শিগগির মাঠে নামছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গত শনিবার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। প্রথম আলো ফাইল ছবি
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গত শনিবার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। প্রথম আলো ফাইল ছবি
>

• আজ ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে কর্মসূচি চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে
• ঐক্যফ্রন্টের দাবি ও লক্ষ্যকে সমর্থন দিয়েছে ২০ দলীয় জোট
• সরকারবিরোধী বৃহত্তর জোটকে স্বাগত জানিয়েছে ২০ দলীয় জোট
• বিকল্পধারা ছাড়া ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে যুক্তফ্রন্ট
• আবার বিকল্পধারা ভাঙতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে

সাত দফা দাবি আদায়ে মাঠে নামছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সিলেটের পথে রোডমার্চ এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ করার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। আজ মঙ্গলবার ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে কর্মসূচি চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক  প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা হতে পারে।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট গতকাল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্যকে সমর্থন দিয়েছে এবং সরকারবিরোধী বৃহত্তর এই জোটকে স্বাগত জানিয়েছে।

এদিকে বিকল্পধারা  ছাড়াই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকে দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে যুক্তফ্রন্ট। এই জোটের চেয়ারম্যান হলেন বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। জোটের গুরুত্বপূর্ণ বাকি দুটি দল যুক্ত হয়েছে জাতীয় ​ঐক্যফ্রন্টে। আবার বিকল্পধারা ভাঙতে পারে বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

বিএনপি, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, ঐক্য প্রক্রিয়া এবং যুক্তফ্রন্টের দুই শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ও নাগরিক ঐক্য মিলে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গত শনিবার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। আজ মঙ্গলবার জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের উত্তরার বাসায় নতুন এ জোটের বৈঠক হওয়ার কথা। এতে বিএনপিসহ সবগুলো দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা যোগ দেবেন। কামাল হোসেনের পক্ষে তাঁর প্রতিনিধিরা থাকবেন। এ ছাড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মইনুল হোসেনেরও বৈঠকে থাকার কথা রয়েছে।

নতুন এই জোটের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.)–এর মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে ঢাকার বাইরে জোটের সফর শুরু হতে পারে। মাজার জিয়ারতের পর সিলেটে সমাবেশ করবে। এ সময় রোডমার্চ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান ঐক্যফ্রন্টের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা। এরপর হজরত শাহ মখদুমের (রহ.) শহর রাজশাহী ও হজরত শাহ আমানতের (রহ.) শহর চট্টগ্রামে যাবেন তাঁরা।

ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ঐক্যফ্রন্টের ঘোষিত লক্ষ্য বাস্তবায়নের শপথ নিতে সব নেতা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাবেন। পরিবর্তনের বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি শুরু হবে। আজকের বৈঠকে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান তিনি। 

দ্বিধাবিভক্ত যুক্তফ্রন্ট
ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর বিকল্পধারা, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে গাঠিত যুক্তফ্রন্ট অনেকটা কার্যকারিতা হারিয়েছে। জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য এখন ব্যস্ত ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে। আর বিকল্পধারা বি চৌধুরীর নেতৃত্বে নতুন বড় জোট গঠনের পরিকল্পনা করছে।

এ ছাড়া যুক্তফ্রন্টে সম্প্রতি যোগ দেওয়া সোনার বাংলা পার্টি ও জনদল থাকছে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তফ্রন্টের এক শীর্ষ নেতা জানান, ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর যুক্তফ্রন্টের আর কোনো প্রাসঙ্গিকতা থাকছে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রথম আলোকে বলেন, একটি লক্ষ্য সামনে রেখে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়েছে। এখন পথ আলাদা হয়ে গেছে। দুটি দল ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত হয়েছে। আর ঐক্যফ্রন্ট সেই একই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।

তবে বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তফ্রন্ট ভাঙেনি। ঐক্যফ্রন্ট গঠন নিয়ে মতবিরোধ হয়েছে, তাতে পুরোনো জোট ভাঙার কিছু নেই। শিগগিরই যুক্তফ্রন্টের বৈঠক ডাকা হতে পারে।

নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিকল্পধারার যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না—এ প্রসঙ্গে মাহী বি চৌধুরী বলেন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্বাধীনতাবিরোধীদের বাদ ​দিলে এবং ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করলে কোনো দাওয়াত ছাড়াই ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেবে বিকল্পধারা। 

বিকল্পধারায় ভাঙন গুঞ্জন!
গত শনিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের দিনেই ​বিকল্পধারার দুই নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। তাঁরা হলেন বিকল্পধারার সহসভাপতি শাহ আহাম্মেদ বাদল ও কৃষিবিষয়ক সম্পাদক জানে আলম হাওলাদার। এরপর থেকে এ গুঞ্জন শুরু হয় যে বিকল্পধারা ভাঙতে পারে।

বহিষ্কৃত দুজনের একজন শাহ আহাম্মেদ বাদল গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বি চৌধুরী তাঁর একমাত্র পুত্র মাহীর জন্য ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিতে পারেননি। এ নিয়ে দলের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। তাঁরা বিকল্পধারার নতুন কমিটি গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ জন্য শিগগির তলবি সভা করবেন।

তাঁদের সঙ্গে আর কারা আছেন, এ প্রশ্নের জবাবে শাহ আহাম্মেদ কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় সম্পাদক আকতারুজ্জামান ও যোগাযোগবিষয়ক খন্দকার জোবায়েরসহ কয়েকজনের নাম বলেন। তবে এঁদের মধ্যে আকতারুজ্জামান ও জোবায়ের প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বিকল্পধারায় আছেন; বি চৌধুরী ও মাহী বি চৌধুরীর সঙ্গেই আছেন।

মাহী বি চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বহিষ্কৃত দুজন ছাড়া বাকি সব নেতা দলের সঙ্গে আছেন।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় বিকল্পধারা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, বহিষ্কারের পর শাহ আহাম্মেদ বিভিন্ন বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তিনি যেসব নেতার তাঁর সঙ্গে থাকার দাবি করেছেন, তাঁরা সবাই গতকাল চিঠি দিয়ে বি চৌধুরীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। তাঁদের পাঁচজনের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি গণমাধ্যমের কাছেও পাঠিয়েছে বিকল্পধারা।