ভোটের সময় 'ছোট মন্ত্রিসভা' নাও হতে পারে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। ঢাকা, ২২ অক্টোবর। ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। ঢাকা, ২২ অক্টোবর। ছবি: পিআইডি

একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় মন্ত্রিসভার আকার ছোট না–ও হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এখনকার মন্ত্রিসভায় ‘সব দলের’ প্রতিনিধিই আছেন। নির্বাচনকালীন সরকারের আকার ছোট করা হলে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

আজ সোমবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সৌদি আরব সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এই সংবাদ সম্মেলন করেন। ১৬ অক্টোবর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত সৌদি সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বিকেল চারটায় সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়ে চলে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে।

বেশ কিছুদিন আগে থেকেই আওয়ামী লীগের নেতারা বলে আসছিলেন, ২০১৩ সালের মতো এবারও ভোটের আগে ‘ছোট আকারের নির্বাচনকালীন’ সরকার গঠন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ছোট আকারের মন্ত্রিসভার আভাস দিয়েছিলেন। আজকের সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিসভার আকার ও ধরন নিয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করেন, ছোট না করলে কোনো অসুবিধা আছে? যুক্তরাজ্যের মতো যেসব দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র আছে, কোথাও নির্বাচনের সময় মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনা হয় না।

সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভা কেন পুনর্গঠন করা হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় বিরোধী দলে থাকা বিএনপি নির্বাচনে আসতে রাজি হচ্ছিল না বলে তখন তাদের নির্বাচনকালীন সরকারে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা (দশম সংসদ নির্বাচনে) মেজরিটি পাওয়া স্বত্বেও প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো থেকে মন্ত্রিসভা গঠন করেছি। এই মন্ত্রিসভায় জনগণের প্রতিনিধি যাঁরা, তাঁরা আছেন।’

শেখ হাসিনা ছোট মন্ত্রিসভা না করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের অনেকগুলো উন্নয়নমূলক প্রকল্প চলমান রয়েছে, অনেক কাজ করতে হবে। মন্ত্রিসভা ছোট হলে আমাদের উন্নয়নে সমস্যা হবে কি না, সেটাই ভাবছি। আপনার দেখছেন, প্রতি সপ্তাহে ১৮-১৯টি করে প্রকল্প অনুমোদন হচ্ছে। সব মন্ত্রীই প্রচুর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।’

প্রসঙ্গ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

নতুন গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ‘ছাল-বাকল দিয়ে তৈরি’ জোট বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এই জোটকে তিনি স্বাগত জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশে রাজনৈতিক স্বাধীনতা আছে। এখানে বিচার বিভাগ স্বাধীন, গণমাধ্যম স্বাধীন। যে কেউ ইচ্ছে করলে রাজনীতি করতে পারে। আমি নতুন জোটকে স্বাগত জানাই।’

আজ সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য চাওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি একে স্বাগত জানাই। তবে একটু লক্ষ রাখা দরকার, কারা কারা এক হলো। কোন চরিত্রের লোক তারা। এমনকি মেয়েদের প্রতি কার কী মন্তব্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ এটা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তায় নেই। শেখ হাসিনা বলেন, এখানে স্বাধীনতাবিরোধী আছে, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী আছে। সব মিলিয়েই কিন্তু এটা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগে ছিল। তারা এখন আওয়ামী লীগের বিরোধী হয়েছে।

নবগঠিত জোটের সাত দফা দাবি নিয়ে প্রশ্ন করলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাত দফা আর কত দূর যায়, তার জন্য অপেক্ষা করে আছি। তারপর আমি আমার বক্তব্য দেব।’
সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য কামাল হোসেনরে প্রস্তাব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিঠি তো এখনো পাইনি। চিঠি না পাওয়া পর্যন্ত তো কোনো মনোভাব তৈরি হয়নি। এর জবাব কী দেবে?’

