বিএনপি অনুমতি পেলে রাজপথে থাকবে আ.লীগ

আওয়ামী লীগ কোনো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে যাবে না—দলের সাধারণ সম্পাদক এমন ঘোষণা দিলেও কাল শনিবার ১৪-দলীয় জোটের নাগরিক সমাবেশ হবে। সমাবেশ সফল করতে এবং বড় জমায়েতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন এই জোট। একই দিন বিএনপি জনসভা করার অনুমতি পেলে ‘নৈরাজ্য’ ঠেকাতে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতা-কর্মীরা রাজপথে সতর্ক অবস্থানে থাকবেন।

আওয়ামী লীগ ও ১৪-দলীয় জোটের উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের আশঙ্কা, বিএনপি নিজেরা তাদের জনসভায় ‘অন্তর্ঘাতমূলক’ ঘটনা ঘটিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে। যার দায় সরকারের ওপর চাপানোর চেষ্টা করবে। তাই ওই দিন বিএনপিকে ঢাকায় সমাবেশ করতে দেওয়া উচিত হবে না। যদি কোনো কারণে পুলিশ বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়, সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নৈরাজ্য ঠেকাতে রাজধানীর রাজপথে থাকবেন।

১৪-দলীয় জোটের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গতকাল কক্সবাজারের এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেছেন, বিএনপিও একই দিন কর্মসূচি দিয়ে পায়ে পা লাগিয়ে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র বলছে, তারা সংঘাতে যেতে রাজি নন। ১৪ দলের কারণে শনিবার অনুমতি না দিলে তারা পরদিন রোববার জনসভা করতে চায়।

গতকাল গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলী ও দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে এক সভা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আগামী ১ অক্টোবর থেকে সারা দেশে সপ্তাহব্যাপী সাংগঠনিক সফরের বিষয়ে আলোচনার জন্য সভাটি আয়োজন করা হলেও এতে শনিবার বিএনপির সমাবেশের বিষয়েও কথা হয় বলে জানা গেছে।

সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এবং তাদের দোসররা নাশকতা ও সহিংসতার ছক আঁটছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সব দিক থেকে প্রস্তুত আছি। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হলে আমরা রাজনৈতিকভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবিলা করব। আর সহিংসতা ও নাশকতার দিকে যদি বিএনপি তার দোসরদের নিয়ে পা বাড়ায়, তাহলে তার দাঁতভাঙা জবাব দেবে জনগণ।’

ওবায়দুল কাদের বিএন​পির উদ্দেশে বলেন, ‘লাফালাফির পরিণতি শুভ হবে না। হুমকি-ধমকি দিলে আমরা ঘরে বসে ডুগডুগি বাজাব, তা হবে না।’

১৪ দল সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে ১৪-দলীয় জোটের কর্মসূচিটি ছিল কর্মিসভা। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশটি আলোচনায় আসায় ১৪ দল কর্মিসভাকে নাগরিক সমাবেশ করে বড় জমায়েত করার পরিকল্পনা করে। গত মঙ্গলবার ১৪ দলের মহানগর কমিটির প্রস্তুতি সভা শেষে জোটের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম শনিবার নাগরিক সমাবেশ করার ঘোষণা দেন। এরই মধ্যে বিএনপিও তাদের বৃহস্পতিবারের সমাবেশ শনিবার করার ঘোষণা দেয়।

পরদিন বুধবার রাজবাড়ীতে এক জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ​ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে যাবে না।

১৪ দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিএনপির কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। তারা সেটাকে পিছিয়ে শনিবার করেছে। আর বিএনপি বলছে, তারা বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বা নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চেয়েছিল। তখন পুলিশ তাদের বন্ধের দিনে সমাবেশ করতে অনুরোধ করে। এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে পিছিয়ে শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। পুলিশ আবেদনের বিষয়ে সময়ক্ষেপণ করছে।

গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী ও আবদুস সালাম আজাদ ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার শাহাবুদ্দিন কোরেশীর সঙ্গে দেখা করেন। শহীদ উদ্দীন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত কমিশনারের পরামর্শে আমরা রোববার জনসভা করার জন্য আরেকটি আবেদন করেছি। তিনি বলেছেন, আজ শুক্রবার সিদ্ধান্ত জানাবেন।’