ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: শিক্ষককে গণপিটুনি, কারাদণ্ড

এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে টাঙ্গাইলের একটি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইদুর রহমানকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা গণপিটুনি দিয়েছেন। পরে ওই শিক্ষককে এক বছরের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।

ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, ওই শিক্ষক ক্লাসে ও ক্লাসের বাইরে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করতেন ও কুপ্রস্তাব দিতেন। শুধু ছাত্রী নয়, তাদের অভিভাবকদের নিয়েও তিনি অশালীন মন্তব্য করতেন। এসব ঘটনায় বিদ্যালয়ের ছাত্রী ও অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। গত রোববার নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে তিনি কুপ্রস্তাব দেন। ওই দিনই সব ছাত্রী প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি জানায়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ওই ছাত্রীকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কিছু ছাত্রীর কাছ থেকে স্বাক্ষর নেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ঘটনা জানাজানি হলে গতকাল সকালে ছাত্রীদের অভিভাবকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিচার ও শাস্তির দাবিতে তাঁরা বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মিছিল করেন। এ সময় সাইদুর বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে প্রবেশ করলে ছাত্রীরা তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখে। একপর্যায়ে ওই শিক্ষক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ছাত্রী ও অভিভাবকেরা তাঁকে ধরে গণপিটুনি দেন। এতে তাঁর মাথায় জখম হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অভিযুক্ত শিক্ষক সাইদুরকে আটক করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার রহমান ওই শিক্ষককে এক বছরের কারাদণ্ড দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত শিক্ষক সাইদুর কালিহাতী উপজেলার পারখী গ্রামের বাসিন্দা।

যৌন হয়রানির শিকার ওই ছাত্রী বলে, দীর্ঘদিন ধরেই সাইদুর তাদের অনেককে বিভিন্নভাবে কুপ্রস্তাব দিচ্ছিলেন। বিষয়টি একাধিকবার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে জানানোর পরও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। তারা সাইদুরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় ও প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবি করে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, তিনি কোনো ছাত্রীর কাছ থেকে স্বাক্ষর নেননি। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাইদুরকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) আশরাফুল মোমিন ইউএনবিকে বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে বরখাস্তও করা হয়েছে। ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সায়েদুর রহমান বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দিয়ে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।