প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্টের সমালোচনাও করেন। তিনি বলেন, ‘কামাল হোসেন কাদের সঙ্গে এক জোট হয়েছেন, ১০ ট্রাক মামলার সাজাপ্রাপ্ত যারা আসামি, মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি। মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য এসেছে এফবিআই থেকে এসেছে। এতিমের অর্থ আত্মসাতের জন্য যিনি সাজাপ্রাপ্ত। এই অর্থ আত্মসাতের মামলা যিনি দিয়েছিলেন তখন তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি এখন এই জোটে যুক্ত হয়েছেন। যুদ্ধাপরাধী, যারা সাজাপ্রাপ্ত, তারা এর মধ্যে আছে। রাজাকার, আলবদর বাহিনী তৈরি করে যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তারা এর সঙ্গে আছে। দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, জঙ্গিবাদ–সন্ত্রাস যারা সৃষ্টি করেছে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে জীবন্ত মানুষকে যারা হত্যা করেছে, সেই মানুষ হত্যাকারী, তিনি তাদের পক্ষ হয়েছেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জঙ্গিবাদ, মানি লন্ডারিং, মানুষ হত্যাকারী—এরা সবাই এক হয়েছে। আমি তো দেখতে পাচ্ছি কয়েকটা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এক হয়েছে।’

তাঁকে দেওয়া সম্ভাব্য চিঠি প্রসঙ্গে আবারও প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিঠি দিলে দেখা যাবে।

নির্বাচন প্রসঙ্গ
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় রয়েছে—গত শনিবার জনসভায় দেওয়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন নিয়ে সংশয় যারা সৃষ্টি করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্য কী। আমরা চাই বাংলাদেশে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়, এবং নির্বাচন হবে। ষড়যন্ত্র বাংলাদেশে চিরাচরিত বিষয়। এর মধ্যে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। যেকোনো ষড়যন্ত্র আমরা রুখব।’

শেখ হাসিনা বলেন, গত নির্বাচন বানচালের জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা একটা বিদেশি বন্ধুকে নিয়েও চেষ্টা করেছিল। সেই চেষ্টা সফল হয়নি। গণতান্ত্রিক ধারা ও উন্নয়ন অনেকের কাছে ভালো লাগে না। তাদের কিছুই ভালো লাগে না।

সড়ক দুর্ঘটনা প্রসঙ্গ

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে জনসাধারণের সচেতনতার ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘যারা অ্যাক্সিডেন্টের শিকার হলো, তারা রাস্তার কোথায় ছিল তখন? এত দুর্ঘটনার পর পথচারীরা সচেতন হয়েছে? আমাদের তো স্বভাব পরিবর্তন হচ্ছে না, যারা রাস্তা পারাপার হচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ করব সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো খুঁজে বের করুন। ঢাকায় দুই স্কুলছাত্র নিহতের ঘটনায় বাসচালকের দোষ ছিল, সেটা স্বীকার করি। বাস তাদের ওপর উঠে যায়। কিন্তু অন্য যেসব দুর্ঘটনা হচ্ছে, তারা ফুটপাতে ছিল কি না, রাস্তায় ছিল কি না, এগুলো দেখতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সড়ক আইন পাস করেছি। সবকিছু করেছি। চাইলেই তো হঠাৎ করে যানবাহন বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। যান্ত্রিক ব্যাপার, থামাতে গেলেও তো সময় লাগে। যাঁরা রাস্তা পার হচ্ছেন, তাড়াহুড়ো না করে আমাদের উচিত হাতে একটু সময় নিয়ে বের হওয়া। আপনারা এ বিষয়টি তুলে ধরেন।’

সংবাদ সম্মেলনের প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর লিখিত বক্তব্যে সৌদি আরব সফরের বর্ণনা দেন। তিনি সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গে তাঁর একাধিক বৈঠকে আলোচিত বিষয় নিয়ে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সাক্ষাতের সময় বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ সৌদি আরবকে আমার দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে উল্লেখ করেন। এ সময় সৌদি বাদশাহ বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেন। আর উন্নয়নের ধারাবাহিকতার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।’