দরপত্রের মারপ্যাঁচে চার লেনের কাজ

কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের টমছম ব্রিজ থেকে বেগমগঞ্জ পর্যন্ত চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পের কাজের দরপত্র নিয়ে জটিলতা চলছে। কাজ না পেয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা উচ্চ আদালতের কাছে প্রতিকার চেয়েছেন। এর মধ্যে নতুন দরপত্র আহ্বান করেছে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। 

সওজের কুমিল্লা অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দাবি, শর্ত পূরণে সমস্যার কারণে এই দরদাতা সর্বনিম্ন হয়েও কাজ পাননি। কিন্তু সওজ ওই দরপত্রের চারজন দরদাতার কাউকেই কাজ না দিয়ে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করেছে। তাতে মাত্র একজন দরদাতা অংশ নিয়েছেন এবং সওজ তাঁকে কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ করে এনেছে।
আদালতের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর ওই প্রকল্পের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর দরপত্র জমা দেওয়ার সময় বাড়িয়ে সংশোধনী প্রকাশ করা হয়। এরপর চারটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়।
চার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং (প্রাইভেট) লি. অ্যান্ড ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানি জেভি ২৫১ কোটি ৮২ লাখ ১৭ হাজার ৯ দশমিক শূন্য ৮ পয়সা দর প্রস্তাব করে সর্বনিম্ন দরদাতা হন। তবে প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ না দিয়ে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই দরপত্র মূল্যায়নে গড়িমসির প্রেক্ষাপটে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২১ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল দেন। এর ধারাবাহিকতায় রিট আবেদনকারীর করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট অপর এক আদেশে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকে কার্যাদেশ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এ অবস্থায় কুমিল্লার সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৪ এপ্রিল আবার দরপত্র আহ্বান করে। এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আরেকটি আবেদন করে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং।এর ওপর চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ১১ এপ্রিল হাইকোর্ট রায় দেন। তাতে রিট আবেদনকারীর দরপ্রস্তাব গ্রহণ করতে এবং তাঁকে কার্যাদেশ দিতে বলা হয়। ১৫ দিনের মধ্যে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে সওজ। পরদিন চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। একই সঙ্গে আবেদনকারীপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলেন। সেই লিভ টু আপিল এখনো বিচারাধীন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সওজ বিভাগ কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান বলেন, ‘প্রথম দরপত্রে যিনি কাজ পেয়েছেন তিনি ননরেসপনসিবল হয়েছেন। তিনি শর্ত পূরণ করেননি। তাই পিপিআর ও মূল্যায়ন কমিটির মতামত নিয়ে দরপত্র বাতিল করা হয়। পরে আমরা পুনরায় দরপত্র আহ্বান করি। ওই দরপত্র কুমিল্লার কোথাও রাখা হয়নি। দরপত্র নিয়ে কোনো বাধা বিপত্তি যেন না আসে সে জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাঁচ জায়গায় ব্যবস্থা রাখা হয়। সেখানে দরপত্র জমা হয়। সেখানে তিনটি গ্রুপ মিলে একটি দরপত্র জমা দেয়। তারা ২০ কোটি টাকা বেশি দাম দিলেও তা ২০১৮ সালের দরদামে প্রস্তাব করা। আগের সর্বনিম্ন দরদাতার দাম ছিল ২০১৫ সালের হিসাবে।’
আদালতের রায় এবং সর্বনিম্ন দরদাতার লিভ টু আপিল আদালতে বিচারাধীন থাকার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মনির হোসেন পাঠান বলেন, ‘নিয়মিত লিভ টু আপিল করার কারণে কাজ করতে কোনো বাধা নেই। এটার ওপর কাজ করা যায়। তাই কাজ চলছে।’