অক্টোবরে মাঠ দখলের লড়াই দুই জোটের

>

• রাজনীতির মাঠ দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই পক্ষ
• শনিবার থেকেই মহড়া শুরু
• ১৪ দল ও বিএনপির ঢাকায় সমাবেশ শনিবার
• অক্টোবরজুড়ে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত ১৪ দলের
• একই সময় বিএনপিও মাঠে থাকবে

সরকারি ও সরকারবিরোধী দুই রাজনৈতিক জোট অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানে পৌঁছেছে। অক্টোবর থেকে রাজনীতির মাঠ দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই পক্ষই। আগামী শনিবার থেকেই এর মহড়া শুরু হয়ে যেতে পারে। ওই দিন রাজধানী ঢাকায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোট এবং বিএনপি  পৃথক স্থানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে।

অক্টোবরে ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে ১৪ দল। ওই সময় বিএনপিও মাঠে থাকবে। পাশাপাশি ড. কামাল হোসেন ও সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ‘বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া’ও একই সময়ে জেলা পর্যায়ে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। তারা ৩০ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহে সমাবেশ করবে। ঐক্য প্রক্রিয়ার কর্মসূচিতেও বিএনপি থাকতে পারে।

আজ বুধবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে পেশাজীবীদের সঙ্গে ড. কামালের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মতবিনিময় সভা রয়েছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি তিন মাসের মতো। এত দিন সরকারি জোট ও বিরোধী দলগুলো কথার লড়াই চালিয়ে আসছিল। গত শনিবার ড. কামাল হোসেন ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে নাগরিক সমাবেশ এবং এতে বিএনপিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। এরপর থেকেই আওয়ামী লীগ ও তাদের জোট ১৪ দল একযোগে ঐক্য প্রক্রিয়ার বিরোধিতায় নেমেছে এবং কঠোর সমালোচনা শুরু করেছে। বিরোধী দলগুলোর ঐক্য প্রক্রিয়াকে ‘চক্রান্তের জোট’ আখ্যা দিয়ে তাদের প্রতিহত করার ঘোষণাও দিয়েছে ১৪–দলীয় জোট।

এর মধ্যে আগামী শনিবার দুই পক্ষই ঢাকায় সমাবেশের কর্মসূচি দেওয়ায় একধরনের পাল্টাপাল্টি অবস্থা তৈরি হয়েছে। ১৪ দল সমাবেশ করবে গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে। বিএনপি জনসভা করবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

১৪ দলের নেতারা গতকাল বলেছেন, শনিবার মাঠ তাঁদের দখলে থাকবে। বিএনপিও বড় জমায়েতের পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে বিএনপি অনুমতি পাবে কি না, এটা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। কারণ, এর আগেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে অনুমতি পায়নি বিএনপি।

১৪ দলের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, তাদের কর্মসূচি আগেই নেওয়া হয়েছিল। তবে তা ছিল মূলত কর্মিসভা। কিন্তু গত শনিবার মহানগর নাট্যমঞ্চে ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশ আলোচনায় আসার পর ১৪ দল কর্মিসভার স্থলে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরেই অক্টোবরজুড়ে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৪ দল। এরপর জেলা পর্যায়েও সমাবেশের করবে। ঢাকার মহাসমাবেশের প্রস্তুতি হিসেবেই শনিবার সমাবেশের আয়োজন করা হয়। একে সফল করতে ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রস্তুতি সভা করেছে ১৪ দল।

গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর ১৪ দলের এমনই এক সভায় জোটের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ঢাকা দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নেতা-কর্মীরা এলাকায় প্রস্তুত থাকবেন, অপশক্তি যেন মাঠে নামতে না পারে। ওদের মাঠে প্রতিহত করবেন, রাস্তায় প্রতিহত করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগে থেকেই ঢাকা দখলে ছিল, ভবিষ্যতেও ঢাকা আমাদের দখলে থাকবে। শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশ শেখ হাসিনার দখলে থাকবে।’ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আগামী একটি মাস আপনাদের কোনো কাজ নেই। ১৪ দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পাড়া-মহল্লায় আপনারা সজাগ থাকবেন। কোনো চক্রান্ত বা নৈরাজ্য হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ইনশা আল্লাহ আমরা প্রতিহত করব।’

অন্যদিকে বিএনপির জনসভার তারিখ ছিল ২৭ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার)। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, তাঁদের জনসভা বৃহস্পতিবার নয়, শনিবার করা হবে।

সভা সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সরকারি কর্মদিবস। এ জন্য পুলিশ অনুমতি দিতে চায় না। তাই আমরা সরকারি ছুটির দিন শনিবারে জনসভার কথা বলেছি।’

দলীয় সূত্র জানায়, ওই জনসভা থেকে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে কারাবন্দী খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সাত দফা দাবি এবং নির্বাচন–পরবর্তী সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বা প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বিএনপি বিভিন্ন সময়ে নানা দাবি জানিয়ে আসছে। এরই মধ্যে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট যৌথভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে পাঁচ দফা দাবি ও নির্বাচন–পরবর্তী ৯ দফা লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। এখন নির্বাচনের তফসিল সামনে রেখে বিএনপিও উন্মুক্ত জনসভার মধ্য দিয়ে সরকার ও জনগণের উদ্দেশে সুনির্দিষ্টভাবে দাবি তুলে ধরতে চায়। এই দাবি নিয়ে অক্টোবর মাসে আরও সভা-সমাবেশের পরিকল্পনা আছে দলটির। পাশাপাশি বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে কোনো কর্মসূচি দেওয়া হলে সেগুলোতে সম্পৃক্ত রাখবে দলটি।

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ নেতা-কর্মীদের বলেন, ‘আমরা এবার খালি মাঠে গোল দিতে দেব না। জনগণকে নিয়েই আমরা থাকব। আসুন পয়লা অক্টোবর থেকে রেডি হয়ে যান, রেডি হয়ে যান।’

জানা গেছে, গত রোববার গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ২৯ সেপ্টেম্বরের জনসভা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এর মধ্যে জনসভা থেকে ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা বা দুই-এক দফা কমবেশি লক্ষ্য ঘোষণা করার পরিকল্পনা করা হয়। সাত দফা দাবির মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং ইভিএম পদ্ধতি বাতিলের দাবি থাকবে। আর ১১ দফা লক্ষ্যের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠিত হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় সুশাসনের অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি থাকবে।

এক দিনে রাজধানীতে প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি দল ও জোটের সমাবেশ কর্মসূচি নিয়ে সংঘাতের আশঙ্কা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংঘর্ষ আমরা করব না। এখন তারা (আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল) কী করবে, তা তো জানি না। আশা করি তারাও করবে না।’