দুদকে সময় চাইলেন বিকল্পধারার মহাসচিব মান্নান

মেজর (অব.) আবদুল মান্নান
মেজর (অব.) আবদুল মান্নান

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তলবে হাজির হওয়ার জন্য এক মাসের সময় চেয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান। তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন জানিয়ে তাঁর পক্ষে জনৈক ব্যক্তি অনুসন্ধান কর্মকর্তা বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন।

দুদকের একটি সূত্র মেজর মান্নানের সময় চাওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বিকল্পধারার মহাসচিবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে চিঠি দেয় দুদক। ২৪ সেপ্টেম্বর সংস্থার উপপরিচালক ও এ-সংক্রান্ত অনুসন্ধান দলের প্রধান এস এম সাহিদুর রহমান স্বাক্ষরিত নোটিশে তাঁকে ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় দুদকে হাজির হতে বলা হয়।

দুদক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) থেকে বিপুল পরিমাণের ঋণ অনিয়মের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের সম্পৃক্ততা পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে ২০১৫ সালের শেষ দিকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দুদক ও সিআইডিকে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

অভিযোগে বলা হয়, ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে মেজর মান্নানের মালিকানাধীন সানম্যান গ্রুপের ৩৪ কোম্পানির নামে-বেনামে বিআইএফসি থেকে ৭০৩ কোটি টাকা বের করে নেওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। এর মধ্যে ২৭ প্রতিষ্ঠানের নামে ৫৭০ কোটি টাকা সরাসরি নেওয়া হয়। একই গ্রুপের সাত প্রতিষ্ঠানকে গ্যারান্টার দেখিয়ে নেওয়া হয় আরও ১৩৩ কোটি টাকা। খেলাপি হওয়ার পরও কিছু ঋণ হিসাবকে নিয়মিত দেখানো ও সিআইবিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অনেক ঋণ হিসাবের রিপোর্ট না করার মতো বিষয়ও ধরা পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে। ঋণ জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ার পর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, তাঁর স্ত্রী উম্মে কুলসুম মান্নান ও মেয়ে তানজিলা মান্নানকে অপসারণের পাশাপাশি বিআইএফসিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই সঙ্গে আত্মসাত্কৃত অর্থ আদায়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে বিআইএফসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে মেজর (অব.) মান্নান আত্মসাৎ করা অর্থের মধ্যে ২০০ কোটি টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দেন। যদিও শেষ পর্যন্ত ফেরত দিয়েছেন ১২০ কোটি টাকা। দুদকের অভিযোগের তথ্য অনুসারে মান্নানের আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ ৫১৮ কোটি টাকা।

এদিকে, এই ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গত বছরের ৯ আগস্ট একটি মামলা করে। মুদ্রা পাচার আইনে করা ওই মামলায় মেজর মান্নানসহ ১১জনকে আসামি করা হয়। অন্য আসামিরা হলেন বিআইএফসির সাবেক এমডি ইনামুর রহমান, সাবেক এসএভিপি আহম্মেদ করিম চৌধুরী, বিআইএফসির সাবেক ব্যবসা প্রধান সৈয়দ ফাখরী ফয়সাল, মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের স্ত্রী ও বিআইএফসির সাবেক চেয়ারম্যান উম্মে কুলসুম, শ্যালক বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে লিমিটেডের পরিচালক রইস উদ্দীন, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে লিমিটেডের পরিচালক রিজিয়া সুলতানা, আকবর হোসেন ও আমিনুর রহমান খান, মেজর মান্নানের মেয়ে তানজিলা মান্নান ও তাজরিনা মান্নান।