রাজবাড়ীতে স্কুলে স্লিপারটি স্থাপন না করেই রাখা ছিল, শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যু

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছ থেকে উপহার পাওয়া স্লিপারটি স্থাপন না করে রেখে দেওয়া হয়েছিল স্কুলের মাঠেই। শিশু শিক্ষার্থীরা অস্থায়ীভাবে রাখা সেই স্লিপারেই খেলাধুলা শুরু করে। কর্তৃপক্ষ সেদিকে কোনো নজর দেয়নি। আজ শিশুদের খেলাধুলার একপর্যায়ে স্লিপারটি পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক শিশুর ওপর পড়ে। এতে গুরুতর আহত শিশুটি হাসপাতালে মারা যায়। আজ শনিবার সকালে রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, আহত শিশুটির চিকিৎসায় অবহেলা করেছিলেন চিকিৎসক। দ্রুত চিকিৎসা দিলে তাকে বাঁচানো যেত।

জানা গেছে, শিশুটির স্বজনেরা ক্ষুব্ধ হয়ে চিকিৎসকের ওপর চড়াও হন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নিহত শিশুটির নাম আলিম শেখ (৭)। সে আলীপুর আরসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে স্থানীয় মামুন শেখের ছেলে।

আলীপুর আরসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহজাদা শেখর জানান, আলীপুর ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেনের পক্ষ থেকে স্কুলের শিশুদের খেলাধুলার জন্য স্লিপারটি দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে শিশু মৃত্যুর ঘটনার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিনয় কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার এটি চেয়ারম্যান সাহেব দিয়েছেন। কিন্তু এটা কি স্থাপন করা, নাকি আলগা অবস্থায় আছে, আমরা তা বুঝতে পারিনি। তিনি আমাদের তা বুঝিয়ে দেননি।’

অপরদিকে চেয়ারম্যান শওকত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই বছর আগে শিশুদের স্লিপারটি দেব বলে ওয়াদা করেছিলাম। রঙের কিছু কাজ বাকি ছিল বলে আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি’। তিনি বলেন, এ ঘটনায় স্কুলের অবহেলা ছিল। স্লিপারটি রাখার পর স্কুলের উচিত ছিল নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, শিশুটির মৃত্যুর জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহেলা রয়েছে। স্লিপারটি স্কুলের শিশুদের জন্য উপহার দিয়েছিলেন স্থানীয় চেয়ারম্যান। সেটি মাটিতে স্থাপন না করে অস্থায়ীভাবে রাখা হয়েছিল। শিশুরা এতে উঠে বিপজ্জনকভাবে খেলাধুলা করলেও স্কুল থেকে বাধা দেওয়া হয়নি। শিশুদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এদিকে আহত অবস্থায় আলিমকে হাসপাতালে নেওয়া হলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। সকাল ৯টা ২০ মিনিটে আলিমকে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। জরুরি চিকিৎসা না দিয়ে কাগজপত্র ‘চালাচালিতে’ ব্যস্ত থাকেন হাসপাতালের লোকজন। তাঁরা আলিমের স্বজনদের এই কক্ষ, সেই কক্ষ ঘোরাতে থাকেন। আলিমকে এক্স-রে করিয়ে নিয়ে আসতে বলেন। এক্স-রে কক্ষে যাওয়ার পর সেখানের দায়িত্বরত ব্যক্তি স্লিপ নিয়ে আসতে বলেন। স্লিপ নিয়ে আসার পর চিকিৎসকের কাছে যেতে বলেন। চিকিৎসক হয়ে এক্স-রে কক্ষে যাওয়ার পর হাসপাতালের বাইরে থেকে এক্স-রে করিয়ে নিয়ে আসতে বলা হয়। বাইরে নেওয়ার সময় জরুরি বিভাগের চিকিৎসক দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর চিকিৎসক আলিমকে মৃত ঘোষণা করেন।

শিশুটির মামা ইয়াছিন শেখ অভিযোগ করেন, কাগজপত্র ‘চালাচালি’ করতে গিয়ে সময় নষ্ট করেছেন হাসপাতালের লোকজন। সময়মতো চিকিৎসা দিলে হয়তো আলিমকে বাঁচানো যেত।

চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করে জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালনরত চিকিৎসক মনিজা আক্তার বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কালক্ষেপণ করার অভিযোগ সঠিক নয়। শিশুটিকে নিয়ে তার স্বজনেরা হাসপাতালে আসার সময় আমি জরুরি বিভাগে অন্য রোগী দেখছিলাম। তবে শিশুটির শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। এ কারণে আমি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ফোন করেছি। কিন্তু তিনি প্রথমে ফোন ধরেননি। হাসপাতালের নিয়মকানুন মেনে শিশুটিকে দ্বিতীয় তলায় পাঠিয়েছি। এ সময় শিশুটি মারা গেছে।’

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আলী আহসান তুহিন বলেন, শিশুটির পরিবারের লোকজন চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য সিভিল সার্জন একটি তদন্ত কমিটি করবেন। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।