প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে ৫৬ শিক্ষকের পদত্যাগ

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে ৫৬ জন শিক্ষক আজ সোমবার তাঁদের প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন।

গতকাল রোববার পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অকৃতকার্য হওয়া এক ছাত্রীকে ছাত্রলীগের নেতারা জোর করে পরীক্ষা দেওয়ানোর সময় শিক্ষকেরা বাধা দেন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতারা শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন বলে শিক্ষকেরা জানিয়েছেন।

এদিকে ওই ছাত্রী পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন। গত শনিবার উপাচার্যের কাছে দেওয়া এক অভিযোগে বলা হয়েছে, শিক্ষকের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাঁকে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান বলেন, রোববার সকাল সাড়ে নয়টায় তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের কোয়ান্টাম মেকানিকস-১ পরীক্ষা শুরু হয়। এ সময় দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের অকৃতকার্য হওয়া এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ পরীক্ষার হলে নিয়ে আসে। বিভাগের পক্ষ থেকে অনুমোদন না দেওয়ার পরও জোর করে তাঁকে পরীক্ষার হলে আসনে বসিয়ে দেন ছাত্রলীগের নেতারা। বিভাগের শিক্ষকেরা বাধা দিতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদারসহ তাঁর সহযোগী আরও কয়েকজন পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে উদ্যত হন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ওই শিক্ষার্থীকে পাহারা দিয়ে সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ করান।

ওই ছাত্রীকে পরীক্ষা শেষ করানোর পর শিক্ষার্থীদের ডেকে অরডিন্যান্স পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করে ছাত্রলীগ। এ সময় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা বন্ধ করা হয়।

এদিকে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় সোমবার বিকেলে শিক্ষক সমিতি জরুরি সভা আহ্বান করে। সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার, সহসভাপতি ইমরান মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাবির ইকবাল ও সহসভাপতি আদ্রিতা পান্নার বিরুদ্ধে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। পরে উপাচার্যের কাছে তাঁদের লিখিতভাবে বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।

এই ঘটনায় রোববার উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষক ও ছাত্রলীগের নেতাদের নিয়ে সভা করা হয়। সভার একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতারা বের হয়ে এসে প্রতিটি হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে বিশ্ববিদ্যালয় অরডিন্যান্স (ক্লাস, পরীক্ষা, ফলাফল পদ্ধতি) পরিবর্তনের আন্দোলন শুরু করেন। গভীর রাত পর্যন্ত এ আন্দোলন চলতে থাকে।

এদিকে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের পরে রোববার রাতেই সব শিক্ষক প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। শিক্ষক সমিতির সভাপতি মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন বলেন, সোমবার দুপুরের দিকে রেজিস্ট্রারের কাছে ৫৬ জন শিক্ষক পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ২ জন রিজেন্ট বোর্ড সদস্য, ৪ জন ডিন, ৪ জন প্রভোস্ট, ১৪ জন বিভাগীয় চেয়ারম্যান, সব হাউস টিউটর ও সহকারী প্রক্টর রয়েছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আলাউদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

প্রক্টর সিরাজুল ইসলাম বলেন, সোমবার ঢাকায় রিজেন্ট বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার বলেন, এক শিক্ষকের অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ওই ছাত্রীকে ফেল করানো হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষকেরাও অরডিন্যান্স ভঙ্গ করে পরীক্ষা শুরুর আগের দিন বিকেলে পূর্ববর্তী সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশ করেছেন। তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে কিছু কথা-কাটাকাটি হওয়ার কথা স্বীকার করেন।