প্রতিবন্ধী কোটার আইনি সুরক্ষা থাকলেও পরিপত্র দিয়ে বাতিল!

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটার দাবিতে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের অবস্থান কর্মসূচিতে দুই শিক্ষার্থী। গতকাল সকালে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে।  ছবি: প্রথম আলো
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটার দাবিতে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের অবস্থান কর্মসূচিতে দুই শিক্ষার্থী। গতকাল সকালে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে। ছবি: প্রথম আলো
  • আইনে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা সংরক্ষণ ও বয়স শিথিল করতে বলা হয়েছে
  • অন্য কোটার সঙ্গে প্রতিবন্ধীদের কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক
  • সব চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটার দাবিতে আন্দোলন চলছে

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিলের পর একের পর এক জটিলতা সামনে আসছে। এখন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ই বলছে, অন্যান্য কোটার সঙ্গে প্রতিবন্ধীদের কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ, আইনে স্পষ্ট করে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা সংরক্ষণ ও তাঁদের বয়স শিথিল করার কথা বলা আছে। সেখানে আইন সংশোধন না করে পরিপত্র জারি করে আইনের কোনো বিষয় বাদ দেওয়া যায় না।

প্রতিবন্ধী কোটার দাবিতে আন্দোলনকারী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা বলছেন, শুধু আইনই নয়, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য সংবিধানেও বিশেষ বিধানের কথা বলা হয়েছে। সেই হিসেবে কোটা একেবারে বাতিলের সিদ্ধান্ত সংবিধানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।

সব চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষণসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদ। রাজধানীর শাহবাগে এক সপ্তাহ ধরে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিল তারা। এর মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেছে সংগঠনটি।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুলতান মীর্জা প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুঃখজনক হচ্ছে, রোদবৃষ্টি উপেক্ষা করে এত দিন আমরা আন্দোলন করছি। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কেউ আমাদের দেখতে আসেননি।’ সংগঠনের আহ্বায়ক মো. আলী হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মাঠের কর্মসূচি স্থগিত করলেও দাবি আদায়ে তাঁদের অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

সরকার কোটা বাতিলের পর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাশাপাশি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরাও কোটা সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। এত দিন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ৪৫ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হতো। বাকি ৫৫ শতাংশ পদে নিয়োগ হতো অগ্রাধিকার কোটায়। ২০১২ সালে অগ্রাধিকার কোটায় কাঙ্ক্ষিত যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেই কোটা থেকে ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণের নিয়ম চালু হয়। সবার চাওয়া ছিল, কোটা সংস্কার করে যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনা। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের দাবিও ছিল কোটা সংস্কার। কিন্তু সংস্কার না করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৪ অক্টোবর পুরো কোটাই বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। পরিপত্রে প্রতিবন্ধীদের কোটার বিষয়েও আলাদা কিছু বলা নেই।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩–এর তফসিল ১০–এর (ঙ) অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত বয়সসীমা শিথিল করা এবং যথাযথ কোটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। সেখানে উল্টো কোটা বাতিল করে দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, পরিপত্র আইনের ওপরে হতে পারে না। প্রতিবন্ধীদের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরেও আছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি প্রতিবন্ধীদের কষ্ট করে আন্দোলন না করার অনুরোধ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবন্ধীদের কোটা আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত থাকবে। তবে এ–সংক্রান্ত পরিপত্র বা প্রজ্ঞাপন কবে জারি হবে, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।

আন্দোলনকারী প্রতিবন্ধীরা বলছেন, এখন শিক্ষায় প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। সেখানে তাঁদের মূলধারার চাকরিতে সুযোগ সৃষ্টির জন্য এত দিন চালু থাকা ১ শতাংশ কোটা বাড়ানো উচিত ছিল। কিন্তু সেটা না করে কোটা বাতিল করে তাঁদের পেছনে রাখার চেষ্টা হচ্ছে বলে তাঁরা মনে করছেন।

আন্দোলনকারী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক শিক্ষা বিষয়ের স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মো. মোবারক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন প্রায় দেড় শ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১০০, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রায় ১০০ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন ৫০ জনের মতো। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও সংখ্যাটি বাড়ছে। সে জন্য সব চাকরিতে কমপক্ষে ৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা রাখা উচিত। কিন্তু এত দিন ধরে চলা ১ শতাংশ কোটাও বাতিল করা হয়েছে, যা দুঃখজনক।