২০ দল থেকে বেরিয়ে গেল ন্যাপ ও এনডিপি

সংবাদ সম্মেলনে ন্যাপ ও এনডিপির নেতারা। ছবি: প্রথম আলো
সংবাদ সম্মেলনে ন্যাপ ও এনডিপির নেতারা। ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির বিরুদ্ধে জোটের অন্য শরিক দলগুলোকে অন্ধকারে রাখার অভিযোগ এনে ২০-দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গেল বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি—ন্যাপ ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি—এনডিপি। দল দুটি বলছে, তারা জোটের সঙ্গে ‘সম্পর্ক ছিন্ন’ করেছে।

আজ মঙ্গলবার বিকেল তিনটায় গুলশানের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি।

জেবেল রহমান গাণি বলেন, ‘১/১১-এর কুশীলব, মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নকারী যখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নামে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, তখন আমরা মনে করি বিএনপি তার সকল নৈতিক অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে ২০-দলীয় জোটের শরিক দল ন্যাপ ও এনডিপি সাংবিধানিক, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির স্বার্থে আজকে এই মুহূর্ত থেকে জোটের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করছে।’

লিখিত বক্তব্যে জেবেল রহমান গাণি অভিযোগ করেন, বিএনপি নতুন জোটে যাওয়ার বিষয়ে সব সময় ২০-দলীয় জোট শরিকদের অন্ধকারে রেখেছিল। তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিলাম। মতপার্থক্য ও মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও জোটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সব সময় আন্তরিক ছিলাম। এমনকি ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে নানা ধরনের লোভনীয় প্রস্তাব থাকার পরও জোট ত্যাগ করিনি। এই ত্যাগকে বিএনপি মূল্যায়ন করেনি।’

জেবেল রহমান বলেন, ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামক একটি জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। দুঃখজনক হলেও সত্য, ঐক্যফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করতে গিয়ে বিএনপি ও তার নতুন বন্ধুরা যেসব ঘটনা ঘটিয়েছে, তা সত্যিই দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক। তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের ক্ষেত্রে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রধান বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট সংগঠনের নায়কদের আচরণ সমগ্র জাতির সঙ্গে আমাদেরও হতাশ করেছে। সাবেক রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এ ধরনের আচরণ রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়ে জেবেল রহমান বলেন, ‘একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাই চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে, একটি কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আপনি অবিলম্বে সব রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় সংলাপের আয়োজন করুন, যার মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিতে একটি সুস্থ ধারা প্রতিষ্ঠিত হবে। সবাই মিলে আগামী দিনে একটি সুখী সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হব।’

আওয়ামী লীগ থেকে কোনো প্রস্তাব পেয়েছেন কি না? এ বিষয়ে জেবেল রহমান গাণি বলেন, ‘কোনো দল আমাদের কাছে তালিকা চায়নি। মহাজোট থেকেও কোনো অফার পাইনি। আমরা এই মুহূর্তে পর্যবেক্ষণ করতে থাকব।’

কোনো লোভ ও চাপের কারণে ২০-দলীয় জোট ছাড়লেন কি না, সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে জেবেল রহমান বলেন, ‘লোভ ও চাপ যে ছিল না, তা বলা যাবে না। তবে এই মুহূর্তে জোট ছাড়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের লোভ ও চাপ নেই। বিএনপির গৃহীত পদক্ষেপের কারণে এই মুহূর্তে জোটে থাকা যাচ্ছে না।’

বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ন্যাপের সভাপতি বলেন, ‘এমনকি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন যে মামলায় কারাগারে রয়েছেন, সে মামলা দায়েরের নেপথ্য নায়কেরা আজ বিএনপির পাশে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিএনপির বর্তমান যেসব কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করছি, এগুলো থেকে তারা ফিরলে আবারও তাদের সঙ্গে ঐক্য সম্ভব।’

এক প্রশ্নের জবাবে জেবেল রহমান আরও বলেন, জোটনেত্রী খালেদা জিয়া আট মাস আগে কারাগারে যাওয়ার পর জোটের ব্যানারে কোনো কর্মসূচি করতে না পেরে তারা ‘ব্যথিত’।

প্রসঙ্গত বিএনপি গত শনিবার ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, জাসদ (জেএসডি) ও নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে একটি জোট করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।