প্রতিরক্ষা সহযোগিতা স্থায়ী ভিত্তি পাচ্ছে

>

• চার দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন সৌদি আরবে
• রিয়াদে আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌদি বাদশাহর বৈঠক
• বৈঠক শেষে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার স্মারক সই হতে পারে

বছর তিনেক আগে আইএসবিরোধী সৌদি জোটে যোগ দেওয়ার পর থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে স্থায়ী ভিত্তি দিতে দুই দেশ সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছে।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আইএসবিরোধী সৌদি নেতৃত্বাধীন ৪১টি দেশের জোটে (ইসলামিক মিলিটারি কাউন্টার টেররিজম কোয়ালিশন) যোগ দিলেও মাঠের লড়াইয়ে না যাওয়ার ব্যাপারে শুরু থেকেই বলে এসেছে বাংলাদেশ। এরপরও এই জোটের গবেষণা এবং তদন্তকাজে বাংলাদেশ থেকে জনবল নিয়োগ করতে চাইছে সৌদি আরব। পাশাপাশি সৌদি আরব তাদের ভূখণ্ড থেকে মাইন অপসারণ, সীমান্ত সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা অবকাঠামোর বিভিন্ন কাজে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সহযোগিতা চায়।

চার দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিকেলে সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন।

 ঢাকা ও রিয়াদের কূটনৈতিক সূত্রগুলো গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে জানিয়েছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ বুধবার রিয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের বৈঠক হবে। এই বৈঠক শেষে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার স্মারক সই হতে পারে।

দুই দেশের মধ্যে সইয়ের অপেক্ষায় থাকা প্রতিরক্ষা-বিষয়ক সমঝোতা স্মারক নিয়ে বাংলাদেশের কূটনীতিকেরাও সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তাঁরা বলছেন, প্রায় দুই বছর ধরে আলোচনা শেষে চূড়ান্ত হওয়া সমঝোতা স্মারকটি দুই দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা খাতে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দেবে। এটি সই হলে দুই দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার হবে। এসব সহযোগিতার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সৌদি আরবে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের কাজের সুযোগ তৈরি হওয়া।

দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন স্তরে আলোচনা করছে সৌদি আরব। বিশেষ করে মাইন অপসারণ, সীমান্ত রক্ষাসহ অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতার বিষয়গুলো নিয়েও দুই দেশের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তেলসমৃদ্ধ দেশটি দ্রুত এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সহযোগিতা পেতে আগ্রহী।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আরও কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হবে।

ঢাকা ও রিয়াদের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমদ সিদ্দিক ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি এবং ২০১৭ সালের নভেম্বরে সৌদি আরব সফর করেন। ওই সময় সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা স্থাপনা নির্মাণ, সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, মাইন অপসারণ, বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজের পরিচর্যা নিয়ে দেশটির সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়। পরে সৌদি আরবের সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ আল আয়েশ, সৌদি আরবের সশস্ত্র বাহিনীর উপপ্রধান এয়ার মার্শাল ফায়াদ বিন হামিদ আল রুহাইলি এবং সৌদি আরবের জাতীয় নিরাপত্তা প্রধান ঢাকায় এসে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করার প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে গত দুই বছরে একাধিক বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।

রিয়াদে অবস্থান করা কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, সৌদি আরবের দেওয়া প্রস্তাবে এখন পর্যন্ত মাইন অপসারণ এবং সীমান্ত সুরক্ষার ব্যাপারে বাংলাদেশের আগ্রহ রয়েছে। তবে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে সৌদি আরবের সংঘাত চলতে থাকায় সীমান্ত সুরক্ষায় সহযোগিতা কিংবা মাইন অপসারণে অংশ নেওয়ার আগে কোথায়, কখন কাজ করবে, তা আরও ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ।

দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক এলাহী চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, দুই দেশের মধ্যে এমনিতেই প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নানা ধরনের সফর বিনিময় হয়ে থাকে। এসব সহযোগিতা আরও বাড়বে। তবে ইয়েমেনে অভিযান চালানোর পাশাপাশি কাতারের সঙ্গেও সৌদি আরব বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে। তাই সৌদি আরবের হয়ে কোথাও লড়াইতে জড়িয়ে পড়া সমীচীন হবে না।