ফেসবুকে মেডিকেলের ভুয়া প্রশ্ন বিক্রি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার পর বাংলাদেশে প্রথম মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ফেসবুকে মেডিকেলের ভুয়া প্রশ্নপত্র দেওয়ার অভিযোগে পাঁচ যুবকের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় গতকাল বুধবার মামলা হয়। এ ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার পাঁচজনকে দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত (সিএমএম)।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা এলাকা থেকে ওই পাঁচ যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলেন এসব আসামি। আবার ফেসবুকে তাঁরা ঘোষণা দেন, চলতি বছরের মেডিকেলের প্রশ্নপত্র পাওয়া যাবে। ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তাঁদের কাছ থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন আসামিরা। সেই জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে সিম উঠিয়ে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলে আসামিরা, যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং পাবলিক পরীক্ষা আইনে অপরাধ।

সিআইডির উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল হান্নান বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনে মামলা করেন।

মামলায় বলা হয়, ১ নম্বর আসামি কাউসার গাজী (১৯) ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলেন। সেখানে কাউসার ঘোষণা দেন, চলতি বছরের মেডিকেলের প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়। পরে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রশ্ন পেতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসামি কাউসার ফেসবুকের মেসেঞ্জার, ভাইভার, ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেন। পরে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেন। আগের বছরের প্রশ্ন এবং বাজারের বিভিন্ন সাজেশন থেকে প্রশ্ন বাছাই করে মেসেঞ্জার গ্রুপে প্রশ্নপত্র দিয়ে প্রতারণা করতেন।

মামলায় আরও বলা হয়, ২ নম্বর আসামি সোহেল মিয়া অন্যদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভুয়া বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলে অপরাধ করতে সহায়তা করেন। আসামি সোহেল হলেন বিকাশের একজন এজেন্ট।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ৩ নম্বর আসামি তারিকুল ইসলাম ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলেন। ১ নম্বর আসামি কাউসারের মতো তারিকুলও ফেসবুকে মেডিকেলের প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় বলে প্রচার চালান। অপর আসামি রুবাইয়াত তানভীর আদিত্য এবং মাসুদুর রহমান ইমনসহ আরও অনেকে তারিকুলকে সহায়তা করতেন।

মামলার বাদী আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনি বাংলাদেশে প্রথম মামলা করেছেন। ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে মেডিকেলের ভুয়া প্রশ্ন বিক্রি করে আসামিরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপরাধ করেছেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার পাঁচজনকে আজ আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে সিআইডি। আসামিদের আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, আসামিরা সম্পূর্ণ নির্দোষ। কোনো অপরাধ করেনি। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের দুই দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন।

ফেসবুকে ভুয়া মেডিকেল প্রশ্ন বিক্রির অভিযোগে পাঁচ যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ফেসবুকে ভুয়া মেডিকেল প্রশ্ন বিক্রির অভিযোগে পাঁচ যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক (এসআই) শিব্বীর আহমেদ আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলেন, এ আসামিরা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তার উত্তরপত্র পরীক্ষাকেন্দ্রে সরবরাহ করে আসছেন। তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করাসহ দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মেডিকেলে ভর্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত করে আসছেন। এ ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম মেধাবীরা টাকার বিনিময়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করছেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, এ ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন এবং মূল হোতাসহ অন্য সহযোগী আসামিদের পূর্ণাঙ্গ নাম–ঠিকানা সংগ্রহ করে তাঁদের গ্রেপ্তার ও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আসামিদের কর্মপদ্ধতি, ব্যবহৃত ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের পরিচিতি, ব্যবহৃত সফটওয়্যারসহ তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানার জন্য রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। 

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপরাধ
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৩ ধারায় বলা হয়, কোনো ব্যক্তি যদি ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা করেন, তা হবে অপরাধ। এর শাস্তি ৫ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৪ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার প্রোগ্রাম, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, কোনো ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল সিস্টেম বা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে প্রতারণা করার জন্য বা ঠকানোর জন্য অপর কোনো ব্যক্তির পরিচয় ধারণ করেন বা অন্য কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য নিজের বলে দেখান, তা হবে একটা অপরাধ। এর সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি আইনগত কর্তৃত্ব ছাড়া অপর কোনো ব্যক্তির পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, বিক্রয়, দখল, সরবরাহ করে, তা একটি অপরাধ। এ ধারার সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

মোল্লা নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে আসামিরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৪–এর (২) অপরাধ করেছেন। ভুয়া মেডিকেলের প্রশ্নপত্রকে আসল দাবি করে ফেসবুকে প্রচার চালিয়ে আসামিরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৩–এর ২ ধারার অপরাধ করেছেন। ফেসবুকের মেসেঞ্জারসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অপরের জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে সিম তুলে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলে এই আসামিরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬–এর ২ ধারার অপরাধ করেছেন।