উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না

রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজস্ব জায়গায় নির্মিত চ্যান্সেরি ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সৌদি আরব, ১৭ অক্টোবর। ছবি: পিআইডি
রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজস্ব জায়গায় নির্মিত চ্যান্সেরি ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সৌদি আরব, ১৭ অক্টোবর। ছবি: পিআইডি

বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছে এবং এই উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বুধবার বিকেলে সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজস্ব জায়গায় এবং নিজস্ব অর্থে নবনির্মিত চ্যান্সেরি ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশকে উন্নয়নের যে কাজটা করার দরকার ছিল, আমরা তা করেছি এবং বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছে এবং এই অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না বলে আমি বিশ্বাস করি এবং এই দায়িত্বটা আপনাদের সকলেরও থাকল।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় সামনে সংসদ নির্বাচন এবং জনগণ ভোট দিলে তিনি আবার সরকারে আসবেন, নচেৎ নাই এবং বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে পারায় সে জন্য তাঁর কোনো আফসোস থাকবে না বলেও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় শতবর্ষী মেয়াদে ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০-এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ এই দেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। আর ২১০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কীভাবে চলবে সেই পরিকল্পনাটাও ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০ এর মাধ্যমে আমরা করে দিয়ে গেলাম, যাতে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে চলতে পারে।’ এ ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী প্রবাসীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য দেশের বিমান বহরে আধুনিক নতুন বিমান সংযুক্ত করার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, এখন নিজস্ব বিমানেই তাঁরা দেশে যাতায়াত করতে পারবেন।

রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজস্ব জায়গায় নির্মিত চ্যান্সেরি ভবন। সৌদি আরব, ১৭ অক্টোবর। ছবি: পিআইডি
রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজস্ব জায়গায় নির্মিত চ্যান্সেরি ভবন। সৌদি আরব, ১৭ অক্টোবর। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতার শুরুতেই জাতির পিতার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘তিনি যে আমাদের স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন তা-ই নয়, বিশ্বে একটি মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য বিভিন্ন দেশে আমাদের নিজেদের জায়গায় নিজস্ব দূতাবাস হবে, সে প্রক্রিয়াটিও শুরু করে যান। প্রধানমন্ত্রী এ সময় বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব দূতাবাস ভবনটি আজকে উদ্বোধনের সময় আমার বারবারই মনে পড়ছিল আজ যদি জাতির পিতা বেঁচে থাকতেন তাহলে বহু আগেই বাংলাদেশ বিশ্বে একটি মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতো।’ তিনি বলেন, ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দূতাবাস স্থাপনে তাঁর সরকার কাজ শুরু করে এবং ওয়াশিংটন ও দিল্লিতে ভবন স্থাপন করলেও অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশে এই কাজ পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত সরকার বন্ধ করে দেয়।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় হজযাত্রীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে হাজিদের সুবিধার্থে তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তাঁর সরকার হজ অফিস মক্কাতে নিয়ে গেছে এবং হজ মৌসুমে হাজিদের সুবিধার্থে মক্কা এবং মদিনায়ও নিজস্ব জায়গায় অফিস তৈরির উদ্যোগ নেবে। এ ব্যাপারে জমি অথবা অফিসের জন্য ফ্লোর কেনার জন্যও সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ সময় তিনি হজকার্যে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য সৌদি বাদশাহ এবং তাঁর সরকারকেও আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমস্যা সমাধানে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই চ্যান্সেরি ভবনটা যখন তৈরি করা হয় তখনই আমার নির্দেশনা ছিল, এখানে যাঁরা সেবা নিতে আসবেন সেদিকে লক্ষ্য রেখে বন্দোবস্ত রাখার।’

দেশের ডিজিটালাইজেশনের সুফল এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের মতো প্রবাসীরাও পাচ্ছেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি ভবন ব্যবহারকারীদের যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাঁর আজ সৌদি বাদশাহর সঙ্গে আলোচনায় ভালো অগ্রগতি হয়েছে। তিনি বাদশাহকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে বাদশাহ তাতে সানন্দে সম্মতি প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কে এস এ গোলাম মসীহ বক্তব্য দেন। প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ভবনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাসহ সেবাপ্রত্যাশীদের জন্য ৫১০ বর্গমিটারের একটি শেডও নির্মাণ করা হয়েছে।