চকবাজারে মুঠোফোন না দেওয়ায় শামীমকে খুন করে ছিনতাইকারীরা, গ্রেপ্তার ৩

পুরান ঢাকায় শামীম খুনে জড়িত সন্দেহভাজন দুই খুনিকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার ঢাকার আদালতে হাজির করে পুলিশ। ছবি: আসাদুজ্জামান
পুরান ঢাকায় শামীম খুনে জড়িত সন্দেহভাজন দুই খুনিকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার ঢাকার আদালতে হাজির করে পুলিশ। ছবি: আসাদুজ্জামান

পুরান ঢাকায় শামীম খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে তিন যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চকবাজার থানার পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার হওয়া তিন যুবক ছিনতাইকারী। মুঠোফোন না দেওয়ায় ছিনতাইকারীরা শামীমকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

শামীম খুনের মামলায় গ্রেপ্তার কামরুল হাসান হৃদয় (১৮) নামের এক আসামি গত বুধবার ঢাকার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতকে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছে, শামীম খুনের সঙ্গে জড়িত সব আসামি ছিনতাইকারী। অপর দুজন সন্দেহভাজন খুনি হলেন জিহাদ (২১) ও মোহন (২১)। এ দুজনকে বৃহস্পতিবার আদালতে তুলে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলে আদালত তাঁদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এখন এই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে চকবাজার থানার পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, শামীম খুনে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার তিনজনই চকবাজারে থাকেন।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০ দিন আগে ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকায় আসেন শামীম (২২)। কাজ নেন পুরান ঢাকার ইসলামবাগ এলাকার একটি প্লাস্টিক কারখানায়। সোমবার ভোর পাঁচটায় সহকর্মী মেহেদী হাসানকে সঙ্গে নিয়ে তিনি খাওয়ার জন্য লালবাগে যাচ্ছিলেন। এ সময় অজ্ঞাত চার যুবক শামীম ও মেহেদীকে পথরোধ করে। মুঠোফোন না দেওয়ায় শামীমকে তিন যুবক ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। শামীমের থুতনি, বুকের বাঁ পাশ, ডান কাঁধ ও পিঠে একাধিক ছুরিকাঘাত করা হয়। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শামীমের সহকর্মী মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার দিন ভোরে মাঠা খাওয়ার জন্য লালবাগে যাচ্ছিলেন তাঁরা। পথে পশ্চিম ইসলামাবাগের বাবুল কমিশনারের গলিতে পৌঁছালে চার যুবক তাঁদের আটকায়। তখন শামীম চারজনের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘ছোট ভাই কী হয়েছে? কেন দাঁড়াতে বলছ? মেহেদী আরও বলেন, চার যুবককে ছোট ভাই বলায় তারা শামীমকে ধাক্কা দিয়ে বলে ওঠে, ‘আমরা তোর কেমন ছোট ভাই। তুই কোথায় থাকিস।’ এরপর যুবকেরা শামীমকে ধরে তাঁর কাছ থেকে মুঠোফোন ও টাকাপয়সা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তিন যুবক শামীমকে ধরে একটা গলির ভেতর নিয়ে যায়। সেখানে এলোপাতাড়ি ছুরি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। তখন তিনি (মেহেদী) সেখান থেকে পালিয়ে কারখানায় ফিরে লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। গিয়ে তাঁরা দেখেন, শামীম গলির মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ছিনতাইকারীরা শামীমকে মুঠোফোন দিতে বলেছিল। কিন্তু মুঠোফোন না দেওয়ায় শামীমকে নৃশংসভাবে খুন করে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। খুনের সঙ্গে জড়িত সবাই চকবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা। বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তারা। এ ঘটনায় জড়িত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

নিহত শামীমের ভাই আনোয়ার হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই কয়েক দিন আগে ঢাকায় এসেছিল কাজ করতে। অথচ সামান্য একটা মুঠোফোনের জন্য আমার ভাইকে ওরা খুন করল। আমি ওদের ফাঁসি চাই।’