পাঁচ টাকায় মিলছে গাছের চারা

ক্রেতাকে গাছের চারা দেখাচ্ছেন নার্সারির কর্মী। গত বুধবার মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে।  ছবি: প্রথম আলো
ক্রেতাকে গাছের চারা দেখাচ্ছেন নার্সারির কর্মী। গত বুধবার মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে। ছবি: প্রথম আলো

কয়েক দিন ধরে কাশির সমস্যায় ভুগছেন মিরপুর পল্লবীর শামসুন্নাহার। হঁচি–কাশি সারাতে ভেষজ চিকিৎসার প্রতি তাঁর অগাধ আস্থা। তুলসী পাতা সংগ্রহ করতে প্রতিবেশী কয়েক বাড়িতে খোঁজ করেও পাননি। পরে এক প্রতিবেশীর পরামর্শে তিনি চলে যান মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে। সেখানে ঢাকা সামাজিক বনায়ন নার্সারি থেকে ১৫ টাকায় তিনটি তুলসীগাছের চারা কেনেন।

শামসুন্নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবেশীর পরামর্শে তুলসীগাছ কিনতে এসেছিলাম। এসে তো মুগ্ধ। আজকাল পাঁচ টাকায় গাছ পাওয় যায়, তা ভাবাই যায় না।’ নার্সারি থেকে তিনি একটি লেবু, একটি পেয়ারা এবং একটি বকুলের চারাও কিনেছেন। এই ছয়টি কিনেছেন মাত্র ৩০ টাকায়।

বন অধিদপ্তরের অধীনে দেশের সব উপজেলায় একটি করে নার্সারি রয়েছে। সেখানে গুণগত মানসম্পন্ন বীজ সংগ্রহ, বীজ থেকে চারা উৎপাদন এবং সেসব চারা বিনা মূল্যে জনসাধারণের মধ্যে বিতরণ এবং স্বল্প মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা আছে। যে কেউ নার্সারি থেকে পাঁচ টাকা দামে গাছের চারা কিনতে পারবে। এর অংশ হিসেবে রাজধানীতে ঢাকা সামাজিক বন বিভাগের অধীনে ঢাকা সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। নিজস্ব জায়গা না থাকায় নার্সারিটি বর্তমানে রয়েছে জাতীয় উদ্ভিদের উদ্যানে ভেতরে।

ঢাকা সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানায়, বন সম্প্রসারণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশভাগের পরে বেইলি রোডে নার্সারি চালু করা হয়। প্রথমদিকে নার্সারিতে চারা তৈরি করে বিনা মূল্যে জনসাধারণের মধ্যে বিতরণ করা হতো। ১৯৭৪ সাল থেকে চারা বিক্রি শুরু হয়। বেইলি রোডের জায়গা ছেড়ে দিতে হয় বলে ২০১৭ সালের মে মাস থেকে নার্সারিটি জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে আনা হয়েছে। শুরুতে প্রতিটি চারার দাম ছিল ২৫ পয়সা করে। ২০১৬ সালে থেকে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ টাকা।

গত বুধবার দুপুরে নার্সারিতে গিয়ে দেখা যায়, কেউ কেউ বীজ বপনের জন্য বেড তৈরি করছেন, কেউ ছোট ছোট চারার পরিচর্যা করছেন, কেউবা আবার ঘুরে ঘুরে ক্রেতাকে গাছের চারা দেখাচ্ছেন।

হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই ধানমন্ডি থেকে চারা কিনতে এসেছেন শফিক ইসলাম। তিনি বেশ সময় নিয়ে ঘুরে ঘুরে নার্সারির গাছের চারা দেখেন। পরে কয়েকটি লেবু, পেয়ারা, জাম্বুরা, চালতার চারা কেনেন। বাসার ছাদে গাছগুলো লাগাবেন জানিয়ে শফিক বলেন, যদিও গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় পার হয়ে গেছে। তবে বীজের গাছ বলে কিনছেন তিনি।

>মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে সামাজিক বনায়ন নার্সারিতে পাওয়া যায় হরেক রকম গাছের চারা। এই নার্সারিটি আগে ছিল বেইলি রোডে।

মালি, তত্ত্বাবধায়কসহ ১২ জনের একটি দল আছে এই নার্সারিতে। তাঁরা জানান, বর্ষা মৌসুমেই সাধারণত চারা বিক্রি হয় বেশি। তবে সারা বছরই এখান থেকে চারা বিক্রি হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট ৩ লাখ ৪০ হাজার গাছের চারা বিক্রি করা হয়েছে। এখানে সব ধরনের গাছের চারা থাকলেও ফলের এবং কাঠের চারার চাহিদা বেশি। এর মধ্যে পেয়ারা, লেবু, জলপাই, আম, কাঁঠাল, সেগুন, আকাশমণি, তেলসুর, মেহগনি এসবের চারা বিক্রি হয় বেশি। এ ছাড়া বকুল, কাঞ্চন, কৃষ্ণচূড়া গাছেরও বেশ কিছু ক্রেতা রয়েছে। তবে এখানে মৌসুমি ফুলের চাষ হয় না।

মালি জহিরুল ইসলাম বলেন, সব বয়সী ক্রেতা এলেও বয়স্ক ক্রেতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও এখান থেকে চারা সংগ্রহ করে। তবে ছাদবাগান তৈরি বা শখের বশে অনেকে গাছের চারা সংগ্রহ করেন।

ক্রেতারা জানান, স্বল্পমূল্যে গাছের চারা বিক্রির উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। কিন্তু প্রচারের অভাবে অনেকেই এই নার্সারির কথা জানেন না। তা ছাড়া জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের শেষ মাথায় নার্সারি হওয়ায় বয়স্কদের জন্য এখানে আসাটা বেশ কষ্টকর। আর উদ্যানে গাড়ি প্রবেশের অনুমতি না থাকায় চারা নিয়ে যেতে বেশ ঝক্কি পোহাতে হয়।

এসব অভিযোগ সম্পর্কে অবগত আছেন উল্লেখ করে সামাজিক বন বিভাগের (ঢাকা) ফরেস্ট রেঞ্জার মনিরুজ্জামান বলেন, নার্সারি করার জন্য বন বিভাগের নিজস্ব জমি না থাকায় ক্রেতাদের এ ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জমি বরাদ্দের জন্য বারবার ঢাকা জেলা প্রশাসক ও গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও জমি পাওয়া যায়নি। এমনকি গাছের ছায়ার নিচে চারা করতে হয় বলে চারার গুণগত মানও কিছুটা কমে যাচ্ছে।