড়সড় রাজ্য গড়ে উঠেছে। সবই চাষ হচ্ছে ছাদবাগানে।

মরু গোলাপের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম adenium obesum। পরিবার অ্যাপোসাইনেসি। আফ্রিকার মরু অঞ্চল এর আদি নিবাস। সেখান থেকে এখন উষ্ণ ও অবউষ্ণ অঞ্চলের অনেক দেশেই গাছটি ছড়িয়ে পড়েছে। গাছটি ক্যাকটাস নয়, একধরনের সাকুলেন্ট বা রসাল প্রকৃতির গাছ। গাছ দেখতে বনসাইয়ের মতো।

মরু ফুলের গাছ ৫০ সেন্টিমিটার থেকে ২ মিটার উঁচু হয়। গোড়া গোদের মতো মোটা। শাখাপ্রশাখা নরম, পাতা পুরু। অনেক জাতের পাতা শীতে ঝরে যায়। তবে প্রায় সারা বছরই কম-বেশি ফুল ফোটে। লাল, মেরুন, গোলাপি, ঘিয়ে, সাদা, হলদে, নীলাভ ইত্যাদি নানা রঙের ফুল ফোটে।

রঙের বৈচিত্র্যের কারণে এ ফুলের উজ্জ্বল বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন উদ্যান, ছাদবাগান, বারান্দায় কম যত্নেই এ গাছ প্রাণ উজাড় করে ফুল দেয়।