পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা নেই

‘ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করুন’ ট্রাফিক বিভাগ এমন নির্দেশনা দিয়েছে। অথচ সেখানে নেই কোনো পদচারী–সেতু। বাধ্য হয়ে পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে পথ চলছেন। সোমবার যাত্রাবাড়ী মোড়ে।  প্রথম আলো
‘ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করুন’ ট্রাফিক বিভাগ এমন নির্দেশনা দিয়েছে। অথচ সেখানে নেই কোনো পদচারী–সেতু। বাধ্য হয়ে পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে পথ চলছেন। সোমবার যাত্রাবাড়ী মোড়ে। প্রথম আলো

সড়কের একদিক থেকে গাড়ি আসছে তো অন্যদিক থেকে রিকশা এসে গাড়ির সামনে পড়ছে। এর মাঝেই ঝুঁকি নিয়ে গাড়ির ফাঁক গলে রাস্তা পার হচ্ছে পথচারীরা। এমন চিত্র যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার।

শহীদ ফারুক সড়ক, যাত্রাবাড়ী-দোলাইরপাড় সড়ক, যাত্রাবাড়ী-ডেমরা ও ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক শুরু হয়েছে এই চৌরাস্তা থেকে। ব্যস্ত এই মোড় দিয়ে প্রতিদিন দূরপাল্লার বাস বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু সেখানে নেই পথচারীদের নিরাপদ পারাপারের জন্য পদচারী-সেতু, পাতালপথ কিংবা জেব্রা ক্রসিং।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, পদচারী-সেতু ব্যবহারের জন্য চৌরাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু সেখানে নিরাপদ পারাপারের কোনো ব্যবস্থাই নেই। চৌরাস্তায় গাড়ির চাপ বেশি হলেও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কিছুটা দুর্বল। যে যেভাবে পারছে, গাড়ি নিয়ে চৌরাস্তা পার হচ্ছে। আবার চলন্ত গাড়ি থামিয়ে কিংবা ঝুঁকি নিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হচ্ছে পথচারীরা।

গত সোমবার দুপুরে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা যায়, যানবাহন চলাচলে ট্রাফিক নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। রিকশা এসে পড়ছে গাড়ির সামনে। কে কার আগে চৌরাস্তা পার হবে, যেন এই প্রতিযোগিতা চলছে। এরই মাঝে পথচারীরাও সুযোগ পেলে হেঁটে কিংবা দৌড়ে পার হচ্ছে।

জানা গেছে, ৫ সেপ্টেম্বর চৌরাস্তা পার হওয়ার সময় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি নিহত হন।

যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা সিনথিয়া আক্তার বলেন, মাসখানেক আগে চৌরাস্তা পার হওয়ার সময় একটি কাভার্ড ভ্যান তাঁকে ধাক্কা দেয়। পড়ে গিয়ে তাঁর পা ভেঙে গেছে।

চৌরাস্তার আশপাশের সড়কগুলোর কোনোটিতেই এত দিন জেব্রা ক্রসিং ছিল না। ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) অঞ্চল-৫ যাত্রাবাড়ী-দোলাইরপাড় সড়ক ও ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে জেব্রা ক্রসিং বসিয়েছে। তবে গাড়ির গতি সেখানে কমানো হয় না। গাড়ি না থামায় পথচারীরাও জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার না করেই যত্রতত্র পার হচ্ছে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসি অঞ্চল-৫–এর নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুল হক বলেন, ‘জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এর আগে সচেতনতা কার্যক্রম চালিয়েছিলাম। এ ব্যাপারে আবারও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাব। তাতে হয়তো পথচারীদের এলোমেলোভাবে যাওয়ার প্রবণতা কমবে। তা ছাড়া ট্রাফিক বিভাগকেও যথাযথভাবে যানবাহন পরিচালনার জন্য অনুরোধ করব।’

যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার ওপর দিয়ে চলে গেছে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়ক।

যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা ডিএসসিসির ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম বলেন, ‘ঝুঁকি নিয়ে পথচারী পারাপারের বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। অথচ ফ্লাইওভারের কারণে এখন পদচারী-সেতু কিংবা পাতালপথ কোনোটিই করা যাবে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের ডেমরা জোনের সহকারী কমিশনার সৈয়দ জিয়াউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পুরোটাই অপরিকল্পিত। এখানে যে ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে কার্যক্রম চালায়, তা তাদের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, মেয়র হানিফ উড়ালসড়ক করার সময় নিচের সড়ক দিয়ে পথচারী ও গাড়ি চলাচলের বিষয়টি নিয়ে সঠিকভাবে ভাবা হয়নি।