খালেদা-তারেকের বিকল্প জোবাইদা

মুহাম্মাদ আলতাফ আলী,  জোবাইদা রহমান, হেলালুজ্জামান তালুকদার ও মোস্তফা আলম
মুহাম্মাদ আলতাফ আলী, জোবাইদা রহমান, হেলালুজ্জামান তালুকদার ও মোস্তফা আলম
>

• বগুড়া-৭ বিএনপির কাছে জিয়া পরিবারের আসন হিসেবে পরিচিত
• ভোটের রাজনীতিতে আ. লীগ এখানে অতীতে সুবিধা করতে পারেনি
• আইনি সমস্যা হলে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে তারেকপত্নীকে চান নেতা-কর্মীরা
• আগামী নির্বাচনে আসনটি পেতে তৎপর ক্ষমতাসীনেরা
• আ. লীগের মনোনয়ন পেতে মাঠে অন্তত হাফ ডজন নেতা

গাবতলী ও শাজাহানপুর উপজেলা নিয়ে বগুড়া-৭ আসনটি বিএনপির  কাছে জিয়া পরিবারের আসন হিসেবেই পরিচিত। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে এখানে ধানের শীষ  নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে খালেদা জিয়া কিংবা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রার্থী হবেন। তবে আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নিতে আইনি সমস্যা হলে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে তারেকপত্নী জোবাইদা রহমানকে দেখতে চান বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এখানে অতীতে সুবিধা করে উঠতে পারেনি। তবে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে আগামী নির্বাচনে আসনটি পেতে তৎপর ক্ষমতাসীনেরা। দলের মনোনয়ন পেতে মাঠে আছেন অন্তত হাফ ডজন নেতা। শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো আসনটি শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিতে হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের।

১৯৯১,১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে নির্বাচিত হয়েছেন খালেদা জিয়া। তবে প্রতিবারই আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় উপনির্বাচন হয়েছে। সেখানেও ধানের শীষের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। তিনটি উপনির্বাচনে সাংসদ হন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু। ২০০৯ সালের উপনির্বাচনে সাংসদ হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ।

২০১৪ সালের নির্বাচন  বর্জন করে বিএনপি। আসন ভাগাভাগিতে জাপাকে (এরশাদ) ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। ফলে জাপার প্রার্থী মুহাম্মাদ আলতাফ আলীর সঙ্গে জেপির (মঞ্জু) প্রার্থী আমিনুল ইসলামের লড়াই হয়। নির্বাচনের দিনে ৮৮টি কেন্দ্রে হামলা হয়। পরে স্থগিত কেন্দ্রে নিরুত্তাপ ভোটে মুহাম্মাদ আলতাফ আলী জয়ী হন।

জিয়া পরিবারের দিকে তাকিয়ে বিএনপি
বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, এই মুহূর্তে জিয়া পরিবারের বিকল্প অন্য কাউকে প্রার্থী হিসেবে দেখছেন না তাঁরা। খালেদা বা তারেকই এখানে প্রার্থী হবেন। তবে শেষ পর্যন্ত তা না হলে উত্তরসূরি হিসেবে জোবাইদা রহমানকে প্রার্থী চান তাঁরা।

গাবতলী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ মিলটন বলেন, তাঁরা এখনো আশাবাদী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানই এখানে প্রার্থী হবেন। তবে সরকার কূটকৌশলে তাঁদের নির্বাচনের বাইরে রাখার ষড়যন্ত্রে সফল হলে জোবাইদা রহমানকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান ভোটাররা। শেষ পর্যন্ত জিয়া পরিবারের আসনে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত জিয়া পরিবার নেবে।

দলীয় নেতা-কর্মীরা বলেন, ২০০৯ সালের ২ এপ্রিল উপনির্বাচনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদকে মনোনয়ন দিয়ে এখানে ‘অতিথি সাংসদ’ করা হয়েছিল। যদিও মওদুদ নিজের নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালী-৫ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে হেরে যান। সাংসদ হওয়ার পর এলাকায় খুব একটা আসেননি মওদুদ। ‘বেফাঁস’ কথা বলায় তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হন নেতা-কর্মীরা। তাঁর কারণে দলে দ্বিধাবিভক্তি হয়েছিল। তাঁকে নির্বাচনী এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এবার কোনোভাবেই ‘অতিথি প্রার্থী’ মানবেন না তাঁরা। আগামী নির্বাচনে জিয়া পরিবারের হয়ে কে লড়ছেন, তা নিয়ে চলছে জল্পনা–কল্পনা।

সাবেক সাংসদ হেলালুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘জিয়া পরিবারের নির্দেশে তিনটি উপনির্বাচনে আমি প্রার্থী হয়েছিলাম। আগামী নির্বাচনে ম্যাডাম বা তারেক রহমানই প্রার্থী হবেন। শেষ পর্যন্ত কোনো কারণে তা না হলে জোবাইদা রহমানই বিকল্প প্রার্থী হবেন।’

আওয়ামী লীগে হাফ ডজন নেতা
২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি মোস্তফা আলম। তবে দল শেষ পর্যন্ত আসনটি জাপাকে ছেড়ে দিলে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন তিনি। এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। তিনি ছাড়াও মনোনয়ন দৌড়ে আছেন সংরক্ষিত আসনের সাবেক সাংসদ কামরুন নাহার পুতুল, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক টি জামান নিকিতা, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম আসাদুর রহমান, উপদেষ্টা টি এম মুসা, গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ আজম খান।

মোস্তফা আলম বলেন, ‘গতবার দলের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছি। এরপরও নৌকাকে বিজয়ী করতে মাঠে রয়েছি। বিএনপি এখন লন্ডভন্ড। মনোনয়ন পেলে আসনটা দলকে উপহার দিতে পারব।’

কামরুন নাহার বলেন, ‘বিপদে–আপদে এখনো জনগণের সঙ্গে রয়েছি। আগেও নৌকার প্রার্থী ছিলাম। দল এখন অনেক সুসংগঠিত। মনোনয়ন পেলে এবার বিজয়ী হতে পারব।’

আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী আসাদুর রহমান বলেন, ‘এলাকার উন্নয়ন ও দলের স্বার্থেই মনোনয়ন চাইব। এ জন্য দীর্ঘদিন মাঠে রয়েছি।’

‘জনবিচ্ছিন্ন’ জাপা সাংসদ
বিএনপির নির্বাচন বর্জন আর আওয়ামী লীগের ছাড়ের ফলে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ফাঁকা মাঠে সাংসদ বনে যান জাপার মুহাম্মাদ আলতাফ আলী। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাঁচ বছরে এলাকায় তাঁকে খুব একটা দেখাও যায়নি।

তবে আলতাফ আলী বলেন, বিরোধী দলের সাংসদ হিসেবে তিনি সাধ্যমতো এলাকার উন্নয়নের চেষ্টা করেছেন। যারা তাকে অপছন্দ করে তারাই এসব অপপ্রচার চালিয়ে ভোটারদের বিভ্রান্ত করছে। সবকিছুর পরও তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন।