মাঠের পাখি মেঠো ছাতারে

মেঠো ছাতারে। রাজশাহীর শিমলা পার্কে।  ছবি: মো. মারুফ রানা
মেঠো ছাতারে। রাজশাহীর শিমলা পার্কে। ছবি: মো. মারুফ রানা

খোলা মাঠের এই পাখিরা ঝাঁকে চলে, ঝাঁক বেঁধে থাকে। প্রায় সারা দিনই ডাকাডাকি করে চলে। খাবারের জন্য মাটিতেই বেশি চরে; লাফিয়ে লাফিয়ে এগোয় সামনের দিকে। প্রয়োজনে ঘাস, বিন্নাবন, কাশবন, নলখাগড়ার বন, আখখেত, পাট‌খেতে গাছ বেয়ে বেয়ে ওপরে উঠে যায় খাবারের তালাশে।

অতিসতর্ক ও ভীত স্বভাবের এই পাখিদের নাম মেঠো ছাতারে। ডোরা সাতভয়লা নামেও পরিচিত। বাগেরহাটে ক্যাঁচকেঁচি প্যঁাচা নামে ডাকা হয়। ইংরেজি নাম স্টিয়েটেড বাবলার। বৈজ্ঞানিক নাম Argya carlei।

এদের মূল খাবার নানা রকম পোকামাকড়। বিশেষ করে আখ‌খেত; লাউ, শিম, বেগুন বা মরিচখেতের ক্ষতিকর পোকা এদের প্রিয়। সঙ্গে ছোট শামুক ও শামুকের ডিম, বিভিন্ন পাকা ফল ও বীজ পেলে আয়েশ করে খায়। আর পানীয়? তাল বা খেজুরের রস হলে মন্দ কী! পছন্দ আছে বটে!

উঁচু খোলা মাঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট গাছ, ছিটকা-নাটাকাঁটার ঝোপ, বেতঝাড়, বঁইচি ফলের গাছ, তাল-খেজুরের চারাসহ অন্যান্য ঝোপঝাড়ে বাসা বানায় এরা। ঝরা পাতার স্তূপ ঘেঁটে এরা যখন খাবার খোঁজে, তখন বেজায় গোলমাল–ঝগড়াঝাঁটি করে নিজেদের মধ্যে। সহজে খাবার পাওয়ার জন্য এদেরকে অনুসরণ করে মাঠের পাখি সুইচোরা, নীলকণ্ঠ ও কসাই পাখিরা। এদের খাবার তল্লাশির সময় পোকামাকড় ওড়ে তো!

মেঠো ছাতারে ২১ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। লম্বা লেজটি এদের শরীরের অর্ধেক। ওজন প্রায় ৫০ গ্রাম। এদের মাথা-পিঠ-পাখা ও লেজের উপরিভাগ মেটে বাদামি, বুক-গলা লালচে বাদামি, পেট লালচে। মাথা-বুক-ঘাড়-পিঠ ও লেজের উপরিভাগে খাড়া খাড়া স্পষ্ট সরু কালচে বাদামি রেখা আঁকা। চোখের বৃত্ত হলুদ, মণি কালো। পা গোলাপি ধূসর, পায়ের আঙুল গোলাপি। হলুদাভ ধূসর ঠোঁট।

মেঠো ছাতারের বাসা সারা বছরই দেখা যায়। তবে মার্চ থেকে মে ও আগস্ট থেকে অক্টোবরে বাসা বেশি করে এরা। গোলগাল খাসা বাসাটির উপকরণ হলো বড় ঘাস, কলাগাছের শিকড় ও আঁশ, আখের পাতা ও বিভিন্ন লতা। স্ত্রী-পুরুষ দুই–ই বাসার কাজ শেষ করে তিন থেকে পাঁচ দিনে। তারপর চকচকে আকর্ষণীয় নীল রঙের তিন–চারটি ডিম পাড়ে।

মাঠের চওড়া আইলের ভেতরও বাসা করতে পারে ছাতারে। এদের ডিম-ছানা দাঁড়াশ সাপের পেটে যায় মাঝেমধ্যে। আবার এদের বাসায় চুরি করে ডিম পেড়ে যায় কোকিলের জাতভাই পাপিয়ারা। স্ত্রী–পুরুষ দুই–ই পালা করে তা দেয় ডিমে। ডিম ফুটে ছানা হয় ১১-১৫ দিনে।

খোলা মাঠের মাটিচর ভরত, পিপিট ঘুঘু, বুনো কোয়েল বা নাগরবাটই পাখিরা এদের ‘বিপদ সংকেতদাতা’ হিসেবে খুবই বিশ্বস্ত মনে করে। কণ্ঠ এদের জোরালো, সুরেলা। শিসও বাজাতে পারে চমৎকার।