বিএনপি নতুন জোটে, ভাঙন পুরোনোতে

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য নতুন করে জোট করেছে বিএনপি। এই জোট নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা-সমালোচনা চলার মধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গেছে দুটি শরিক দল। জোট ত্যাগী দল দুটি বিএনপির বিরুদ্ধে একক কর্তৃত্ব চর্চা ও শরিক দলগুলোকে অন্ধকারে রাখার অভিযোগ তুলেছে। যদিও বিষয়টিকে রাজনীতির অংশ হিসেবে দেখছে বিএনপি এবং এতে বড় ধরনের কোনো সমস্যা দেখছে না।

বিএনপির বিরুদ্ধে জোটের অন্য শরিক দলগুলোকে অন্ধকারে রাখার অভিযোগ এনে আজ মঙ্গলবার বিকেলে ২০-দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)। দল দুটি বলছে, তারা ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। দল দুটি মনে করছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নামে ‘১/১১-এর কুশীলব ও মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নকারীরা’ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। এ কারণে বিএনপি তার সব নৈতিক অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়েছে।

২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল ইসলামী ঐক্যজোট। তার আগেও এই জোটে ভাঙন এসেছিল। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে শেখ শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) এই জোট থেকে বেরিয়ে যায়। তখন দলটি অভিযোগ করেছিল, ২০ দলের জোটে বিএনপি-জামায়াত সব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়, অন্যদের কথা বলার সুযোগ দেয় না। এ কারণে তারা জোটে থাকেনি।

জোটের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, কোনো দল জোটে না থাকতে চাইলে জোর করার কিছু নেই। নির্বাচন সামনে থাকায় হয়তো কোনো প্রলোভনের কারণে তারা (ন্যাপ-এনডিপি) জোট ছেড়েছে। রাজনীতিতে জোট গড়া, জোট ভাঙা এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটি নিয়ে খুব বেশি ভাবার কিছু নেই।

গত শনিবার গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। এই ফ্রন্টের ঘোষণায় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে সর্বদলীয় গ্রহণযোগ্য সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তির দাবি করা হয়েছে। যদিও শর্ত না মানার কারণ দেখিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়নি বিকল্পধারা বাংলাদেশ। জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে বিকল্পধারা প্রথম থেকেই কিছু শর্ত দিয়ে আসছিল। এসব শর্তের কারণে বারবার ঐক্যপ্রক্রিয়া গঠনের কাজ পিছিয়ে যাচ্ছিল। পরে বিকল্পধারাকে বাদ রেখেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়।

বিএনপির জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করে আজকের সংবাদ সম্মেলনে ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট গঠন নিয়ে যাঁদের অগ্রণী ভূমিকা দেখা যাচ্ছে, তাঁদের প্রায় সবাই ১/১১-এর অরাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁদের অনেকেই ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এমনকি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন যে মামলায় কারাগারে রয়েছেন, সে মামলা দায়েরের নেপথ্য নায়কেরা বিএনপির পাশে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ২০-দলীয় জোটে বিএনপি শরিক দলগুলোকে অন্ধকারে রেখেছে, এ বিষয়টি সঠিক নয়। কারণ জোটের বৈঠক হয় সব দলকে সঙ্গে নিয়ে। জোটের বিভিন্ন সিদ্ধান্তও শরিকদের মতামত নিয়ে গ্রহণ করা হয়। তিনি আরও বলেন, ন্যাপ-এনডিপি চলে যাওয়ায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের ব্যাঘাত বা বাধার সৃষ্টি হবে না।

বিএনপির একটি সূত্র বলছে, বিএনপি নতুন জোটের দিকে এখন বেশি মনোযোগ দিতে চাচ্ছে। যে কারণে ২৩ অক্টোবর সিলেট থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি শুরু হবে। এরপর দেশের সব বিভাগ ও মহানগরীতে কর্মসূচি পালন করবে ঐক্যফ্রন্ট। নতুন এই জোটে বিএনপির দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী নেই। এ ছাড়া ২০-দলীয় জোটের আরও কয়েকটি দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিষয়ে তাদের মতামত জানায়নি। এরপরও বিএনপি আগের জোটকে সঙ্গে নিয়েই নতুন জোট নিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন এগিয়ে নিতে চায়।