শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচির সময় পরিবর্তন

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারির প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচির সময়ে পরিবর্তন এনেছে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’। এখন থেকে প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করা হবে। এর পাশাপাশি প্রতিদিন দেশের মহাসড়কগুলো এক ঘণ্টা অবরোধ করা হবে।

৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতারা আজ রোববার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আজ এই আন্দোলনের পঞ্চম দিন। গত বুধবার রাত থেকে তাঁদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চলছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার কারণে আজ ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত কর্মসূচি শিথিল করা হয়েছিল। রোববার বেলা তিনটার দিকে মুক্তিযোদ্ধা, তাঁদের সন্তান ও নাতি-নাতনিরা শাহবাগে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

৩০ শতাংশ কোটা বহালের দাবি ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কর্মীরা। তাঁরা বলেন, মন্ত্রিসভায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের যে পরিপত্র জারি হয়েছে, তা ‘অবৈধ কালাকানুন’। এটি সরাসরি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। তাঁদের দাবি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সে ক্ষেত্রে অবরোধ ও আন্দোলন করে সারা দেশ অচল করে দেওয়া হবে।

আগামীকাল সোমবার থেকে সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে এক ঘণ্টা সময় অবরোধ করে রাখার ঘোষণাও দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চ। সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চের মুখপাত্র আ ক ম জামাল উদ্দিন বলেন, ‘শাহবাগ মোড়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল থাকায় কর্মসূচির পরিবর্তন করা হলো। এখানে হাজার হাজার রোগী প্রতিদিন আসে, ভর্তি হয়। সে কারণে ধারাবাহিক অবরোধে রোগীদের ক্ষতি হয়। তবে আমরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করতে চাই, যেমন করে আমাদের মা-বাবা যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন, তেমনি যুদ্ধ করেই আমরা অধিকার আদায় করব। দাবি আদায়ে ভবিষ্যতে একটি মুক্তিযোদ্ধা-জনতার সমাবেশও করা হবে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আগামীকাল (সোমবার) মন্ত্রিপরিষদের সাপ্তাহিক মিটিং। ওই মিটিংয়ে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া, নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন ১২ জন মন্ত্রী আছেন। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে মন্ত্রিসভা এই অবৈধ কালাকানুন এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী অবৈধ পরিপত্র প্রত্যাহার করে নেবে। তাঁদের কাছে অনুরোধ, প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অপসারণ করুন।’ এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পদত্যাগও দাবি করা হয়।

লাগাতার অবস্থানের কথা বলা হলেও রোববার ভোরে কয়েকজন আন্দোলনকারীকে শাহবাগ মোড়ে দেখা যায়। দুপুরের পর অবরোধ শুরু হলে শাহবাগ মোড়ে যান চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

শাহবাগ মোড়ে রাজধানীর দুটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের অবস্থান। গত কয়েক দিনের মতো আজও হাসপাতাল দুটির রোগী ও আত্মীয়স্বজনদের ভোগান্তিতে পড়তে দেখা যায়। অন্তত চারজন রোগীর আত্মীয় চলমান আন্দোলন নিয়ে প্রথম আলোর কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এক রোগীর আত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এ কেমন আন্দোলন। দুই-চারজন রাস্তা দখল করে মানুষের দুর্ভোগ করছে। প্রশাসনও এ বিষয়ে নীরব আছে কেন? জনগণকে কষ্ট দিয়ে কখনো দাবি আদায় করা যায় না।’

শাহবাগ মোড়ে ট্রাফিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশকে কোনো উদ্যোগ নিতেও দেখা যায়নি। সকালে এই মোড়ে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। অবরোধস্থলের পাশ দিয়ে সীমিত আকারে যান চলাচলের ব্যবস্থা ছিল। বেশির ভাগ বাস ও যানবাহনকে কাঁটাবন মোড়, মৎস্য ভবন মোড় ও সাবেক শেরাটন হোটেলের মোড় ঘুরে গন্তব্যের দিকে যেতে দেখা যায়।

বেলা আড়াইটা থেকে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভকারীরা শাহবাগে জড়ো হন। তাঁরা সরকারি চাকরিতে ৫ ভাগ প্রতিবন্ধী কোটা বিনা শর্তে বহাল চান। বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত বিক্ষোভ শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে ৫ শতাংশ কোটা প্রণয়ন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তরুণ প্রতিবন্ধী প্রতিনিধি রাখা, জাতীয় প্রতিবন্ধী অধিদপ্তর ও প্রতিবন্ধীবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন।

রোববার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. আলী হোসাইন তাঁদের ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ৫ শতাংশ কোটার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি পালন করে যাব। বর্তমানে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো কোটা নেই। যা আছে, তা হলো প্রহসনের কোটা। কোটা দিতে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত ব্যতীত অন্য কারও হস্তক্ষেপ চলবে না।’