লক্ষ্য ঠিক করেই ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি

মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে বিভিন্ন দলের নেতারা। ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর। ছবি: তানভীর আহম্মেদ
মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে বিভিন্ন দলের নেতারা। ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর। ছবি: তানভীর আহম্মেদ
>

• বিএনপির পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে কর্মসূচি নির্ধারণের তাগাদা আছে
• যুক্তফ্রন্ট–ঐক্য প্রক্রিয়া লক্ষ্যের বিষয়ে একমত হয়ে কর্মসূচিতে যেতে আগ্রহী
• ক্ষমতার ভারসাম্যের বিষয়টি যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়ার কাছে গুরুত্বপূর্ণ
• যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়া জাতীয় সংসদে ও সরকারে ক্ষমতার ভারসাম্য চায়
• জোটের নাম, লক্ষ্য, কর্মসূচি ঠিক করতে ড. কামালের বাসায় কাল বৈঠক
• বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা বৈঠকে থাকতে পারেন

সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া একমত হলেও এখন পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি ঠিক হয়নি। ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সূত্রগুলো বলছে, বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্য চূড়ান্ত করে তারপরেই মাঠে নামতে চায় তিন পক্ষ। এ বিষয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার পক্ষগুলোর বৈঠক হতে পারে।

ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বিএনপির পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে কর্মসূচি নির্ধারণের তাগাদা আছে। কিন্তু যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা নির্বাচন–পরবর্তী লক্ষ্যের বিষয়ে একমত হয়ে তারপরেই মাঠের কর্মসূচিতে যেতে আগ্রহী। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতার ভারসাম্যের বিষয়টি যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়ার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক নির্বাহী ক্ষমতার অবসানের লক্ষ্যে যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়া জাতীয় সংসদে ও সরকারে ক্ষমতার ভারসাম্য চায়। জোট দুটির আরও চাওয়া, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য। এ ছাড়া প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, ন্যায়পাল নিয়োগ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কার্যকর করাও তাদের অন্যতম লক্ষ্য।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তফ্রন্টের একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষমতার ভারসাম্য বিষয়ে শুরু থেকেই জোর দিয়ে আসছে যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়া। প্রথম দিকে এ ব্যাপারে বিএনপি খুব আগ্রহ না দেখালেও এখন তারা এ বিষয়ে কথা বলছে। আগামীকালের বৈঠকে বিষয়টির ওপর জোর দেওয়া হবে।

জানা গেছে, কাল সন্ধ্যায় ড. কামাল হোসেনের বাসায় বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের বৈঠক হতে পারে। নির্বাচন–পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারণ, জোটের নাম এবং কর্মসূচি চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। জোটের একাধিক নাম বিবেচনায় রাখা হয়েছে। তার মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, জাতীয় ঐক্যজোট, ঐক্যফ্রন্ট, জাতীয় ঐক্য প্রভৃতি নাম আলোচনায় রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া মধ্যে সমঝোতা এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কর্মসূচি কী হতে পারে, তা নিয়ে গত সোমবার রাতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের উত্তরার বাসায় দীর্ঘ আলোচনা হয়। সেখানে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের তিন নেতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়া ঘোষিত ৯ দফা লক্ষ্য এবং বিএনপির ১২ দফা লক্ষ্যের মধ্যে মৌলিক ব্যবধান কী, তা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ হয়। পরে ৯ ও ১২ দফার লক্ষ্য সমন্বয় করতে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন ও গণফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ হ ম শফিউল্লাহকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁরা এর খসড়া তৈরি করে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনকে দেবেন।

এ বিষয়ে আ হ ম শফিউল্লাহ গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে সবার দাবি অভিন্ন। লক্ষ্যেও বড় ধরনের পার্থক্য নেই। বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়া ঘোষিত লক্ষ্য সমন্বয় করতে আমরা কাজ শুরু করেছি।’

ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের নেতাদের
কারও কারও মতে, বিএনপি যে ১২ দফা লক্ষ্য ঘোষণা করেছে, তাতে ক্ষমতার ভারসাম্যের বিষয়টির উল্লেখ থাকলেও তা স্পষ্ট নয়। তা ছাড়া নির্বাচনে গেলে আসন সমঝোতার বিষয়টি রয়েছে। যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন ও আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনার সময় এখনো আসেনি।

যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়ার সূত্র জানায়, কামাল হোসেনের বাসায় বৃহত্তর ঐক্যের বৈঠকে যুক্তফ্রন্টের আহ্বায়ক সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। যদিও রোববার রাতে গুলশানে বিএনপির নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সোমবার রাতে আ স ম আবদুর রবের বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে তাঁরা ছিলেন না। তবে বৈঠকে তাঁদের প্রতিনিধি অংশ নেন। আগামীকালের বৈঠকে সব পক্ষের থাকার কথা। ২২ সেপ্টেম্বর মহানগর নাট্যমঞ্চে নাগরিক সমাবেশের পর কাল আবার বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়ার শীর্ষ নেতারা একত্র হচ্ছেন।

জানা গেছে, আ স ম রবের বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী বাদে বিএনপির জোটে থাকা বাকি ১৮টি দলকে বৃহত্তর ঐক্যে যুক্ত করার কথা তোলে বিএনপি। আন্দোলনের শক্তি বাড়াতে দল ও কর্মী-সমর্থকদের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন বিএনপির নেতারা। তাঁদের যুক্তি, জামায়াতে ইসলামী এখন আর নিবন্ধিত দল নয়। তাই এ নিয়ে আলোচনারও প্রয়োজন পড়ে না। বিএনপির নেতাদের এ বক্তব্যের পর যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা কোনো আপত্তি জানাননি বলে জানা গেছে। এ বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের পতনের জন্য আন্দোলনে নামতেই বড় ঐক্যের আলোচনা। দুই দফা দাবি ও লক্ষ্য নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনার পর মোটামুটি ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। এটি চূড়ান্ত হওয়ার পর সমন্বিত দাবি ও লক্ষ্য ঘোষণা করা হবে। একই সঙ্গে আন্দোলনের কর্মসূচিও থাকবে।