দলীয় কোন্দলে মেয়র দপ্তরছাড়া

>

• দেবাশীষ পালিত চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার মেয়র
• দেবাশীষ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আ. লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক
• দলীয় কোন্দলের কারণে মেয়র কার্যালয়ে যেতে পারছেন না
• সাংসদ ফজলে করিমের সঙ্গে দ্বন্দ্ব দেবাশীষের
• এলাকায় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা সাংসদের

নিজ কার্যালয়ে বসে দাপ্তরিক কাজ করতে পারছেন না চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার মেয়র দেবাশীষ পালিত। বাড়িতে বা অন্য কোথাও বসে ফাইলপত্রে সই করতে হচ্ছে তাঁকে। দেড় বছর ধরে এভাবেই কাজ করছেন তিনি। আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা জানিয়েছেন, দলীয় কোন্দলের কারণে তিনি কার্যালয়ে যেতে পারছেন না।

মেয়র দেবাশীষ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তাঁর শখানেক কর্মী এখনো বাড়িছাড়া।

এ ছাড়া ২০১৪ সালের মার্চে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর আর এলাকায় নেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুসলিম উদ্দিন খান। দলীয় মনোনয়নে জিতে চেয়ারম্যান হন সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর সমর্থক এহসানুল হায়দার চৌধুরী (বাবুল)। তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক।

দেবাশীষ পালিত
দেবাশীষ পালিত

ফজলে করিম ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ওই বছর সংসদ নির্বাচনে হেরে যান। এরপর ২০০১,২০০৯ ও সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়লাভ করেন। এলাকায় সাংসদের একধরনের জনপ্রিয়তা আছে, আবার সবকিছুতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও আছে। সম্প্রতি এলাকা ঘুরে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।

পৌর মেয়র দেবাশীষ পালিত ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো পৌর নির্বাচনে জয়ী হন। মাঝে একবার হেরে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী হন। সর্বশেষ নির্বাচনে দেবাশীষকে মেয়র পদে সমর্থন করতে পারেননি সাংসদ ফজলে করিম। এরপর থেকে দুজনের সম্পর্ক তিক্ত হয়।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানাচ্ছে, মূলত ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের পর দলীয় কোন্দল তীব্র হতে থাকে। এ নির্বাচনে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের সবগুলোতে বিজয়ী হন সাংসদ সমর্থকেরা। ১৩টি দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এবং অপরটি স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন।

দেবাশীষ বলেন, তাঁর কর্মীরা উপজেলায় সাংসদ সমর্থকদের হাতে মারধরের শিকার হচ্ছেন। মারধরের পরে পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে ইয়াবা ও অস্ত্র মামলা দিচ্ছে। এর মধ্যে মো. সেলিম ওবিপ্লব নামে দুই কর্মী সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়েছেন। মারধরের শিকার হয়েছেন কয়েকজন। বাড়িঘরছাড়া আছেন শখানেক কর্মী।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম শহরে মুখোমুখি আলাপে দেবাশীষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কার্যালয়ে গেলে কর্মীরাও আমার সঙ্গে থাকেন। এটা অনেকে মানতে পারছেন না।’ তবে নিজ কার্যালয়ে বসতে না পারলেও কোনো কাজ আটকে থাকছে না বলে জানান তিনি। কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘আমি কারও সঙ্গে বিরোধ চাই না। শান্তিতে কাজ করতে চাই।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুসলিম উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এলাকায় ফিরতে চান। দলের সব নেতা–কর্মীর সহাবস্থান চান।

দলীয় কোন্দলের বিষয়ে জানতে চাইলেউপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, দলে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। সাধারণ সম্পাদক তাঁর নিজের কর্মকাণ্ডের কারণেই আসেন না।

তাহলে মেয়র দেবাশীষ কেন এলাকায় নেই? সাংসদের ঘনিষ্ঠ এই নেতার জবাব, ‘এটা ওনার ব্যাপার। কেউ ওনাকে মানা করেনি, বাধা দেয়নি।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাংসদফজলে করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়র কেন এলাকায় যান না, সেটা তাঁকে জিজ্ঞেস করুন। তাঁর অধীনে থাকা ১২ জন কাউন্সিলরকে জিজ্ঞেস করুন। আমরা সবাই একই সংগঠনের। আমার দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই।’

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এসালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংসদ ও মেয়রের মধ্যে দ্বন্দ্ব বড় কিছু নয়। দুজনের অবস্থান দুই দিকে। তারপরও দুজনের মধ্যে বিরোধ আছে। এ বিরোধ মেটানোর জন্য সপ্তাহ দুয়েক আগেও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন মেয়র দেবাশীষকে পরামর্শ দিয়েছেন। আমিও অনেকবার বলেছি। দেবাশীষ চিন্তা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি এখন পর্যন্ত কিছু জানাননি।’