কিশোর-কিশোরীর মন বুঝতে হবে

>

• বিশ্বে প্রতি ছয়জনে একজনের বয়স ১০-১৯ বছর
• ১৪ থেকে ১৯ বছর বয়সে অনেক পরিবর্তন ঘটে 
• মানসিক রোগের অর্ধেক শুরু হয় ১৪ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে
• ঠিক সময় পাশে না দাঁড়ালে মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে 
• কিশোর-কিশোরীদের অসুস্থতা–প্রতিবন্ধিতার অন্যতম কারণ বিষণ্নতা
• ১৫-১৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ আত্মহত্যা

কিশোরীটির চিকিৎসা চলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ব্লকে, মনোরোগবিদ্যা বিভাগে। চিকিৎসকেরা বললেন, কিশোরীটি ওসিডি (অফসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার) বা শুচিবাই রোগে ভুগছে। কিশোরীটি একই কাজ বারবার করে। এক কাজ দীর্ঘ সময় ধরে করে।

বিভাগের সংশ্লিষ্ট মনোরোগ চিকিৎসক ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, কিশোরীটি বারবার হাত ধোয়। ও মনে করে ওর হাত পরিষ্কার হয়নি। বারবার একই কাজ করে। তিনি আরও বলেন, কিছু কিশোর–কিশোরী অনেক সময় নিয়ে গোসল করে। এটা মানসিক রোগ। কিশোর-কিশোরী কী করছে, তা মা–বাবাকে খেয়াল রাখতে হবে। তার মনের খবর নিতে হবে। ৩০ মিনিট সময় নিয়ে যে গোসল করছে, তার সমস্যা না বুঝলে কিছুদিন পর সে হয়তো ৪৫ মিনিট সময় নিয়ে গোসল করবে। ক্রমান্বয়ে ওই সময় আরও বাড়বে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পোষ্টার
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পোষ্টার

এই কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে আজ (১০ অক্টোবর) পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘পরিবর্তনশীল বিশ্বে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য’। বাংলাদেশেও দিবসটি সভা-সেমিনার আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে।

কিশোর বয়সটি অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। ১৪ থেকে ১৯ বছর বয়সে অনেকে স্কুল পরিবর্তন করে, অনেকের শোবার ঘরটি পাল্টে যায়, অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকে, কেউ ঢোকে কাজে, অনেকের নতুন বন্ধু জোটে। অনেকের কাছে এসব উত্তেজনার বিষয়। এসব পরিবর্তন কিশোর মনে প্রভাব ফেলে। কারও মনে চাপ পড়ে। এই চাপ মোকাবিলা করতে না পারলে কারও কারও ক্ষেত্রে তা মানসিক রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অনলাইন বা তথ্যপ্রযুক্তি অনেক সুফল বয়ে এনেছে ঠিকই, একই সঙ্গে দিনে বা রাতে ভার্চ্যুয়াল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার সুযোগ কিশোর মনে অনেক চাপেরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেসব কিশোর-কিশোরী সংঘর্ষপূর্ণ এলাকা, প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত জনপদ বা মহামারির মধ্যে আছে, তাদের মানসিক চাপটি ভিন্নতর। এমন অবস্থায় কিশোর-কিশোরীদের মানসিক রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি।


বাংলাদেশের পরিস্থিতি
দেশে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই। ২০০৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় ঢাকা বিভাগে ৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ হয়েছিল। তাতে দেখা যায়, ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু ও কিশোর-কিশোরী কোনো না কোনো ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত।

বিএসএমএমইউর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম এ সালাউদ্দীন কাউসার প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন বিএসএমএমইউর বহির্বিভাগে প্রায় এক শ–জন মানসিক রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ কিশোর-কিশোরী। এ ছাড়া শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য পৃথক ইউনিটও খোলা হয়েছে।

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের কিশোর-কিশোরীদের একটি অংশ মাদকাসক্ত। মানসিক অসুস্থতা এর বড় কারণ। আত্মহত্যা যারা করছে, তাদেরও একটি বড় অংশ কিশোর-কিশোরী।

দেশে মানসম্পন্ন মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রতিষ্ঠান খুবই কম। একই সঙ্গে প্রশিক্ষিত জনবলেরও সংকট আছে। মানসম্পন্ন সেবার প্রতিষ্ঠান মূলত রাজধানী ঢাকায়। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নেই বললেই চলে। আবার সমস্যার তুলনায় মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দও অনেক কম। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে মোট বরাদ্দের মাত্র শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য খাতের জন্য রাখা হয়।

করণীয়
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতিদিনের মানসিক চাপ মোকাবিলায় কিশোর-কিশোরীদের সহায়তা করতে পারেন তাদের মা–বাবা ও শিক্ষকেরা। স্কুলে বা কলেজে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার কার্যক্রমও চালু করা যেতে পারে। মনোরোগ চিকিৎসক ফাতেমা তুজ জোহরা প্রথম আলোকে বলেন, আদর্শ মা–বাবা তাঁরাই, যাঁরা সন্তানের কথা মন দিয়ে শোনেন এবং ভালো–মন্দ নিয়ে সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করেন। সন্তানের মন বুঝতে পারলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।