করমজলে দুর্লভ রামঘুঘু

রামঘুঘু। বাগানের বেড়ায় অভিজাত ভঙ্গিতে।  ছবি: লেখক
রামঘুঘু। বাগানের বেড়ায় অভিজাত ভঙ্গিতে। ছবি: লেখক

দুর্লভ ও বিরল পাখির সন্ধানে ভোর থেকে হাঁটছিলাম কালেঙ্গা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে। কিছু পাখির সন্ধান পেলেও কুয়াশার কারণে ভালো ছবি তুলতে পারছিলাম না। ঘণ্টা দেড়েক সময় চলে গেল, কুয়াশা কাটল না।

টিলা থেকে নিচের দিকে নামছিলাম। এ সময় হঠাৎ পাশের নাম না জানা বড় একটি গাছ থেকে লালচে-বাদামি একটি ঘুঘু উড়াল দিল। সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরায় ক্লিক করলাম। ক্যামেরা রিভিউ করে নতুন প্রজাতির পাখি পেয়ে মনটা খুশিতে নেচে উঠল। কিন্তু ভালো করে দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। সেই কুয়াশার বাগড়া। ছবিটি ভালো হয়নি।

গত ২৬ জানুয়ারি রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে সুন্দরবনের পশুর নদ দিয়ে যাওয়ার সময় করমজলের পাশে একটি গাছের মরা ডালে কালেঙ্গায় দেখা একই প্রজাতির একটি ঘুঘু বসে থাকতে দেখলাম। তবে এবার আর মিস হলো না।

লালচে-বাদামি ঘুঘুটি এ দেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি রামঘুঘু। কইতরে ঘুঘু বা গোলাপ ঘুঘু নামেও পরিচিত এরা। ইংরেজি নাম ওরিয়েন্টাল বা রুফাস টার্টল ডাব। বৈজ্ঞানিক নাম streptopelia orientalis।ভারতীয় উপমহাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এদের দেখা মেলে।

রামঘুঘু দৈর্ঘ্যে ৩৩ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার হয়। ওজন ১৬৫ থেকে ২৭৪ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা নীলচে-ধূসর থেকে বাদামি-নীল, তার ওপর লালচে আভা। মুখে গোলাপির আভা। ঘাড়-গলা ফ্যাকাশে হলদে থেকে ধূসর-গোলাপি। ঘাড়ের দুপাশে দুটো সাদা-কালো পট্টির মতো থাকে। ডানা-ঢাকনি ও ডানার পালক-ঢাকনির সব কালচে পালকের প্রান্ত লালচে হওয়ায় পিঠে আঁইশের মতো মনে হয়। লেজের প্রান্ত হালকা ধূসর। বুক-পেট ও দেহতল গাঢ় পীতাভ। লেজতল ফ্যাকাশে। চোখ কমলা। চঞ্চু ফ্যাকাশে নীলচে-গোলাপি। পা ও আঙুল গোলাপি, নখ নীলচে। পায়রা-পায়রী দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা ও দেহতল পীতাভ-ধূসর এবং ডানা-ঢাকনি ও ডানার পালক-ঢাকনি ফ্যাকাশে পীতাভ।

রামঘুঘু নোনাজল বা গরান বন, উন্মুক্ত বন, আবাদি জমি ও বাগানে বিচরণ করে। সচরাচর জোড়ায় বা ছোট দলে থাকে। হেঁটে হেঁটে ঘাসবীজ, খাদ্যশস্য, আগাছা, সদ্য গজানো কচি পাতা ইত্যাদি খায়। ক্রু-ক্রু-ক্রু-ক্রুউ... শব্দে ডাকে।

মে থেকে জুলাই এদের প্রজননকাল। এ সময় পায়রা-পায়রী মিলেমিশে বাঁশবন, চারাগাছ বা ঝোপঝাড়ে কাঠিকুটি দিয়ে ঢিলেঢালা বাসা বানায়। পায়রী দুটি সাদা রঙের ডিম পাড়ে। উভয়েই ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটে ছানা বেরোয় ১৫ থেকে ১৬ দিনে। ছানারা বাবা-মায়ের খাদ্যথলি থেকে ‌ক্ষীরের মতো দেখতে দুধ (পিজিয়ন অর ডাভ মিল্ক) খেয়ে বড় হয়। ছানারা ১৫ থেকে ১৭ দিনে উড়তে শেখে। এরা ৫ থেকে ৬ বছর পর্যন্ত বাঁচে।