শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত

শাজাহান খান ।  ফাইল ছবি
শাজাহান খান । ফাইল ছবি

সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন কর্মসূচির জন্য গঠন করা হয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধ চেতনার মঞ্চ’।

আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে নৌ–পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান চলমান অবরোধ স্থগিতের এই ঘোষণা দেন। এর আগে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পক্ষ থেকে আন্দোলনের দায়িত্ব মন্ত্রীর কাছে অর্পণ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবিতে গত বুধবার থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করছেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ব্যানারে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানেরা।

চলমান আন্দোলনে শাহবাগ মোড়ে জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে গতকাল রোববার অনির্দিষ্টকালের জন্য শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচির সময় পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বেলা তিনটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত অবরোধ করার কথা থাকলেও সন্ধ্যার আগে তাঁদের কাউকেই দেখা যায়নি। দিনভর শাহবাগে মোড়ে গত কয়েক দিনের তুলনায় যান চলাচল স্বাভাবিক দেখা যায়।

বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বিচ্ছিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে শাহবাগে জড়ো হন। পরে সাড়ে ছয়টার দিকে শাহবাগে জড়ো হন মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের কর্মীরা। তাঁরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। শাহবাগে তখন আসেন নৌ–পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পক্ষ থেকে আন্দোলনের দায়িত্ব মন্ত্রীর কাছে অর্পণ করা হয়। শাজাহান খান চলমান অবরোধের কর্মসূচি স্থগিত করেন এবং ১৪ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টায় সেগুনবাগিচার স্বাধীনতা হলে সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেন। পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করা হবে বলে ঘোষণা দেন নৌমন্ত্রী।

মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবিতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নাম পরিবর্তন করে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মঞ্চ’ গঠন করেন। তিনি বলেন, ‘দেশে মুক্তিযোদ্ধারা কি মরে গেছে সব? কারও অধিকার নেই মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকার নষ্ট করার। এমন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে যাতে রাজাকার, আলবদরদের সন্তানেরা আন্দোলনের বিস্ফোরণে দেশের মাটি থেকে চিরতরে চলে যায়।’

শাজাহান খান বলেন, ‘এই আন্দোলনকে ধাপে ধাপে যৌক্তিক করার চেষ্টা আমরা করছি। স্বাধীনতাবিরোধীদের নির্মূল করতে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশে শুধু গুটিকয়েক মুক্তিযোদ্ধাই থাকবে না। বাংলার মাঠঘাট দখলে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল সন্তান, প্রজন্ম ও মুক্তিযোদ্ধার। বাংলার মাটিতে রাজাকারদের জায়গা হবে না।’

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আহ্বায়ক আ ক ম জামাল উদ্দিন বলেন, ‘এই আন্দোলনের নেতৃত্ব আমরা মন্ত্রীর হাতে তুলে দিলাম। সারা দেশে দুর্বার আন্দোলন করে আমরা দাবি আদায় করে ছাড়ব। আমাদের বাবা-মা যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করেছে। যুদ্ধ করে, জীবন দিয়েই আমরা আমাদের অধিকার আদায় করব।’

এদিকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা বহালের দাবিতে আজ সোমবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদ। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় হয়ে আবার টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয়।

এর আগে দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদ। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৫ শতাংশ কোটার দাবি জানিয়েছে তাঁরা। লিখিত বক্তব্যে আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদের সমন্বয়ক উইলিয়াম নকরেক বলেন, ‘অন্যান্য কোটা সম্পর্কে বিতর্ক ও ভিন্নমত থাকলেও আমরা দেখেছি আদিবাসী ও প্রতিবন্ধী কোটা রাখার পক্ষে সবার মত রয়েছে। কোটা সংস্কার হতে পারে কিন্তু তা একদমই তুলে দেওয়া আদিবাসী ও অনগ্রসরদের জন্য কল্যাণকর হবে না।’ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। তাঁদের নতুন কর্মসূচি হলো—৯ অক্টোবর দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ, ১০ অক্টোবর দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ এবং ১৩ অক্টোবর বিকেলে শাহবাগে প্রতিবাদী গান ও সংহতি সমাবেশ। বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদ বিক্ষোভ মিছিল করে।

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নতুন কর্মসূচি
সরকারি চাকরিতে ৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা বিনা শর্তে বহালের দাবিতে সরকারকে দুই দিনের সময় দিয়েছেন প্রতিবন্ধীরা। দাবি মানা না হলে ১১ অক্টোবর সকালে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে প্রতিবন্ধীরা মহাসমাবেশ করবেন। এরপরও দাবি আদায় না হলে তাঁরা আমরণ অনশনের হুঁশিয়ারি দেন।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী প্রতিবন্ধীরা আজ বেলা আড়াইটার দিকে শাহবাগ মোড়ের ডিজিটাল বিলবোর্ড থেকে পুলিশ বক্স পর্যন্ত রাস্তা প্রতিবন্ধীরা অবরোধ করেন। তাঁরা দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগানে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দিনভর শাহবাগ মোড়ে যান চলাচল গত কয়েক দিনের তুলনায় স্বাভাবিক ছিল।

সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. আলী হোসেন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে ৫ শতাংশ কোটা প্রণয়ন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তরুণ প্রতিবন্ধী প্রতিনিধি রাখা, জাতীয় প্রতিবন্ধী অধিদপ্তর, প্রতিবন্ধী-বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন।

ঢাকার বাইরের কর্মসূচি:
এদিকে রংপুর, বগুড়া, পঞ্চগড়, নেত্রকোনা, সিলেট, চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, পিরোজপুরে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ কোটা বহালের দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ডসহ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা। এদিকে চট্টগ্রাম নগরের তিনটি মোড়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবিতে সড়ক অবরোধ করা হলে যানজটের সৃষ্টি হয়।