তানজিলার কাল হলেন জিয়াউল

সন্দেহভাজন খুনি জিয়াউল। ছবি: আসাদুজ্জামান
সন্দেহভাজন খুনি জিয়াউল। ছবি: আসাদুজ্জামান

দোহারের ১২ বছরের শিশু তানজিলা আক্তারকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে। আদালতে এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন জিয়াউল (৩৫)। গতকাল সোমবার ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে দোষ স্বীকারের পর তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। 

রোববার তানজিলার লাশ উদ্ধার করে দোহার থানা-পুলিশ। এ ঘটনায় তাঁর পালক বাবা রিপন শরিফ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করলে জিয়াউলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তানজিলার বাবা, পুলিশ ও আদালত সূত্রের তথ্যমতে, তানজিলার পালক বাবা রিপনের সবজিখেত রয়েছে। পালক মা লিমা আক্তার বেলা ৯টার দিকে তানজিলাকে বলেছিলেন, সবজিখেত থেকে সবজি তুলে আনতে। সবজি কাটার চাকু আর বাজার করার ব্যাগ নিয়ে একা সবজি খেতে যায় তানজিলা। সবজি খেতের আশপাশে ধনচে খেত। ১৫–২০ মিনিটের মধ্যে তানজিলা খেত থেকে একটা মিষ্টি কুমড়াসহ আরও কিছু সবজি তোলে। এরপর ব্যাগ নিয়ে যখন তানজিলা খেতের আল ধরে বাড়ি ফিরছিল তখন জিয়াউলের সঙ্গে দেখা হয়। জিয়াউল তখন জানতে চেয়েছিল, তানজিলার ব্যাগের ভেতর কী আছে?
দেখাতে না চাইলে জিয়াউল জোর করে তানজিলার কাছে থাকা ব্যাগ কেড়ে নেয়। একপর্যায়ে পাশের ধনচে খেতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। তানজিলা ধর্ষণের কথা বাবাকে বলে দিতে চাইলে জিয়াউল তাকে হত্যা করে খেতে ফেলে রেখে চলে যায়।
দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তানজিলাকে যেখানে খুন করা হয়েছে, সেই খেতের আশপাশে কোনো জনবসতি নেই। বলতে গেলে একেবারই ফাঁকা জায়গা।
তানজিলার বাবা রিপনের ভাষ্য, সকাল ৯টার দিকে সবজি তুলতে গিয়ে বেলা ১০টার সময়ও তানজিলা বাসায় ফিরে না এলে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। একপর্যায়ে সবজি খেতের ভেতর তানজিলার লাশ প্রথমে দেখতে পান তার মামি কোহিনূর আক্তার। লাশ পাওয়ার খবর তখন তিনি দোহার থানা-পুলিশকে জানান।
তদন্ত কর্মকর্তা দোহার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এলাকার কয়েকজন জানান, ধনচে খেতের আশপাশে জিয়াউলকে ঘুরতে দেখা গেছে। তখন ফোর্স নিয়ে জিয়াউলের বাসায় যান।
এসআই নুরুল বলেন, শুরুতে ধনচে খেতে যাওয়ার কথা অস্বীকার করতে থাকেন জিয়াউল। তখন জিয়াউলের পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসা করেন। জিয়াউলের ভাগনে তাঁকে জানান, জিয়াউলকে বাসায় আসার পর গোসল করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদ করার একপর্যায়ে জিয়াউল তখন স্বীকার করেন, তিনি তানজিলাকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছেন। জিয়াউলের রক্তমাখা লুঙ্গি জব্দ করা হয়েছে।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জিয়াউল বলেন, ‘তানজিলা আমাকে বলে যে এ ধর্ষণ করার কথা তার মামাকে (তানজিলার পালক বাবা) সে বলে দেবে। তখন আমি তার কাছে থাকা চাকু দিয়ে গলা কেটে হত্যা করি।’
কয়েক বছর আগে তানজিলার নিজের বাবা নূর সালাম খুন হন। এরপর তানজিলাকে পালক নেন মামলার বাদী রিপন শরীফ। তানজিলারা চার বোন। তানজিলার মা ইতি আক্তার অন্যের বাসায় কাজ করে সংসার চালান।
তদন্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, যে ছুরি দিয়ে তানজিলাকে খুন করা হয়েছে, তা এখনো উদ্ধার করা যায়নি। সন্দেহভাজন খুনি জিয়াউল ১৪ বছর সৌদি আরব ছিলেন। গত বছর দেশে ফিরে আসেন। তাঁর তিন মেয়ে।
দোহার থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তানজিলাকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।