উলিপুরে দপ্তরি ও আক্কেলপুরে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম প্রহরী নিয়োগ কার্যক্রম গত সোমবার স্থগিত করা হয়েছে। ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কার্যক্রম স্থগিত করেন। একই দিন জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলায় ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়ায় একটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
উলিপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সম্প্রতি উলিপুর উপজেলার ৪০টি বিদ্যালয়ে একজন করে দপ্তরি কাম প্রহরী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। প্রতিটি বিদ্যালয়ে ৬ থেকে ১২ জন প্রার্থী আবেদন করেন।
চাকরিপ্রার্থীরা অভিযোগ করেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ঘুষ-বাণিজ্য করার জন্য সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে তাঁর পছন্দের ছয়জন প্রধান শিক্ষককে অফিস আদেশের মাধ্যমে তাঁর প্রতিনিধি নিয়োগ করেন। তাঁরা হলেন সাতদরগাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম, গুনাইগাছ আশরাফিয়ার রফিকুল ইসলাম আনছারী, যুবাইদিয়ার নিয়ামুল হক, ইন্দারারপাড়ের রেজাউল করিম, বকশীগঞ্জের আমিনুল ইসলাম ও দক্ষিণ সাডুল্ল্যার জাহাঙ্গীর হোসেন। তাঁরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে দর-কষাকষি শুরু করলে ঘুষ-বাণিজ্যের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। এ বিষয়ে গুনাইগাছ আশরাফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরিপ্রার্থী মমিনুল ইসলাম উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষা কর্মকর্তার প্রতিনিধিরা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিদের যোগসাজশে চাকরি দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ের তিনজন আবেদনকারীর সঙ্গে চার লাখ টাকা করে চুক্তি করেন। সাংসদের প্রতিনিধি, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং শিক্ষা কর্মকর্তা চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে একজনের টাকা নিয়ে বাকিদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে তাঁরা জানান।
প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর হোসেন ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ঘুষ-বাণিজ্য হওয়ার অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, ‘ঘুষ-বাণিজ্যের জন্য নয়, নিয়োগ-প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার জন্য আমি প্রধান শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়েছি।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল কাদের জানান, ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠায় সাময়িকভাবে নিয়োগ-প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার পুন্ডুরিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য সম্প্রতি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ মোট ১০ জন প্রার্থী আবেদন করেন। পরিচালনা কমিটির সদস্য মোছাদ্দেক আলী অভিযোগ করেন, পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোলাম রব্বানী আনোয়ার হোসেন নামের এক অদক্ষ প্রার্থীর কাছ পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে তাঁকে গোপনে নিয়োগ দিতে চেয়েছিলেন। এ জন্য নিয়োগ পরীক্ষার আগেই সভাপতি তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে প্রশ্নপত্র দিয়েছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গ্রামের লোকজন সোমবার বিকেলে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষা ভন্ডুল করে দিয়েছেন।
গোলাম রব্বানী দাবি করেন, তিনি কোনো প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নেননি। কমিটির চারজন সদস্য পরীক্ষার কেন্দ্রে ঢুকে প্রশ্নপত্র ছিঁড়ে ফেলেছেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ টি এম জিল্লুর রহমান বলেন, পরিচালনা কমিটির কয়েকজন সদস্য তাঁদের লোকজন নিয়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নষ্ট করে ফেলেছেন। এ কারণে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।