গুঠিয়ার সন্দেশ এখনো অনন্য

গুঠিয়ার সন্দেশ বানাতে ব্যস্ত এক কারিগর। গতকাল দুপুরে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া বন্দরের একটি দোকানে।  ছবি: প্রথম আলো
গুঠিয়ার সন্দেশ বানাতে ব্যস্ত এক কারিগর। গতকাল দুপুরে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া বন্দরের একটি দোকানে। ছবি: প্রথম আলো

বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার একটি ইউনিয়নের নাম গুঠিয়া। সম্প্রতি বায়তুল আমান জামে মসজিদের জন্য আলোচনায় এসেছে। গুঠিয়ার চাংগুরিয়ার গ্রামেই দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ ও নান্দনিক এই মসজিদ অবস্থিত।

কিন্তু গুঠিয়ার সুখ্যাতি অনেক পুরোনো। আর তা সুস্বাদু এক সন্দেশের জন্য। স্বাদে অনন্য এ সন্দেশে লেগে থাকে গরুর দুধের টাটকা ঘ্রাণ। এই সন্দেশ গুঠিয়ার প্রায় ৫০ বছরের ঐতিহ্য।

জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া থেকে সন্দেশ তৈরির কৌশল শিখে আসেন সতীশ চন্দ্র দাস নামের এক ময়রা। সেই কৌশলের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে তিনি ১৯৬২ সালে তৈরি করেন এই সন্দেশ, যা এখন গুঠিয়ার সন্দেশ নামে পরিচিত।

সতীশ চন্দ্র বহু বছর আগে কলকাতায় চলে যান এবং সেখানেই মারা যান। কিন্তু তাঁর বিখ্যাত সন্দেশের ঐতিহ্য ধরে রাখেন এখানকার বেশ কয়েকজন ময়রা। বাদশা হাওলাদার তাঁদেরই একজন। তাঁর বয়স এখন ৮০ ছুঁই ছুঁই। বিখ্যাত এই সন্দেশের প্রস্তুত প্রণালি শিখিয়েছেন ছেলে শাওন হাওলাদারকে (৪০)।

শাওন জানালেন সন্দেশ তৈরির প্রক্রিয়া। সাধারণত ৬-৭ কেজি দুধে ১ কেজি ছানা পাওয়া যায়। সেই ছানার সঙ্গে ১ কেজি চিনি মিশিয়ে অল্প জ্বাল দিতে হয়। ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর পাকিয়ে অল্প আঁচে ৫ মিনিট রাখলেই কাঁচামাল তৈরি। তা পরিমাণমতো নিয়ে কাঠের ওপরে রেখে সন্দেশের আকার দেওয়া হয়। সন্দেশ তৈরিতে পরিমাণমতো আঁচ ও পাকই হলো মূল।

এই বাজারে ৬-৭ জন এখনো এই সন্দেশের ঐতিহ্য আঁকড়ে আছেন। তাঁদের মধ্যে পরিমল চন্দ্র, অমল ময়রা অন্যতম।

এখানের ময়রারা বললেন, খাঁটি ছানা ও চিনি ছাড়া অন্য কিছু ব্যবহার না করায় এই সন্দেশ সুস্বাদু।

বরিশাল নগরীর বিভিন্ন দোকানে গুঠিয়ার সন্দেশ মেলে। এগুলো নিয়ে প্রশ্ন থাকায় অনেক ক্রেতা এখনো ২২ কিলোমিটার দূরের গুঠিয়া সেতু–সংলগ্ন বাজারে ছুটে যান সন্দেশ কিনতে।

গুঠিয়া সন্দেশের কেজি সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। কেজিতে ২৫টির মতো সন্দেশ থাকে। শাওন হাওলাদার বলেন, শীতকালে এবং বৈশাখে সন্দেশের চাহিদা বাড়ে। তিনি বলেন, ‘দুধ, চিনি এবং শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এখন খুব বেশি লাভ হয় না। তবু ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে মানের সঙ্গে আপস করি না।’