দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কমে যাবজ্জীবন

সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ ও তাঁর স্ত্রী রহিমা খানমকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডের সাজা পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আবদুল মবিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

ওই মামলায় ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩–এর বিচারক রায় দেন। রায়ে ওই দম্পতির ভাগনে নাজিমুজ্জামান ওরফে ইয়ন ও তাঁর বন্ধু রাজু আহমেদ ওরফে রাজুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ রায়ের পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে কারাগারে থাকা আসামিরা পৃথক আপিল করেন।

এসবের ওপর শুনানি শেষে ১১ অক্টোবর হাইকোর্ট রায়ের জন্য ১৬ অক্টোবর দিন রাখেন। আজ ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল খারিজ করে আসামিদের দণ্ড পরিবর্তন করে রায় দেওয়া হয়।

আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী ও আবদুল মতিন খসরু। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুজ্জামান রুবেল।

পরে মনিরুজ্জামান রুবেল প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সময় আসামি ইয়নের বয়স ২১ ও রাজুর বয়স ২০ ছিল বলে অভিযোগপত্রে এসেছে। তাঁদের বয়স বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।

রাষ্ট্রের এই আইন কর্মকর্তা জানান, ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মুঠোফোনের সূত্র ধরে তদন্তের একপর্যায়ে শফিকুল ইসলাম সুজন নামের (তখন ১৮ বছর) সন্দেহভাজনকে একজনকে র‍্যাব-৩ গ্রেপ্তার করে। পরে থানা থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে অভিযোগপত্রে তাঁর নাম ও বিষয়টির উল্লেখ নেই। এই বিষয়ে তদন্ত করতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

নিহত ফরহাদ খাঁ দৈনিক জনতার জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১১ সালের ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর নয়াপল্টনের বাসার শোয়ার ঘর থেকে সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ ও তাঁর স্ত্রী রহিমা খানমের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই দিনই ফরহাদ খাঁর ছোট ভাই আবদুস সামাদ খান বাদী হয়ে পল্টন থানায় হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পরপরই পুলিশ আসামি ইয়নকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ২০১১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আসামি রাজুকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাজু আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

আসামিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ফরহাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসেট, চুরি করা টাকা, স্বর্ণালংকার, রক্তমাখা জামাকাপড় ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি চাকু উদ্ধার করা হয়। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ঘটনা তদন্ত করে ২০১২ সালের ২ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। আদালত ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠন করেন। বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১২ সালে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে।