দুই ইউনিটের ফেল করা শিক্ষার্থীরাই 'ঘ' ইউনিটের প্রথম-দ্বিতীয় হয়েছেন

প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ রেখেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়। এই ইউনিটে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে যে দুজন শিক্ষার্থী প্রথম হয়েছেন, এর আগে তাঁরা দুজন যথাক্রমে ‘ক’ (বিজ্ঞান অনুষদ) ও ‘গ’ (ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ) ইউনিটের পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন। এ ছাড়া গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর ‘ঘ’ ইউনিটে পাসের হারও অনেক বেড়েছে।

বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক থেকে পাস করে আসা শিক্ষার্থীরা ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হয়ে বিভাগ পরিবর্তন করতে পারেন। এই ইউনিটে সব বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারেন। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম পরিচালনা করে।

ফলাফলে দেখা গেছে, ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন জাহিদ হাসান (আকাশ)। তিনি ১২০ নম্বরের মধ্যে মোট পেয়েছেন ১১৪ দশমিক ৩০ নম্বর। এই পরীক্ষার মাসখানেক আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। তাতে ফেল করেছিলেন জাহিদ। ‘গ’ ইউনিটের পরীক্ষায় ১২০ এর মধ্যে জাহিদ পেয়েছিলেন ৩৪ দশমিক ৩২।

‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষায় জাহিদ বাংলায় ৩০ এর মধ্যে ৩০ এবং ইংরেজিতে ৩০ এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৩০ নম্বর পেয়েছেন। আর ‘গ’ ইউনিটের পরীক্ষায় তিনি বাংলায় ১০ দশমিক ৮ ও ইংরেজিতে ২ দশমিক ৪০ নম্বর পেয়েছিলেন। উচ্চমাধ্যমিকে ব্যবসায় শিক্ষা থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় শিক্ষা পড়াতে ‘গ’ ইউনিটের মাধ্যমে ভর্তি হন। ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ‘ঘ’ ইউনিটে মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী পেয়েছেন ৯৮ দশমিক ৪০ নম্বর। জাহিদের সঙ্গে তাঁর নম্বরের ব্যবধান ১৫ দশমিক ৯, যা ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষার ইতিহাসেও নজিরবিহীন

অন্যদিকে বিজ্ঞান শাখা থেকে ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছেন তাসনিম বিন আলম। তিনি পেয়েছেন ১০৯ দশমিক ৫০ নম্বর। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় তিনি ফেল করেছিলেন। ১২০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছিলেন ৪৩ দশমিক ৭৫।
এই দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এক মাসের ব্যবধানে দুটি পরীক্ষায় এই দুই শিক্ষার্থীর ফলাফলের বিশাল ফারাকে ক্যাম্পাসজুড়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে। এই ফলাফলের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফলাফল প্রস্তুত হয়েছে। এটিকে আমরা অস্বাভাবিক মনে করছি না। প্রশ্নপত্র ফাঁসের নিশ্চিত কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি।’

১২ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও বাইরের ৮১টি কেন্দ্রে একযোগে সকাল ১০ টায় ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শুরুর আগে সকাল ৯টা ১৭ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরীক্ষার ৭২টি প্রশ্ন পাওয়া যায়। হাতে লেখা ওই প্রশ্নপত্রের সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হুবহু মিলে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটি ডিজিটাল জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দোষী কয়েকজনকে আটকও করেছে৷ জালিয়াতিতে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।