নিহতেরা নব্য জেএমবির সদস্য, হামলার পরিকল্পনা ছিল: র‍্যাব

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার উত্তর সোনাপাহাড় এলাকায় ‘জঙ্গি আস্তানা’থেকে দুজনের ছিন্নভিন্ন লাশ উদ্ধার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। বোমার বিস্ফোরণে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব। র‍্যাবের দাবি, নিহত দুজন নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য। তাঁরা চট্টগ্রাম আদালতে হামলার পরিকল্পনা করেন।

আজ শুক্রবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। বাড়ির তত্ত্বাবধায়কের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, ২৮ সেপ্টেম্বর এই বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন একজন পুরুষ ও একজন নারী। এর দু–এক দিন পর ওই নারী চলে যান। সেখানে চারজন পুরুষ বসবাস শুরু করেন।

মুফতি মাহমুদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই বাড়িটিতে জঙ্গিদের অবস্থানের তথ্য জানতে পেরে র‍্যাব অভিযান শুরু করে। এখানে বসবাসকারী জঙ্গিরা নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য। তাঁরা চট্টগ্রাম আদালতে হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি জানান, বাড়িতে একে–২২ বোরের একটি রাইফেল, তিনটি পিস্তল ও পাঁচটি গ্রেনেড পাওয়া গেছে। অস্ত্রগুলোর সঙ্গে ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রের সঙ্গে মিল রয়েছে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটা থেকে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটা বাড়ি ঘিরে রাখে র‍্যাব। আস্তানা থেকে র‍্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। বাড়িটির ভেতরে বড় ধরনের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করে র‍্যাব। বিস্ফোরণে একতলা টিনশেডের বাড়ির টিনের চাল উড়ে গেছে। ঢাকা থেকে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল ঘটনাস্থলে গিয়ে সকাল নয়টায় বাড়ির ভেতরে অভিযান শুরু করে। সেখান থেকে একটি বোমা উদ্ধার করে পাশের খালি জমিতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মিমতানুর রহমান বলেন, জঙ্গিরা অবস্থান করছে—এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব-৭ অভিযান চালায়। র‍্যাবের সঙ্গে জঙ্গিদের গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। বাড়ির ভেতর থেকে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।

বাড়ির মালিক মাজহারুল হক ও তত্ত্বাবধায়ককে আটক করেছে র‍্যাব।

র‍্যাব ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, উত্তর সোনাপাহাড় এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একবারে লাগোয়া পূর্বদিকে বাড়িটির অবস্থান। বাড়ির মালিক মাজহারুল হক পাঁচ কক্ষের বাড়িটি ভাড়া দিয়ে পার্শ্ববর্তী অন্য এলাকায় ভাড়া থাকেন। এই বাড়িটিতে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করেন এক ব্যক্তি। স্থানীয়ভাবে তাঁকে ‘হক সাব’ বলে ডাকা হয়। দুজনকে রাতেই আটক করে নিয়ে যায় র‍্যাব। তবে তাঁরা র‍্যাবকে কী তথ্য দিয়েছেন বা বাড়িটিতে কত লোক অবস্থান করছেন, তা জানা যায়নি। র‍্যাব রাত সাড়ে তিনটার দিকে অভিযান শুরু করার সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী সড়কের লেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই সময় বিকল্প পথে যানবাহন চলাচল করে। ঘণ্টা খানেক পর ওই লেন খুলে দেওয়া হয়। সেখানে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

ঘটনাস্থলের চারপাশ র‍্যাব ও পুলিশ ঘিরে রেখেছে। প্রচুরসংখ্যক স্থানীয় লোক সেখানে ভিড় করেছেন। তবে বাড়িটির কাছাকাছি কাউকে ভিড়তে দেয়নি র‍্যাব ও পুলিশ। গুলি ও বোমার আঘাতে বাড়িটির জানালার কাঁচ ভেঙে গেছে। দেয়ালের জায়গায় জায়গায় গুলির চিহ্ন। বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরণের পর বাড়ির টিনের চালা উড়ে যায়।

র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তার করা অন্য জঙ্গিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই বাড়িটি জঙ্গিদের আস্তানা বলে জানা গেছে। বাড়িটি ঘেরাও করার পর র‍্যাব মাইকে জঙ্গিদের প্রতি আত্মসমর্পণের অনুরোধ জানায়। জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ না করে র‍্যাবের দিকে গুলি ছোড়ে। তখন দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এরপর ভোররাত চারটা ২২ মিনিটে বাড়ির ভেতর থেকে একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ঘটনাটি বড় ধরনের বোঝার পর র‍্যাবের ওই দলের সঙ্গে চট্টগ্রাম থেকে পরে আরও সদস্য যোগ দেন। এখন সেখানে অভিযানে র‍্যাবের ১৫০ সদস্য রয়েছেন। সকাল নয়টার দিকে ঢাকায় র‍্যাবের সদর দপ্তর থেকে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল আসার পর বাড়ির ভেতরে অভিযান শুরু হয়।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, রাত সাড়ে তিনটা থেকে অভিযান শুরু হয়। অভিযান শুরুর করার পর লোকবল বাড়ানো হয়েছে।